দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
Table of Content:
বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার এবং ঐতিহাসিক নাটকের শ্রেষ্ঠ রচয়িতা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আজও রঙ্গমঞ্চের এক উজ্জ্বল পুরুষরূপে অনন্য মর্যাদার সম্মানিত ব্যক্তি। ১৮৬৩ খ্রি. নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ,মাতা প্রসন্নময়ী দেবী। তিনি ‘ভারতবর্ষ’ নামক একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। বিদেশে অধ্যয়নকালে তিনি পাশ্চাত্য নাট্য ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর নাটক পাঠ করে কিংবা নাটকের অভিনয় দেখে আজও বাঙালির মুগ্ধতার সীমা নেই । তাঁর সৃষ্ট নাটক সাহিত্যরূপে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে মঞ্চায়নের ক্ষেত্রেও তাদের উৎকর্ষ সমধিক। বিশেষ করে পাশ্চাত্য আঙ্গিক নাট্য সাহিত্যে প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান প্রধানত ঐতিহাসিক নাট্যকার রূপে । তাছাড়া উনিশ শতকের বাংলাদেশে নবচেতনার বিকাশে তাঁর নাটকগুলির ভূমিকা ছিল অসামান্য।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক গুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-
(ক) ঐতিহাসিক নাটক :-
‘তারাবাঈ’ (১৯০৩), ‘প্রতাপসিংহ’ (১৯০৫), দুর্গাদাস’ (১৯০৬), ‘নুরজাহান’ (১৯০৮), ‘মেবার পতন’ (১৯০৮), ‘সোরাব রুস্তম’ (১৯০৮), ‘সাজাহান’ (১৯০৯), ‘চন্দ্রগুপ্ত’ (১৯১১), ‘সিংহল বিজয়’ (১৯১৫) প্রভৃতি।
(খ) সামাজিক নাটক :-
‘পরপারে’ (১৯১২), ‘বঙ্গনারী’ (১৯১৬) প্রভৃতি।
(গ) পৌরাণিক নাটক:-
‘পাষাণী’ (১৯০০), ‘সীতা’ (১৯০৮), ভীষ্ম’ (১৯১৪) প্রভৃতি।
(ঘ) প্রহসন :-
‘একঘরে’ (১৮৮৯), ‘কল্কি অবতার’ (১৮৯৫), ‘বিরহ'(১৮৯৭), ‘ত্র্যহস্পর্শ’ বা ‘সুখী পরিবার’ (১৯০০), ‘প্রায়শ্চিত্ত’ (১৯০২), ‘পুনর্জন্ম’ (১৯১১), ‘আনন্দ বিদায়’ (১৯১২) প্রভৃতি।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কয়েকটি নাটক বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :
১. কল্কি অবতার (১৮৯৫)
প্রথম প্রহসন
প্রধান চরিত্র – কল্কিদেব, বিমলেন্দু, বাচস্পতি
২. বিরহ (১৮৯৭)
প্রহসন
প্রধান চরিত্র – গোবিন্দচরণ, পীতাম্বর, চপলা
উৎসর্গ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩. ‘ত্র্যহস্পর্শ’(১৯০০)
প্রহসন
প্রধান চরিত্র – বিজয়গোপাল, ডাঃ ভূদেব
৪। প্রতাপসিংহ (১৯০৫)
অঙ্ক সংখ্যা – ৫টি
প্রধান চরিত্র – প্রতাপ, শক্তি সিংহ, আকবর
উৎসর্গ – দীনবন্ধু মিত্রকে
৫। নুরজাহান (১৯০৮)
ঐতিহাসিক নাটক
প্রধান চরিত্র – নূরজাহান, সেলিম, শের খাঁ।
৬। মেবার পতন (১৯০৮)
ঐতিহাসিক নাটক
অঙ্ক সংখ্যা – ৫টি
প্রধান চরিত্র – অমরসিংহ, কল্যাণী, মানসী
নাটকের বিখ্যাত গান – ”উঠেছে ওই নূতন বাতাস… কিসের শোক করিস ভাই—আবার তোরা মানুষ হ ।”
৭। সোরাব-রুস্তম (১৯০৮) –
অপেরা ধর্মী নাটক
ফেরদৌসি রচিত ‘শাহনামা’ কাহিনি অবলম্বনে রচিত ।
প্রধান চরিত্র – সোরাব, রুস্তম, তামিনা, কায়ুশ
৮। সাজাহান (১৯০৯)
ঐতিহাসিক নাটক
অঙ্ক সংখ্যা – ৫টি
প্রধান চরিত্র – সাজাহান, দিলদার, জাহানারা
এই নাটকে ব্যবহৃত পরিচিত গান –
১।’সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল'(দ্বিতীয় অঙ্ক – চতুর্থ দৃশ্য),.
২।’ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ (তৃতীয় অঙ্ক -ষষ্ঠ দৃশ্য),
৩।’সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম’ (চতুর্থ অঙ্ক – প্রথম দৃশ্য),
উৎসর্গ – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে।
৯। চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১)
ঐতিহাসিক নাটক
অঙ্ক সংখ্যা – ৫টি
প্রধান চরিত্র – চন্দ্রগুপ্ত, চাণক্য, হেলেন, সেলুকাস
নাটকের বিখ্যাত গান –
১। আর কেন মিছে আশা…,
২। ঘন তমসাবৃত অন্তর ধরণী,
৩। আজি গাও মহাগীত মহা আনন্দে,
৪। ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে”।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাট্য বৈশিষ্ট্য :
দ্বিজেন্দ্রলালকে প্রকৃত অর্থে বাংলা নাটকের নবযুগগের প্রবর্তক বলা যায়। প্রকৃতই নাটকে আধুনিকতার প্রথম স্রষ্টা । তিনি জাতির স্বদেশ প্রেমের হৃদস্পন্দন বুঝেছেন এবং তা যথাযথ প্রকাশ করেছেন নাটকে। তাঁর নাটকের তীব্র দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সংকুল কাহিনি ও বিন্যাস পাঠক ও দর্শকদের চিত্তকে টানটান উত্তেজিত করে রাখে। তাঁর চরিত্র গুলি গভীর ভাবময় ও অন্তর্দ্বন্দ্বে তীব্র জর্জরিত- মানব চরিত্রের গভীরতার বহিঃপ্রকাশ তার নাটকে আছে সার্থকভাবে।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকে সংগীতের প্রয়োগ একটা ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। বাংলা নাটকে নাটকীয় একোক্তিকে তিনিই প্রথম এত সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। তাঁর নাটকের ভাষা অপরূপ সমৃদ্ধ, তা তীক্ষ্ণ আবেগ ও ভাব উচ্ছাসিত যা মুহূর্তের মধ্যেই পাঠক ও দর্শকদের চিত্তকে মনমুগ্ধ করে তোলে।
Important SAQ question :
1) নাট্যকারের প্রথম সামাজিক নাটক কোনটি ?
উঃ পরপারে (১৯১২)
2) “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা…..” গানটি কোন নাটকের কত অঙ্কে আছে ?
উঃ ‘সাজাহান’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কে ষষ্ঠ দৃশ্যে ।
3) দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর কোন নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করেন ?
উঃ বিরহ (প্রহসন) ।
4) ‘নুরজাহান’ নাটকের প্রকাশকাল কত ?
উঃ ১৯০৮খ্রি.।
5) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের একটা অপেরাধর্মী নাটকের নাম লেখ ?
উঃ ‘সোবার রুস্তম’ (১৯০৮) ।
6) ‘সাজাহান’ নাটকটি নাট্যকার কাকে উৎসর্গ করেন ?
উঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে।
7) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শেষ নাটক কোনটি ?
উঃ ‘সিংহল বিজয়’ (১৯১৫)।
8) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দুটি প্রহসনের নাম লেখো।
উঃ ‘ত্র্যহস্পর্শ’ ও ‘বিরহ’ ।
9) “আনন্দবিদায়” নাটকটি কার রচনা ? এর প্রকাশকাল কত ?
উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা । ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ।
10) “সই কেবা শুনাইল শ্যাম নাম …” কোন নাটকে এই গান ব্যবহার করেছে নাট্যকার ?
উঃ ‘সাজাহান’।
11) দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর কোন নাটকটি দীনবন্ধু মিত্রকে উৎসর্গ করেন ?
উঃ ‘প্রতাপসিংহ’ ।
12) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কোন প্রহসন রবীন্দ্রনাথকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লেখা ?
উঃ “আনন্দবিদায়”।