রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-04-15 11:31:09   112 Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details 60 Questions 5 MCQ
☰ Table of Contents

Table of Content:


জন্ম:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) : জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। অল্পবয়স থেকেই ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। কথা ও কাহিনী, সহজপাঠ, রাজর্ষি, ছেলেবেলা, শিশু,শিশু ভোলানাথ, হাস্যকৌতুক, ডাকঘর, গল্পগুচ্ছ -সহ তাঁর বহু রচনাই শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করে। দীর্ঘ জীবনে অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে 'Song Offerings'- এর জন্যে। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত আর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁর রচনা। পাঠ্যাংশটি তাঁর শিশু নামক বই থেকে নেওয়া হয়েছে ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) : বাংলাভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকার এবং সুরকার। তাঁর রচিত গানগুলি ‘গীতিবতান’ নামের বইতে কয়েক খণ্ডে বিধৃত রয়েছে। আর গানগুলির স্বরলিপি বিভিন্ন খণ্ডে রয়েছে ‘স্বরবিতান’ নামের বইয়ে।

বিদ্যাচর্চা

রবীন্দ্রনাথের বাল্যশিক্ষা শুরু হয়েছিল বিদ্যালয়ের গণ্ডিবদ্ধ জীবনে। যদিও শিক্ষকদের নীতি-নৈতিকতা আর পুথিসর্বস্ব শিক্ষা রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হয়নি। 'ওরিয়েন্টাল সেমিনারী', 'নর্মাল স্কুল', 'সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল', 'বেঙ্গল একাডেমি' প্রভৃতি স্কুলে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল।

কিন্তু কোথাও তাঁর মন বসেনি। ফলে বাড়িতে গৃহশিক্ষকদের কাছেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। আর এ বিষয়ে তাঁকে সব থেকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল মায়ের স্নেহ-পরশ। পরবর্তীকালে অবশ্য পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশ অনুসারে তিনি সতেরো বছর বয়সে বিলাত গমন করেন। পড়াশোনা করেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যদিও গতানুগতিক কোনো পড়াশোনা রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হয়নি। লন্ডনে থাকার সময় মেজদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তিনি সেকথা জানিয়েছিলেন। বলাবাহুল্য, রবীন্দ্রনাথের পরিবার কখনোই চাননি তিনি জোর করে পড়াশোনা করুন। ফলে প্রথাগত পড়াশোনা করবার কোনো প্রয়োজন ঠাকুরবাড়ির বাংল সন্তানদের হয়নি। তাঁরা পড়াশোনা করেছেন মনের আনন্দে।

কর্মজীবন

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবতারিণীদেবীর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। বিবাহের পরে ভবতারিণীর নাম হয় মৃণালিনী। ১৮৮৪, পিতার নির্দেশে তিনি পতিসর, সাজাদপুর, শিলাইদহের জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৮৪, সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে আদি ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে 'ব্রষ্মচর্য বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে প্রথম নিজস্ব উপলব্ধির প্রকাশ ঘটে।

১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন, যদিও তৎকালীন নেতৃত্বদের সঙ্গে তাঁর চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের মিল না-হওয়ায় তিনি সেই আন্দোলন থেকে সরে আসেন। রবীন্দ্রনাথ যখন পঞ্চাশ উত্তীর্ণ তখন পুনরায় বিদেশ যাত্রা করেন। প্রথমে লন্ডন, তারপরে আমেরিকা। ১৯১২-এর শেষ দিকে লন্ডনে 'গীতাঞ্জলি'র অনুবাদ হয় 'Song Offer- ings' নামে। ১৯১৩, তিনি এই কাব্যগ্রন্থের জন্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

যে রবীন্দ্রনাথ ভৃত্যশাসনে মানুষ হয়েছিলেন তিনি সেই বন্ধন থেকে যেন মুক্তি পেয়েছিলেন। ১৯১৬-৩৪ পর্যন্ত তিনি ক্রমাগত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পরিভ্রমণ করেছেন। ক্রমবর্ধিত হয়েছে তাঁর জ্ঞানের পরিধি। জাপান, জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি, চিন, আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, হল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, গ্রিস, মিশর, সিঙ্গাপুর, মালয়, পারস্য, সিংহল প্রভৃতি দেশে তিনি গিয়েছেন।

সাহিত্যসাধনা

বাংলা ছোটোগল্পের উৎস, বিকাশ, বিবর্তন ও পরিবর্তনের অনেক কিছুই রবীন্দ্রনাথের হাতে তৈরি। রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পের সংখ্যা ১১৮। ১৮৮৪ থেকে ১৯৪১-এই সাতান্ন বছর ধরে রবীন্দ্রনাথ ক্রমাগত লিখেছেন। "সোনারতরী" কাব্যগ্রন্থের 'বর্ষযাপন' কবিতায় তিনি ছোটোগল্পের শরীর নির্মাণ প্রসঙ্গে লিখেছেন-

ছোটো প্রাণ ছোটো ব্যথা ছোটো ছোটো দুঃখ কথা

নিতান্তই সহজ সরল;

সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি

তারি দু'চারিটি অশ্রুজল।

'হিতবাদী', 'সাধনা', 'ভারতী', 'সবুজপত্র'-এই চারটি পত্রিকায় মূলত রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ গল্প বেরিয়েছে। 'হিতবাদী'তে লিখেছেন ৬টি, 'সাধনা'য় লিখেছেন ৩৬টি, 'ভারতী'তে লিখেছেন ১৪টি, 'সবুজপত্র'-য় লিখেছেন ১০টি গল্প। অর্থাৎ সর্বাধিক গল্প লিখেছেন 'সাধনা' পত্রিকায়।

'হিতবাদী'তে দেনাপাওনা ও পোস্টমাস্টারের মতো গল্প প্রকাশিত হয়েছে। 'সাধনা'য় প্রকাশিত হয়েছে কাবুলিওয়ালা, ছুটি, সুভা, মহামায়া, শাস্তি, সমাপ্তি, মেঘ ও রৌদ্র, নিশীথে, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথির মতো গল্প। 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে দুরাশা, দৃষ্টিদান, ডিটেকটিভ, নষ্টনীড়-এর মতো কালজয়ী গল্প। 'সবুজপত্র' পর্বে তিনি লিখেছেন হালদারগোষ্ঠী, হৈমন্তী, বোষ্টমী, স্ত্রীর পত্র, পয়লা নম্বর ইত্যাদি সর্বকালের সেরা গল্প।

দেহাবসান

১৯৪১, আগস্ট ৭ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ, শ্রাবণ ২২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেহাবসান হয়। ১৮৬১ থেকে ১৯৪১- এই দীর্ঘ আশি বছরের জীব্রকালকে রবীন্দ্রনাথ সমান দুটি পর্বে বিন্যস্ত করে তাঁর সাহিত্যজীবন উনিশ ও বিশ শতককে উৎসর্গ করেছেন।

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর' কবিতাটি প্রথমে ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর' শিরোনামে ১৩১০ বঙ্গাব্দে মোহিতচন্দ্ৰ সেন সম্পাদিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শিশু” কাব্যগ্রন্থে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে কবি স্বয়ং ছোটোদের জন্য ‘ছুটির পড়া' শীর্ষক একটি সংকলন গ্রন্থে 'বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর' নামে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করেন। এই সংকলন গ্রন্থটি ১৩১৬ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ‘শিশু’কাব্যগ্রন্থে গৃহীত কবিতাটির সঙ্গে ‘ছুটির পড়া'য় অন্তর্ভুক্ত কবিতাটির কিছু উল্লেখযোগ্য পাঠভেদ রয়েছে। ‘ছুটির পড়া' সংকলনটি প্রকাশ করার সময় কবি নিজেই কবিতাটির এই সমস্ত পরিমার্জন ঘটিয়েছিলেন। তাই, পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রকৃত ‘ছুটির পড়া'র পাঠটিকেই গ্রহণ করা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, নাট্যকার, সুরকার, চিত্রকর, কবি, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং দেশপ্রেমিক।।
  • ভারতের প্রথম ICS সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই।
  • তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় অমৃতবাজার পত্রিকায়।
  • ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সুরটি মূলত রাগ আলহাইয়া বিলাওয়ালে বাঁধা হয়েছিল।
  • আমাদের জাতীয় সঙ্গীত জনগণ মন তাঁরই রচিত। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও তাঁরই রচিত।
  • ১৯০১-এর ২২শে ডিসেম্বর বোলপুরের কাছে - শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে, তিনি শান্তিনিকেতনে শেখার একটি বিকল্প পদ্ধতি স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি পশ্চিমা সভ্যতার সেরা ঐতিহ্য এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ের চেষ্টা করেছিলেন।
  • ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ১৬ই অক্টোবর "রাখীবন্ধন" উৎসবের সূচনা করেন।
  • ১৯১৫-য় তাঁকে নাইটহুড দেয় ব্রিটিশ সরকার, তা পরে ফিরিয়ে দেন জালিয়ানওয়ালাবাগ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু নৃশংস জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি তার উপাধি ত্যাগ করেন।
  • ১৯২১-এ প্রতিষ্ঠা করেন "বিশ্বভারতী"-র।

জাতীয় সঙ্গীত:

  • জাতীয় সঙ্গীত:
    • ভারতের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা রচিত হয়েছিল, যা ভারতের ঐক্যের আরেকটি অভিব্যক্তি। তার রচনাকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিয়েছে দুটি দেশ—ভারতে “জনগণমন”, বাংলাদেশে “আমার সোনার বাংলা”।
    • 'জন গণ মন'- এর প্রথম সংস্করণটি 1911 সালে কলকাতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে গাওয়া হয়েছিল। জনগণমন" প্রথম গাওয়া হয় ১৯১১-র ২৭ জুন কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে। ১৯১২-র আদি ব্রাহ্মসমাজের বার্ষিক সমারোহের গানটি গাওয়া হয়। বাংলা এই গানটির রচনার বছর হল ১৯১১। তবে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার পাঠকদের বাইরে গানটি সেভাবে পরিচিত ছিল না। ঐ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বেও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
    • ১৯৫০-এর ২৪শে জানুয়ারিগণপরিষদ (Constituent Assembly) জন গণ মন গানটিকে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
    • ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সরকারী সংস্করণ আইন অনুসারে 52 সেকেন্ড সময় নিতে হবে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা:

১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ সে বৈশাখ (ইং ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার মাতা সারদা দেবী। এই শিশু রবীন্দ্রনাথই পরবর্তীকালে হয়েছিলেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার প্রতিভার আলোকে তৎকালীন পরাধীন ভারতবর্ষে গৌরবের আসনে বসেছিল।

বাল্যকাল ও শিক্ষা:

ঠাকুর পরিবারের উন্নত পরিবেশেই হয় তার বিদ্যাচর্চা। পিতার তত্ত্বাবধানে কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় রবীন্দ্রনাথের শৈশব অতিবাহিত হয়। বিদ্যালয়ের গতানুগতিক যান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা রবীন্দ্রনাথের বালক চিত্ত কে আকৃষ্ট করতে পারেনি। এই সময় তার ঋষিতুল্য পিতার নিকট নানা বিষয়ে শিক্ষা লাভ করলেন। এছাড়া মহর্ষি দেবের নির্দেশে উপযুক্ত গৃহ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তার শিক্ষা পর্ব চলতে থাকে।

প্রতিভা:

বাল্যকালেই রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দেখা গিয়েছিল সাহিত্য রচনা প্রবণতা। মাত্র এগারো বছর বয়সে লিখলেন অভিলাষ নামে একটি কবিতা। তারপর একে একে লিখলেন বনফুল, ভগ্ন হৃদয়, কবি কাহিনী প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ মাত্র , সতেরো বছর বয়সে পাড়ি দেন বিলেতে। এরপর দেশে ফিরে এসে তিনি সাহিত্য সাধনায় মনোননিবেশ করলেন। কবিতা, গান, গল্প ,উপন্যাস, প্রবন্ধ ,নাটক প্রভৃতি রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে প্লাবন এনেছিলেন। তার রচিত জন – গন- মন সংগীতটি এখন জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়াও তিনি গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য১৯১৩ সালে সাহিত্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি হলেন বিশ্ব বন্দিত মহান কবি।

অবদান:

শুধু সাহিত্য নয় চিত্রশিল্প, অভিনয়, নিত্য শিল্প, ও গান রচনায় তিনি অনবদ্য। রাজনীতি, সমাজনীতি, ও অর্থনীতিতেও তিনি ছিলেন অনন্য। পরাধীন ভারতবর্ষে তার লেখা গান ও কবিতা আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। দেশপ্রেমের কারণেই তিনি ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন।

উপসংহার:

সারা বিশ্বের রবীন্দ্রনাথের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে এই কর্মময় পুরুষের জীবনেবসান হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট। বিশ্ববন্দিত এই কর্মময় পুরুষ যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন তার সৃষ্টি ও কৃতির মধ্যে দিয়ে।

ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, অভিনেতা, গীতিকার, চিত্রশিল্পী ও প্রাবন্ধিক। তাঁর সৃষ্টি শুধু ভারতীয় সাহিত্যকেই নয়, বিশ্বসাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছে।
জন্ম: ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা দেবী। ঠাকুর পরিবারের শিল্প, সাহিত্য ও সংগীতচর্চার আবহাওয়ার মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ বড়ো হয়ে উঠেছিলেন।
ছাত্রজীবন: 'ওরিয়েন্টাল সেমিনারি'-তে রবীন্দ্রনাথের ছাত্রজীবন শুরু হয়। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতিতে বালক রবীন্দ্রনাথের মন বসত না। সেজন্য বারবার বিদ্যালয় পরিবর্তন করেও বিদ্যালয়ের পড়া তিনি শেষ করে উঠতে পারেননি। বাড়িতে যোগ্য গৃহশিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন: ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর আঠারো বছর বয়সে তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে যশোরের মেয়ে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে পিতার নির্দেশে জমিদারি দেখাশোনার জন্য পদ্মার তীরে সাজাদপুর, শিলাইদহে তিনি কিছুকাল বসবাস করেন। সেকারণে রবীন্দ্রনাথের এই পর্বের সাহিত্যসৃষ্টিতে এ অঞ্চলের গভীর প্রভাব রয়েছে।
কর্মজীবন: সাহিত্যকর্ম ছাড়াও তিনি নানারকম কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার আদর্শে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে 'ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয় 'বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়'- এ। রবীন্দ্রনাথ শুধু সাহিত্য বা শিল্পের চর্চাই করেননি, প্রয়োজনে দেশ ও জাতির স্বার্থে, মানবতাবিরোধী যে-কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদও করেছেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি ইংরেজ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন।
সাহিত্যজীবন: অল্প বয়সেই রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতে শুরু করেন। ছেলেবেলায় তাঁকে এ বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। 'হিন্দুমেলার উপহার' কবিতাটি প্রথম রবীন্দ্রনাথের প্রকাশিত কবিতা, যা ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে অমৃতবাজার পত্রিকায় বের হয়। প্রথমদিকের কাব্যগ্রন্থ কবিকাহিনী, এরপর প্রভাতসংগীত ও সন্ধ্যাসংগীত। তাঁর লেখা প্রধান কাব্যগ্রন্থগুলি হল মানসী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতালি, বলাকা, মহুয়া, পুনশ্চ, নবজাতক, জন্মদিনে, শেষ লেখাইত্যাদি। তাঁর লেখা উপন্যাস বাংলা উপন্যাসের দিকবদল ঘটায়। চোখের বালি, গোরা, চতুরঙ্গ, যোগাযোগ তাঁর লেখা কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলা ছোটোগল্প রচনার পথিকৃৎও তিনি। তাঁর লেখা কয়েকটি বিখ্যাত ছোটোগল্প হল 'পোস্টমাস্টার', 'নষ্টনীড়', 'দেনাপাওনা', 'অতিথি', 'ছুটি', 'নিশীথে' ইত্যাদি। চিন্তাশীল প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রেও রবীন্দ্রনাথ অনন্য। চরিত্রপূজা, সাহিত্য, সাহিত্যের পথে, স্বদেশ, সমাজ, কালান্তর তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।
পুরস্কার: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে।
জীবনাবসান: ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।