শঙ্খ ঘোষ

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-04-15 11:27:47   77  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ TContent
☰Fullscreen

Table of Content:

শঙ্খ ঘোষ (জন্ম ১৯৩২) : বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক। জন্ম চাঁদপুর, বাংলাদেশ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'দিনগুলি রাতগুলি'। এছাড়াও লিখেছেন ‘নিহিত পাতাল ছায়া”, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ইত্যাদি। ছোটোদের জন্য লিখেছেন— ‘ছোট্ট একটা ইস্কুল’, ‘অল্পবয়স কল্পবয়স’, ‘শব্দ নিয়ে খেলা', 'সকাল বেলার আলো”, “সুপুরি বনের সারি’, ‘শহর পথের ধুলো' ইত্যাদি। প্রবন্ধের বই হিসেবে ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক’, ‘ছন্দোময় জীবন' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পাঠ্য কবিতাটি তাঁর ‘ আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে। ১০.১ কবি শঙ্খ ঘোষের প্রথম কবিতার বই কোনটি ? তাঁর লেখা দুটি ছোটোদের বইয়ের নাম লেখো। ১০.৩ ‘একলা' কবিতাটি তাঁর কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?


জন্ম: কবিশঙ্খ ঘোষ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি (২২ মাঘ, ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। চাঁদপুর বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। কবির পৈতৃক বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বানরিপাড়ায়। তাঁর মায়ের নাম অমলাবালা ঘোষ, বাবা মণীন্দ্রকুমার ঘোষ।
ছাত্রজীবন: বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান চিত্তপ্রিয়ের শৈশবশিক্ষার শুরু বাড়িতেই। পাবনা জেলার পাশি চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে একেবারে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভরতি হন। তাঁর বাবা ছিলেন সেই স্কুলের প্রধানশিক্ষক। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে যখন তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র, তখন বিশ্বভারতীর লোকশিক্ষা সংসদের আদ্যভারতী পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। পরের বছর প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাঁচটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে তিনি প্রথম বিভাগে পাস করেন ও সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এক্ষেত্রেও তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকেই শঙ্খ ঘোষ বিএ পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে তিনি এমএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান পান।
কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন: ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে কৃত্তিবাস পত্রিকা প্রকাশিত হলে তার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যাতেই শঙ্খ ঘোষ 'দিনগুলি রাতগুলি' শিরোনামে একটি কবিতা লেখেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবাসী কলেজে তিনি কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে মুরশিদাবাদে জঙ্গিপুর কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ১৯৫৬-য় তাঁর লেখা কিশোরপাঠ্য জীবনীগ্রন্থ বিদ্যাসাগর প্রকাশিত হয়। সে বছর তিনি যোগ দেন বহরমপুর গার্লস কলেজে, বিবাহ করেন শ্রীমতী প্রতিমা বিশ্বাসকে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ দিনগুলি রাতগুলি। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিটি কলেজের অধ্যাপক হয়ে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৬৩-তে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করলেন বাংলা ভাষায় বিশ্বকবিতা সংকলন সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত। বইটি উৎসর্গ করলেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ যে ভারতকোষ গ্রন্থ প্রকাশ করে, শঙ্খ ঘোষ ছিলেন তার সহসম্পাদকবৃন্দের মধ্যে অন্যতম। এর পরের বছর তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬৭-তে প্রকাশিত হয় এখন সময় নয়, নিহিত পাতালছায়া কাব্যগ্রন্থ। সে বছরই অক্টোবরে আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনটারন্যাশনাল ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি প্রথমবার বিদেশযাত্রা করেন। ১৯৬৮-তে তিনি দেশে ফেরেন এবং পরের বছর তাঁর কালের যাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৯৭১-এ বেরোয় নিঃশব্দের তর্জনী ছন্দের বারান্দাপ্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থ। পরের বছর প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ আদিম লতাগুল্মময়, কিশোর উপন্যাস সকালবেলার আলো। ১৯৭৩-এ নির্মাল্য আচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সম্পাদনা করলেন সতীনাথ গ্রন্থাবলী, অনুবাদ করলেন স্প্যানিশ ভাষায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর লেখা গ্রন্থ ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ নামে। ১৯৭৪-এ প্রকাশিত হল কাব্যগ্রন্থ মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়। এ বছরই কিছুকাল তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসার পদে কাজ করেন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপকের পদ সামলান। এই সময়েই প্রকাশিত হয় তুমি তো তেমন গৌরী নও কাব্যগ্রন্থ। ১৯৭৯-তে কিউবার কবিতার বঙ্গানুবাদ করলেন নিকোলাস গ্যিয়েনের চিড়িয়াখানা ও অন্যান্য কবিতা নামে। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ কাব্যগ্রন্থটি। সে বছরই প্রকাশ পায় এ আমির আবরণ প্রবন্ধগ্রন্থ। কুন্তক ছদ্মনামে লেখেন শব্দ নিয়ে খেলা বইটি। ১৯৮১-তে প্রকাশিত হয় উর্বশীর হাসি। ১৯৮৫-তে নির্মাণ আর সৃষ্টি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রহর জোড়া ত্রিতাল কাব্যগ্রন্থের জন্য শঙ্খ ঘোষ ত্রিবান্দ্রমের 'কুমারন আসান পুরস্কার' লাভ করেন। ১৯৮৩-তে প্রকাশিত হয় ছোটোদের জন্য ছড়া সংকলন রাগ করো না রাগুনি। ১৯৮৪-তে মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, বন্ধুরা মাতি তরজায় কাব্যগ্রন্থ এবং কল্পনার হিস্টিরিয়া প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৫-তে বেরোয় জার্নাল, ১৯৮৬-তে ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম, হয়বদন, বহুল দেবতা বহুস্বর। ১৯৮৭-তে প্রকাশিত হয় কবিতার মুহূর্ত, ধুম লেগেছে হৃৎকমলে, সব কিছুতেই খেলনা হয় কাব্যগ্রন্থগুলি। ১৯৮৯-এ কবিতা লেখা কবিতা পড়া প্রবন্ধগ্রন্থের প্রকাশ। সে বছর ধুম লেগেছে হৃৎকমলে গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া রবীন্দ্র পুরস্কারের টাকা শঙ্খ ঘোষ নির্যাতিত ও অসহায় মেয়েদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য তুলে দেন শ্রীশিবশঙ্কর চক্রবর্তী মহাশয়ের হাতে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর লেখা সুপুরিবনের সারি নামের কিশোরপাঠ্য উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে তিনি অবসর নেন। অসমের কমলকুমারী ফাউন্ডেশন থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য পান 'কমলকুমারী ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর কালচার'। টেগোর রিসার্চ ইন্সটিটিউট তাঁকে 'রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য' উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। এরপর একের পর এক প্রকাশিত হয় তাঁর লাইনেই ছিলাম বাবা, ছন্দোময় জীবন, কথা নিয়ে খেলা, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ, কবির অভিপ্রায়, এখন সব অলীক, প্রহর জোড়া ত্রিতাল, আমন যাবে লাট্টু-পাহাড়, বইয়ের ঘর, শবের উপর সামিয়ানা, সময়ের জলছবি, ছোট্ট একটা স্কুল, ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার, ইশারা অবিরত, এই শহরের রাখাল, ইছামতীর মশা, বড়ো হওয়া খুব ভুল, দামিনীর গান, জলই পাষাণা হয়ো আছে বালা তো দোখি কেমন হতো, সামান্য আসামান্য, ছেঁড়া ক্যাম্বিসেরা ব্যাগ, অবিশ্বাসেরা বাস্তাব, ইরাকি কবিতারা ছায়ায়, শহরা পাখেরা ধুলো, আরোশা আরা উদ্ভাবন, বটপাকুড়ের ফেলা, কথারা পিঠে কথা, ইকবালা থোকে অনুবাদ, প্রতি প্রশ্নো কেঁপো ওঠে ভিটে ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ।
পুরস্কার ও সম্মান: শঙ্খ ঘোষ সারাজীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ বাবরের প্রার্থনা। ১৯৭৭-এ মূর্খো বাড়ো, সামাজিক নায়া কাব্যগ্রন্থের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'নারাসিংহ দাস পুরাস্কার' দিল, বাবাক্সের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পান 'নক্ষত্র পুরস্কার" এবং 'সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার"। ১৯৯৫-তে ভারতীয় ভাষা পরিষদ তাঁকে 'স্বর্ণাঞ্চলা পুরস্কার' এবং ১৯৯৮-এ মধ্যপ্রদেশ সরকার তাঁকে 'কবীর সাম্মান' দেয়। সে বছরই কাবিতার মুহূর্ত গ্রন্থের জন্য পান 'শিরোমণি পুরস্কার'। গান্ধর্বা কবিতাগুচ্ছ কাব্যগ্রন্থের জন্য কে কে বিড়লা ফাউন্ডেশন তাঁকে 'সারাস্বাতী সাম্মানা জ্ঞাপন করে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'দেশিকোত্তমা' উপাধি দেয়। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'গঙ্গাবর মেহের জাতীয় পুরস্কার' দান করে। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি পান 'অল্পদ্দাশাঙ্কর র‍্যায় স্মৃতি পুরস্কার', 'শরাৎস্মৃতি পুরস্কার' এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিলিট। ২০০৬-এ শঙ্খ ঘোষ পান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডিলিট। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে 'পাল্লাভূষাণা" উপাধি দিয়ে ভূষিত করে। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'জ্ঞানপীঠ" পুরস্কারে সম্মানিত হন।