শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-04-15 11:47:54   72  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ TContent
☰Fullscreen

Table of Content:

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধের বাংলা নাট্যসাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।
শৈশব ও শিক্ষাজীবন: বাংলা নাট্যসাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে (১২৯৯ বঙ্গাব্দের ৪ শ্রাবণ) খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সত্যচরণ সেনগুপ্তের কর্মস্থল রংপুরে তিনি শিক্ষালাভ করেন। সেখানে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ছিলেন তাঁর সহপাঠী। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দিয়ে শচীন্দ্রনাথ বিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। কলকাতার জাতীয় বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ পরিচালিত কলেজে বিএ পর্যন্ত পড়েন। পরে তিনি কটক মেডিকেল স্কুলে চিকিৎসাবিদ্যা ও ময়মনসিংহে কবিরাজি শেখেন।
কর্মজীবন: কর্মজীবনের শুরুতে শচীন্দ্রনাথ কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণ করেন। তাঁর সাংবাদিকজীবনের শুরু দৈনিক কৃষক ও ভারত পত্রিকার সহ- সম্পাদকরূপে। এ ছাড়া তিনি সাপ্তাহিক হিতবাদী, বিজলী (বারীন্দ্রকুমার ঘোষ প্রতিষ্ঠিত), আত্মশক্তি প্রভৃতি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের নেতা হিসেবে শচীন্দ্রনাথ রাশিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চিন, সিংহল প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।
সাহিত্যজীবন: শচীন্দ্রনাথ তাঁর নাটক রচনার মধ্য দিয়ে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন। তাঁর রচিত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকের মূল বিষয়বস্তু হল দেশাত্মবোধ। সামাজিক নাটক রচনাতেও তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বাণী তাঁর নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকগুলি হল-গৈরিক পতাকা (১৯৩০), দেশের দাবি (১৯৩৪), রাষ্ট্রবিপ্লব (১৯৪৪), সিরাজদ্দৌলা (১৯৩৮), ধাত্রীপান্না (১৯৪৮), সবার উপরে মানুষ সত্য (১৯৫৭), আর্তনাদ ও জয়নাদ (১৯৬১)। তাঁর ঐতিহাসিক নাটক সিরাজদ্দৌলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রঙ্গমঞ্চে অভিনীত রাষ্ট্রবিপ্লব নাটকটিও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। গণনাট্যের আদর্শে বিশ্বাসী এই নাট্যকার তাঁর নাটকের মাধ্যমে পাঠক, দর্শকের মনকে জাগাতে চেয়েছিলেন। বৃহত্তর সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবেই তিনি নাট্য-আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। নাটককে হাতিয়ার করে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছেন তিনি। ফলে তাঁর সামাজিক নাটকগুলিতে উঠে এসেছে- কুমারীজীবনে মাতৃত্বের সমস্যা, দাম্পত্য জীবনে নারী-পুরুষের নিজস্ব ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, নারী স্বাধীনতার সুস্পষ্ট রূপ। এ ছাড়াও সমাজজীবনের নানান ভাঙন, ভণ্ড দেশপ্রেম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সার্বিক অবক্ষয় ইত্যাদি দিকগুলিও তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে। শচীন্দ্রনাথের সামাজিক নাটকগুলি তৎকালীন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে। রক্তকমল (১৯২৯), ঝড়ের রাতে (১৯৩১), নার্সিংহোম (১৯৩৩), স্বামী-স্ত্রী (১৯৩৭), তটিনীর বিচার (১৯৩৯), মাটির মায়া, কাঁটা ও কমল, প্রলয়, জননী প্রভৃতি তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য সামাজিক নাটক। এসব নাটকেই ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যা বর্ণনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর কিশোরদের জন্য লেখা নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি ও অনুবাদগ্রন্থ আছে।
জীবনাবসান: ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের জীবনাবসান হয়।