বুদ্ধির বিকাশ

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-05-21 10:22:07   15 Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ Table of Contents

Table of Content:


বুদ্ধির বিকাশ

Schema

যখন থেকে শিশুর মধ্যে যৌক্তিক চেতনা সৃষ্টি হয় তখনই তার মধ্যে বুদ্ধির বহিপ্রকাশ ঘটতে থাকে। বুদ্ধির বিকাশে প্রয়োজন 'স্কিমা' (schema) । স্কিমা চিন্তার এক বিশেষ মানসিক কাঠামো যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার প্রত্যক্ষণকৃত উপাত্তকে সংগঠিত করে। শিশুর জ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে তার স্কিমার সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। মানসিক বিকাশের সময় এই স্কিমা (বহুবচনে স্কিমাটা) ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয় বা বদলে যায়। স্কিমার সাহায্যে শিশু তার অর্জিত তথ্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও নির্বাচন করে। জ্ঞানের বিকাশ ও বুদ্ধির প্রকাশ মূলত একই ধারণার দুটি নাম। পিয়াজের মতে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতাই হল বুদ্ধি যাকে তিনি জ্ঞানমূলক দক্ষতা হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। অপরদিকে সাধারণ মনোবিজ্ঞানীরা বুদ্ধিকে বলেছেন কতকগুলি দক্ষতা যেমন যুক্তি প্রদর্শন, বিমূর্তকরণ, খাপ খাওয়ানো, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো, সমস্যা সমাধান ইত্যাদি। বুদ্ধির সর্বজনগ্রাহ্য কোন সংজ্ঞা নেই, তবে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ভাবে একে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন।

বুদ্ধির বিকাশ

বুদ্ধির বিকাশ সম্পর্কে সঠিক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোন তত্ত্ব পাওয়া যাবে না। সব মনোবিজ্ঞানী তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধির বিকাশ আলোচনা করেন। এগুলির সারাংশ করলে প্রধানত তিনটি ধারণা পাওয়া যায়। যেমন, ঐতিহ্যগত বিশ্বাস হল যে, জীবনের প্রথম পর্যায় থেকে খুব দ্রুত হারে বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে থাকে এবং বয়স পরিণত হওয়ার সাথে সাথে তা ক্রমান্বয়ে কমে গিয়ে স্থির হয়ে যায়। বুদ্ধির বিকাশ সম্পর্কে অপর শ্রেণীর মনোবিজ্ঞানীরা (থাষ্টোন, কর্টিস প্রমূখ ব্যক্তিগন) মনে করেন যে শৈশব থেকে বুদ্ধি স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বাল্যকালে গিয়ে তা স্থির হয়ে যায় আবার কৈশোরকাল থেকে বুদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে পরিণত বয়সে গিয়ে শেষ হয়ে যায়। সর্বশেষে তৃতীয় দলভুক্ত মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে শৈশবে বুদ্ধি মোটামুটি স্থির থাকে এবং কৈশোরে এই বৃদ্ধি মিলিয়ে যায়। এই তিনটি মতের কোনটিকেও যদি গ্রহন না করে বিশ্লেষণ করি তবে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বুদ্ধি বৃদ্ধির হার প্রধানত কৈশোর বা তদুর্ধ সময় (১৮ থেকে ২০ বৎসর) পর্যন্ত ই অব্যাহত থাকে তার পর সাধারণ ভাবে এর আর পরিবর্তন হয় না।

Achievement Intelligence

মানুষের বুদ্ধিমত্তা কৈশোরের পর আর বৃদ্ধি পায় না বললে হয়তো অসম্ভব ব্যাপার মনে হতে পারে কারণ আমরা দেখি সারা জীবনই মানুষ জ্ঞান অর্জন করে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার জ্ঞান বুদ্ধিও বৃদ্ধি পায়। আসলে এখানে কৃতি (achievement) ও বুদ্ধিমত্তা (intelligence) দুটি বিষয় রয়েছে, প্রথমোক্তটি সারা জীবনই অর্জন করা যায় কিন্তু দ্বিতীয়টি অর্জনের একটি সীমা রয়েছে তারপর সেটি আর বৃদ্ধি পায় না। কৃতি হচ্ছে শিশু তার অভিজ্ঞতা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে কোন জ্ঞান বা দক্ষতামূলক যা শিক্ষা করে। কৃতিতে কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা সূচী থাকে যেমন, বাংলা, ভূগোল বা গনিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু এসব বিষয়ে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে তা জানার জন্যে শিক্ষকগণ পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতি পরিমাপ করেন। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা নির্দিষ্ট করা কৃতির মত অত সহজ নয়। অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানী মনে করেন যে, বুদ্ধিমত্তা বিদ্যালয়ের কৃতি অর্জন করার জন্য ভিত্তি ভুমি প্রণয়ন করে। বুদ্ধিমত্তা হলো শিশুর শিখন দক্ষতার একটি পরিমাপক। অনেক মনোবিজ্ঞানীর মতে শিশু যখন বিদ্যালয়ের কঠোর ব্যবস্থাধীণে অন্তর্ভূক্ত হয় তখনই অধিকাংশ বুদ্ধির যোগ্যতা প্রকাশিত হয়।

সাধারণ ভাবে এটি অনুমান করা যেতে পারে যে, বয়সের সাথে সাথে শিশুর বুদ্ধিও বাড়তে থাকে। তবে শিশুদের অতি শৈশবকালীন বুদ্ধিমত্তার সাথে তার বয়ঃপ্রাপ্তিকালের বুদ্ধির কতটা সহসম্পর্ক আছে তা চিন্তার বিষয়। অতি শৈশবে শিশুর জ্ঞান মূলক দক্ষতা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় কিন্তু বাল্যকালে বা তার পরে তা তত দ্রুত বাড়ে না। যেমন গবেষণায় দেখা গেছে যে কৈশোরের শেষ দিকে ওয়েস্লারের বুদ্ধি অভীক্ষার কর্মসম্পাদনী উপ-অভীক্ষার সাফল্যাঙ্ক ক্রমে বাড়তে থাকে এবং তারপর আবার তা দ্রুত কমে যায় কিন্তু বাচনিক উপ-অভীক্ষার সাফল্যাঙ্ক কমার হার তুলনামূলকভাবে কম হয় (Wechsler, ১৯৮১)। তাছাড়া হর্ণ ও ক্যাটেল (Horn and Cattell, ১৯৬৭) মানুষের মধ্যে কঠিন (crystallized) ও নমনীয় (fluid) এই দুই ধরনের বুদ্ধিমত্তার কথা বলেন যার মাধ্যমেও বয়সের সাথে বুদ্ধির সম্পর্ক অনুধাবন করা যায়। কঠিন বুদ্ধিমত্তা প্রধানত মানুষের ব্যাপকতর মৌলিক জ্ঞানের দিক নির্দেশ করে যা মানুষ তার সমাজ, সংস্কৃতি থেকে আহরণ করে অপর দিকে তরল বুদ্ধিমত্তা তাৎক্ষণিক অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য যৌক্তিক দক্ষতার দিক নির্দেশ করে। কঠিন বুদ্ধিমত্তা মানুষের সামাজিক শিখন ও তরল বুদ্ধিমত্তা জৈবিক শিখনের প্রতিফলন ঘটায় (Schaie and Willis, ১৯৯৩)।

বাল্য ও কৈশোরকাল চিন্তন ও বুদ্ধির বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। শিশুর চিন্তন প্রত্যক্ষণগত, ভাবগত ও ধারণাগত পর্যায়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়। চিন্তনের বিকাশের সাথে সাথে বুদ্ধিও বিকাশ লাভ করে। বুদ্ধির সংজ্ঞা দিতে যেয়ে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। বুদ্ধির সাথে কৃতির সম্পর্ক গভীর।