
সন্তান প্রতিপালনে মুসলিম ও অমুসলিম মায়ের পার্থক্য
সন্তান প্রতিপালনে মুসলিম ও অমুসলিম মায়ের পার্থক্য
ইসলাম থেকে বঞ্চিত মা (অমুসলিম মা) তার সন্তান প্রতিপালন সম্পর্কে যা কিছু চিন্তা করে তা এ নশ্বর দুনিয়া পর্যন্তই সীমিত। মৃত্যুর সীমানা পার হয়ে তার দৃষ্টি অনন্ত জগত পর্যন্ত প্রসারিত হয় না। নিজের সন্তান হওয়ার কারণে সে তার শিশুর লালন-পালন করে। তার অন্তরে সন্তানের প্রতি মমত্ববোধের সীমাহীন আবেগ রয়েছে। সে এ চিন্তা করে যে, সন্তানের মাধ্যমে তার বংশ টিকে থাকবে অথবা সন্তান বড়ো হয়ে তাকে আরাম ও শান্তি দেবে এবং তার সাহায্যকারী হবে। এ ধ্যানধারণার বশবর্তী হয়ে সে নিজের সন্তানকে এমনভাবে প্রতিপালন করে যাতে সে পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে সার্থক জীবনযাপন করতে পারে। আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন অর্থাৎ যারা ইসলাম প্র্যাকটিস করেন না তাদের মধ্যে আর অমুসলিম মায়ের মধ্যে চিন্তা-ভাবনা আর কাজের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য দেখা যায় না।
কিন্তু মুসলিম ও অমুসলিম মায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিম মা (যিনি ইসলাম প্র্যাকটিস করেন) সন্তান প্রতিপালনকে তিনি একটি দ্বীনি দায়িত্ব এবং আখিরাতের মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম মনে করেন। সন্তানকে প্রাচুর্যপূর্ণ আরামদায়ক একটি জীবন উপহার দেবার লক্ষ্যে তারা সন্তানকে প্রতিপালন করেন না। তারা নিজের অভিভাবকত্বে এমন মু'মিন তৈরী করেন যাদের দৃষ্টি সুদূর প্রসারী হবে, যারা দুনিয়ায় আল্লাহর মর্জি মুতাবেক জীবন কাটানো এবং আখিরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেকে ঐভাবে পরিচালিত করবে।
তাই একজন প্রকৃত মুসলিম মায়ের নিকট সন্তান প্রতিপালনের প্রশ্নটি শুধু পার্থিব দুনিয়ার ব্যাপারই নয়, বরং তার ভালোমন্দের প্রভাব সে জীবনেও প্রতিভাত হবে। তার চিন্তা ভাবনা হলো, তিনি যদি সন্তানকে ইসলামী ধ্যানধারণায় গড়ে তোলেন এবং ইসলামী নির্দেশ মোতাবেক লালন-পালন করেন তা হলে তার এই জীবন এবং পরকালীন জীবন দুই-ই সুন্দর হবে। আল্লাহ তার উপর খুশী হবেন এবং তাকে এই পৃথিবীতে শান্তি দেবেন এবং পরকালে জান্নাত দান ও পুরস্কারের বারি বর্ষণ করবেন। যদি তিনি এ দায়িত্ব পালনে দুর্বলতা দেখান অথবা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সন্তানদের গড়ে না তোলেন তাহলে পরকালে লজ্জিত হবেন এবং আখিরাত নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন এবং শাস্তি দেবেন।
এ ধরনের চিন্তা ও কর্মের সবচেয়ে বড় উপকারী দিক হলো যে, সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যদি সন্তান মায়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অক্ষম হন, তাহলেও সে মা লজ্জিত হন না। তিনি নিরাশও হন না এবং তার কাজে ভাটা পড়ে না। বরং এ আস্থায় তিনি সবসময় বলীয়ান থাকেন যে, দুনিয়ায় যদি সন্তান তার আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থও হয় তবুও তিনি আল্লাহর নিকট যে প্রতিদানের প্রত্যাশী তা তিনি পূরণ করবেন। তিনি বড়ো শক্তিশালী। তিনি বান্দার সুন্দর কাজের পুরোপুরি প্রতিদান দেন এবং কখনো বান্দাকে প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করেন না।
"স্ত্রী স্বামীর ঘরের তত্ত্বাবধায়ক এবং জিম্মাদার। যেসব ব্যক্তি ও বস্তুর তত্ত্বাবধায়ক তাকে বানানো হয়েছে সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে।” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম