বুদ্ধি
Table of Content:
কেটেল (Cattle) মনে করেন, 'বুদ্ধি হল নতুন নৈপুণ্য লাভের স্বাভাবিক ক্ষমতা।
আবার সিরিলবার্ট (Cyril Burt) বলেন, বুদ্ধি হল নতুন অবস্থা বা নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে দেহ মনের মধ্যে নতুন দূরে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা।
আবার টারম্যান (Terman) বুদ্ধিকে একেবারে অন্য দৃষ্টিকোন থেকে দেখার চেষ্টা করেন, তাঁর মতে 'মূর্ত, বিমূর্ত, বিশেষ, সামান্য চিন্তায় যে যত সক্ষম সে তত বুদ্ধিমান'।
এভাবে যত সংজ্ঞাই আলোচনা করা হউক না কেন সেই গুলির ধারণাগত অমিল থাকলেও একটি মিল হল যে সবাই বুদ্ধিকে প্রাণীর একটি অর্জিত ক্ষমতা হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
বুদ্ধির বিকাশ
বুদ্ধির বিকাশ সম্পর্কে সঠিক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোন তত্ত্ব পাওয়া যাবে না। সব মনোবিজ্ঞানী তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধির বিকাশ আলোচনা করেন। এগুলির সারাংশ করলে প্রধানত তিনটি ধারণা পাওয়া যায়। যেমন, ঐতিহ্যগত বিশ্বাস হল যে, জীবনের প্রথম পর্যায় থেকে খুব দ্রুত হারে বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে থাকে এবং বয়স পরিণত হওয়ার সাথে সাথে তা ক্রমান্বয়ে কমে গিয়ে স্থির হয়ে যায়। বুদ্ধির বিকাশ সম্পর্কে অপর শ্রেণীর মনোবিজ্ঞানীরা (থাষ্টোন, কর্টিস প্রমূখ ব্যক্তিগন) মনে করেন যে শৈশব থেকে বুদ্ধি স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বাল্যকালে গিয়ে তা স্থির হয়ে যায় আবার কৈশোরকাল থেকে বুদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে পরিণত বয়সে গিয়ে শেষ হয়ে যায়। সর্বশেষে তৃতীয় দলভুক্ত মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে শৈশবে বুদ্ধি মোটামুটি স্থির থাকে এবং কৈশোরে এই বৃদ্ধি মিলিয়ে যায়। এই তিনটি মতের কোনটিকেও যদি গ্রহন না করে বিশ্লেষণ করি তবে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বুদ্ধি বৃদ্ধির হার প্রধানত কৈশোর বা তদুর্ধ সময় (১৮ থেকে ২০ বৎসর) পর্যন্ত ই অব্যাহত থাকে তার পর সাধারণ ভাবে এর আর পরিবর্তন হয় না।
কৃতি (achievement) ও বুদ্ধিমত্তা (intelligence)
মানুষের বুদ্ধিমত্তা কৈশোরের পর আর বৃদ্ধি পায় না বললে হয়তো অসম্ভব ব্যাপার মনে হতে পারে কারণ আমরা দেখি সারা জীবনই মানুষ জ্ঞান অর্জন করে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার জ্ঞান বুদ্ধিও বৃদ্ধি পায়। আসলে এখানে কৃতি (achievement) ও বুদ্ধিমত্তা (intelligence) দুটি বিষয় রয়েছে, প্রথমোক্তটি সারা জীবনই অর্জন করা যায় কিন্তু দ্বিতীয়টি অর্জনের একটি সীমা রয়েছে তারপর সেটি আর বৃদ্ধি পায় না। কৃতি হচ্ছে শিশু তার অভিজ্ঞতা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোন জ্ঞান বা দক্ষতামূলক যা শিক্ষা করে। কৃতিতে কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা সূচী থাকে যেমন, বাংলা, ভূগোল বা গনিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু এসব বিষয়ে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে তা জানার জন্যে শিক্ষকগণ পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতি পরিমাপ করেন। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা নির্দিষ্ট করা কৃতির মত অত সহজ নয়। অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানী মনে করেন যে, বুদ্ধিমত্তা বিদ্যালয়ের কৃতি অর্জন করার জন্য ভিত্তি ভুমি প্রণয়ন করে। বুদ্ধিমত্তা হলো শিশুর শিখন দক্ষতার একটি পরিমাপক। অনেক মনোবিজ্ঞানীর মতে শিশু যখন বিদ্যালয়ের কঠোর ব্যবস্থাধীণে অন্তর্ভূক্ত হয় তখনই অধিকাংশ বুদ্ধির যোগ্যতা প্রকাশিত হয়।
সাধারণ ভাবে এটি অনুমান করা যেতে পারে যে, বয়সের সাথে সাথে শিশুর বুদ্ধিও বাড়তে থাকে। তবে শিশুদের অতি শৈশবকালীন বুদ্ধিমত্তার সাথে তার বয়ঃপ্রাপ্তিকালের বুদ্ধির কতটা সহসম্পর্ক আছে তা চিন্তার বিষয়। অতি শৈশবে শিশুর জ্ঞান মূলক দক্ষতা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় কিন্তু বাল্যকালে বা তার পরে তা তত দ্রুত বাড়ে না। যেমন গবেষণায় দেখা গেছে যে কৈশোরের শেষ দিকে ওয়েস্লারের বুদ্ধি অভীক্ষার কর্মসম্পাদনী উপ-অভীক্ষার সাফল্যাঙ্ক ক্রমে বাড়তে থাকে এবং তারপর আবার তা দ্রুত কমে যায় কিন্তু বাচনিক উপ-অভীক্ষার সাফল্যাঙ্ক কমার হার তুলনামূলকভাবে কম হয় (Wechsler, ১৯৮১)। তাছাড়া হর্ণ ও ক্যাটেল (Horn and Cattell, ১৯৬৭) মানুষের মধ্যে কঠিন (crystallized) ও নমনীয় (fluid) এই দুই ধরনের বুদ্ধিমত্তার কথা বলেন যার মাধ্যমেও বয়সের সাথে বুদ্ধির সম্পর্ক অনুধাবন করা যায়। কঠিন বুদ্ধিমত্তা প্রধানত মানুষের ব্যাপকতর মৌলিক জ্ঞানের দিক নির্দেশ করে যা মানুষ তার সমাজ, সংস্কৃতি থেকে আহরণ করে অপর দিকে তরল বুদ্ধিমত্তা তাৎক্ষণিক অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য যৌক্তিক দক্ষতার দিক নির্দেশ করে। কঠিন বুদ্ধিমত্তা মানুষের সামাজিক শিখন ও তরল বুদ্ধিমত্তা জৈবিক শিখনের প্রতিফলন ঘটায় (Schaie and Willis, ১৯৯৩)।
বাল্য ও কৈশোরকাল চিন্তন ও বুদ্ধির বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। শিশুর চিন্তন প্রত্যক্ষণগত, ভাবগত ও ধারণাগত পর্যায়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়। চিন্তনের বিকাশের সাথে সাথে বুদ্ধিও বিকাশ লাভ করে। বুদ্ধির সংজ্ঞা দিতে যেয়ে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। বুদ্ধির সাথে কৃতির সম্পর্ক গভীর।