শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-04-15 11:53:21   77  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details 16 Questions
☰ TContent
☰Fullscreen

Table of Content:

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • তিনি একজন সুপরিচিত বাঙালি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। তার কাজগুলি ব্যাপকভাবে পঠিত হয় এবং তাদের অনেকগুলি অনুবাদ করা হয়েছে এবং এমনকি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
  • তার কিছু সুপরিচিত কাজ হল দেবদাস, পরিণীতা, পথের দাবি এবং অন্যান্য।
ভূমিকা: "আমার শৈশব ও যৌবন ঘোর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থের অভাবেই আমার শিক্ষালাভের সৌভাগ্য ঘটেনি। পিতার নিকট হতে অস্থির স্বভাব ও গভীর সাহিত্যানুরাগ ব্যতীত আমি উত্তরাধিকারসূত্রে আর কিছুই পাইনি। পিতৃদত্ত প্রথম গুণটি আমাকে ঘরছাড়া করেছিল- আমি অল্প বয়সেই সারা ভারত ঘুরে এলাম। আমার পিতার দ্বিতীয় গুণের ফলে জীবন ভরে শুধু স্বপ্ন দেখেই গেলাম।" কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। শরৎচন্দ্র ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী।
শৈশব ও ছাত্রজীবন: শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাড়া। দেবানন্দপুর তাঁর জন্মস্থান হলেও আর্থিক টানাটানির কারণে সেখানে তাঁর বেশিদিন থাকা হয়ে ওঠেনি। ভাগলপুরে বসবাসকারী শরৎচন্দ্রের মামারা ছিলেন ধনী গৃহস্থ। বালক শরৎচন্দ্রকে চলে আসতে হয় মামার বাড়িতে। ভাগলপুর থেকে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র দেবানন্দপুরে আসেন এবং ভরতি হন হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে। কিন্তু কয়েক বছর পরে অভাবের কারণে শরৎচন্দ্রের বাবা মতিলাল সপরিবারে ভাগলপুরে চলে এলে হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে শরৎচন্দ্রের লেখাপড়ায় ছেদ ঘটে। ভাগলপুরে এসে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে তাঁর ভরতির ব্যবস্থা করা হয় এবং সেখানে থেকে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। তারপর এফএ ক্লাসে ভরতি হলেও আর্থিক কারণে তাঁর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দেই তাঁর প্রথাগত পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন: ভাগলপুরে বসবাস করার সময়েই তাঁর সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়। সেখানে থাকতেই তিনি বেশ কিছু গল্প- উপন্যাস রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি ছাপা হয়নি। শুধু সাহিত্যচর্চা নয়, ভাগলপুরে থাকাকালীন তিনি গানবাজনা ও অভিনয়ের চর্চাও শুরু করেন। আদমপুর ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ভাগলপুরে তাঁর অস্থিরচিত্ততার প্রকাশও লক্ষ করা যায়। তিনি দু-একটি চাকরিতে যোগ দিলেও তাতে মন বসাতে পারেননি। একবার সন্ন্যাসী হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণও করেছিলেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্য অন্বেষণের জন্য তিনি রেঙ্গুনে চলে যান। যাওয়ার আগে 'কুন্তলীন' গল্প প্রতিযোগিতায় 'মন্দির' নামে একটি গল্প পাঠিয়ে দেন। কিন্তু লেখক হিসেবে তিনি নিজের নামের বদলে তাঁর এক মামা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম দিয়েছিলেন। শরৎচন্দ্রের এই 'মন্দির' গল্পটিই সে বছর 'কুন্তলীন' পুরস্কারে সম্মানিত হয়। এটিই শরৎচন্দ্রের লেখা প্রথম মুদ্রিত রচনা। কর্মসূত্রে তিনি রেঙ্গুনে প্রায় দশ বছর ছিলেন। প্রবাসে থাকলেও সেই সময়েই তিনি বাংলা সাহিত্যের পাঠকমহলে কথাশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর লেখা বড়দিদি যখন ভারতী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তখন প্রথম সংখ্যাগুলিতে লেখকের নাম ছিল না। অনেকেই সেটাকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বলে ভুল করেছিলেন। । একে একে 'বিন্দুর ছেলে, 'রামের সুমতি', 'পথনির্দেশ', 'বিরাজ বৌ', 'পন্ডিতমশাই', প্রভৃতি প্রকাশের ফলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কথাশিল্পী হিসেবে অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রেঙ্গুন থেকে পাকাপাকিভাবে দেশে ফিরে আসেন এবং লেখাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের একমাত্র জীবিকা। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল- শ্রীকান্ত (চার পর্ব), চরিত্রহীন, গৃহদাহ, দত্তা, দেবদাস, পল্লীসমাজ, শেষ প্রশ্ন, বিপ্রদাস, দেনাপাওনা, পথের দাবী প্রভৃতি। স্বদেশ ও সাহিত্য, নারীর মূল্য প্রভৃতি তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। 'অনিলা দেবী', 'নিরুপমা দেবী' ইত্যাদি ছদ্মনামেও শরৎচন্দ্র লেখালেখি করেছেন। ছোটোগল্প অপেক্ষা উপন্যাসের দিকেই শরৎচন্দ্রের ঝোঁক ছিল বেশি। সেজন্য তাঁর লেখা ছোটোগল্পের সংখ্যা বেশ কম। সংখ্যায় কম হলেও তাঁর ছোটোগল্পগুলিও বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে 'মহেশ', 'অভাগীর স্বর্গ' এবং 'একাদশী বৈরাগী' এই তিনটি গল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস পথের দাবী সেকালের বিপ্লবীদের প্রবল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। বইটি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। শরৎচন্দ্র বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি কিছুদিন হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তৎকালীন রাজনীতির প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি সেই পদ ত্যাগ করেন।
পুরস্কার ও সম্মান: শরৎচন্দ্র ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'জগত্তারিণী' সুবর্ণপদক পান। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডিলিট উপাধি। তবু এইসব পুরস্কার তাঁর কাছে কিছুই নয়। তাঁর আসল পুরস্কার হাজার হাজার পাঠক-পাঠিকার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। আজও তারা তাঁকে হৃদয়ের সিংহাসনে বসিয়ে রেখেছে।
জীবনাবসান: ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি এই অমর কথাশিল্পীর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা পত্তি- "যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে। দেশের মৃত্তিকা থেকে নিল যারে হরি দেশের হৃদয় তাকে রাখিয়াছে ধরি।"
MCQ Available

There are 2 MCQs available for this topic.

2 MCQ