সন্তানকে মানুষ করার পিছনে মায়ের কর্তব্য

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-06-04 05:41:17   47  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ TContent
☰Fullscreen

Table of Content:

সন্তানকে মানুষ করার পিছনে মায়ের কর্তব্য

অতি ছোট অবস্থা হতে সন্তানদের লালন-পালনে মায়ের উপস্থিতি ও সঙ্গ খুবই প্রয়োজন। পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার গুরুরা মহিলাদের সমঅধিকারের কথা বলে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এতে কোন কোন শিক্ষিতা মহিলা শুধুমাত্র ঘর-সংসার করাটাকে সময় ও শ্রমের অপচয় বলে মনে করে থাকেন। এটি একটি সামাজিক উম্মাদনা ও শোষণ। আর মহিলারা নিজেদের স্বকীয়তা ভুলে কেবল প্রচারণা আর অপসংস্কৃতির ফাঁদে পড়ে একই শ্লোগান শুরু করেন। তারা ঘরে থাকাটাকে অপেক্ষাকৃত নীচু কাজ মনে করেন। এতে কয়েকটি ধীরগতির বিপর্যয় শুরু হয়। একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, একজন শিশু সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, একজন মা শোষিত হন (যদিও তিনি তা মনে করেন না)। পরিণতিতে সমাজের সকল শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যে পশ্চিমা সংস্কৃতি এ সমঅধিকার নামক আগুনের স্রষ্টা তারাই আবার প্রমাণ করছে যে শিশু সন্তানগণ মায়ের অনুপস্থিতি-তে চরম মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। একটি উন্নত দেশ যেখানে শতকরা সর্বোচ্চ হারে মেয়েরা পুরুষের পাশাপাশি সর্বত্রই কাজ করে, সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়ে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছে।

দুই হাজার শিশুর উপর জরিপ চালানো হয়। এ জরিপ চলে টানা তিন বছর ধরে। এতে দেখা যায়, যেসব শিশু দিনভর তাদের মা ছাড়া অন্য কারো দ্বারা লালিত-পালিত হয়, যেমন: ডে কেয়ার সেন্টার, মেইড ইত্যাদি - তাদের সার্বিক বেড়ে উঠা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ। Doctor Bernadine Woo (যিনি এ জরিপ পরিচালনা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন) বলেন, দিনের সিংহভাগ সময় মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুরা যথাযথ মনস্তাত্বিক সাপোর্ট পায় না, ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকমত গড়ে উঠে না। Institute of Mental Health-এর Deputy Chief Dr. Daniel বলেন, শিশুদের দেখাশুনার জন্য প্রথম ৬ বছর একজন সঙ্গী বা তদারককারী দরকার যিনি নিয়মিত/সার্বক্ষণিক শিশুর পরিচর্যা করবেন, শিশুকে সঙ্গ দেবেন ও তার যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। আর এটি সম্ভব মাকে দিয়ে। এ জরিপে আরো বলা হয়, শিশুদের মনস্তত্ব দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যখন তারা একেক সময় একেকজনকে মূল পরিচর্যাকারী হিসেবে দেখতে পায়। ফলে অন্যদের তুলনায় তারা নিম্ন IQ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তিনগুণ।

এটি মাত্র একটি জরিপের ফলাফল। এ ধরনের সকল জরিপ একই কথা বলে। মূল কথা একটাই। শিশুদের পরিচর্যার জন্য মায়ের কোন বিকল্প নেই। এখন সিদ্ধান্ত আমার। আমার শিশুর অধিকার রক্ষা করে তার সার্বিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবো নাকি বাইরে চাকুরী করে সংসারের স্টেটাস ঠিক রাখার জন্য টাকা কামাবো?

মহিলাদের চাকুরী করার কারণে সংসারে উপরি আয় হয়। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সূচক উর্ধে উঠে। ঘরে ও বাইরে যন্ত্র আর বাহ্যিক চাকচিক্যের সমাগম ঘটে। কিন্তু এরজন্য যে মূল্য দিতে হয় তা কি একেবারে কম? সর্বপ্রথম এ বিষয়টি মহিলারা বুঝেন না যে, চাকুরী করে তারা শোষণের শিকার হচ্ছেন। পুরুষরা চাকুরী করে একটি। তাদের প্রাকৃতিক স্বভাবই ঘরের বাইরের কর্মচাঞ্চল্য। শতকরা ১জন পুরুষও পাওয়া যাবে না যিনি সারাদিন অফিস বা ব্যবসায়ের কাজ করে ঘরের কাজে যথাযথ ভূমিকা পালন করে স্ত্রী ও পরিবারকে সহায়তা করছেন। কেউ কেউ আবার যুক্তি দেখান যে পুরুষরা বাহির হতে বাসায় এসে ক্লান্তশ্রান্ত দেহে ঘরের কাজে সহযোগিতার শক্তি থাকে না।

এবার আসি স্ত্রীদের কথায়। স্ত্রীগণ কোন অবস্থাতেই নিজ বাসার সার্বিক দায়- দায়িত্ব হতে মুক্ত হতে পারবেন না। স্ত্রী যত বড় চাকুরীই করুক না কেন, বাইরে যত ব্যস্ত সময়ই কাটান না কেন, তিনি সন্তান পালন, রান্না, তার ঘরের সৌন্দর্য রক্ষা, বাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও সার্বিক অবস্থার দেখভাল করার সহজাত মানসিকতা হতে কখনো মুক্ত হতে পারবেন না। এবার দেখি, পুরুষ কয়টি চাকুরী করছেন আর স্ত্রী কয়টি চাকুরী করছেন? পুরুষ আসলে চাকুরী করছেন একটি। আর স্ত্রী করছেন তিনটি। একটি অফিসের চাকুরী, একটি ঘর দেখাশুনার সার্বিক চাকুরী, আরেকটি সন্তানদের দেখাশুনার চাকুরী। এটি কি নারী শোষণ নয়?

অতএব সন্তানের মা যাই করেন না কেন, সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যদি তিনি কাছে থাকতে না পারেন তাহলে এটা একটা বিরাট অবিচার। সন্তানদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য, প্রকৃত শিক্ষালাভের স্বার্থে, একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার লক্ষ্যে মাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।