যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)
Table of Content:
হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)
নাঙ্গা তলোয়ার হাতে ভীড় ঠেলে এগিয়ে আসছে এক কিশোর।
অসম্ভব উত্তেজনা তার চোখে মুখে। রাসূল (সা.)-এর কাছাকাছি
আসতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'যুবাইর! এ সব কি? যুবাইর নামের কিশোরটি উত্তর দিলেন, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জানতে পেরেছি যে, আপনাকে মুশরিকরা গ্রেফতার করেছে। তাই আমি তার প্রতিশোধ নিতে আগমন করেছি।' যুবাইরের কথা শুনে নবী (সা.) খুশি হলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। জানা যায় যুবাইরের এই তলোয়ারই মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোষ মুক্ত প্রথম তলোয়ার। নাম যুবাইর, ডাকনাম আবূ আবদুল্লাহ্ আর উপাধি ছিলো
হাওয়ারীয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)। আব্বার নাম 'আওয়াম' এবং মায়ের নাম সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব। যুবাইর (রা.)-এর মা সাফিয়া ছিলেন নবী (সা.)-এর আপন ফুফু। অর্থাৎ যুবাইর ছিলেন নবী (সা.) ফুফাত ভাই। হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন হযরত যুবাইর (রা.)-এর ফুফু। অপর দিকে হযরত আয়েশা (রা.)- এর সহোদরা প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দিকের কন্যা আসমাকে বিয়ে করায় যুবাইর ও রাসূল (সা.)-এর মধ্যে ছিল নানা আত্মীয়তার বন্ধন।
যুবইর (রা.) জন্মগ্রহণ করেন হিজরতের আটাশ বছর পূর্বে। তাঁর বাল্যকাল সম্বন্ধে কিছুই জানা যায়না। তবে এটুকু জানা যায় যে, তাকে বীর পুরুষ, আত্মসংযমী, আত্মপ্রত্যয়ী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তাঁর মা সাফিয়ার প্রচেষ্টার কোন অন্ত ছিলো না। এমন কি এজন্য তিনি যুবাইরকে প্রচণ্ড মারধোর ও শাস্তি দিতেন। একদিন তো তাঁর চাচা নওফেল বিন খুওয়াইলিদ ভীষণভাবে ক্ষেপে গিয়ে সাফিয়াকে বললেন, 'এভাবে মারতে মারতে ছেলেটাকে তুমি মেরেই ফেলবে'। এরপর তিনি বানু হাশিমের লোকদের ডেকে বললেন, 'তোমরা সাফিয়াকে বুঝাওনা কেনো?' এর উত্তরে সাফিয়া বললেন, 'যারা বলে আমি তাকে দেখতে পারিনা, তারা মিথ্যা বলে। আমি তাকে এজন্য মারধোর করি যাতে সে বুদ্ধিমান হয় এবং পরবর্তী জীবনে শত্রু সৈন্য পরাজিত করে গণিমতের মাল লাভে সক্ষম হয়।'
আনন্দের কথা হলো অল্প বয়স থেকেই যুবাইর সত্যি সত্যিই পাহলোয়ান হয়ে উঠেছিলেন। অন্তত একটা ঘটনায় এর প্রমাণ মেলে, একদিন মক্কার এক বলিষ্ঠ দেহের যুবকের সাথে তার মোকাবিলা হয়। এক পর্যায়ে যুবাইর তাকে এইছা মার দিলেন যে, যুবকটির একটি হাতই ভেঙে গেলো। যুবকটির এহেন দুরবস্থা দেখে লোকেরা বিচারের জন্য তাকে নিয়ে যুবাইরের মায়ের নিকট এলো। কিন্তু আশ্চর্য! যুবাইরের মা সাফিয়া এ ঘটনায় তো মর্মাহত হলেনই না, উল্টো তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমারা যুবাইরকে কেমন দেখলে-সাহসী না ভীরু?'
মাত্র ষোল বছর বয়সেই যুবইর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। যতদূর জানা যায় তিনি প্রথম পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর পরই অন্যান্যদের মতো তাঁর ওপরও অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। তাঁর চাচা তাঁকে ইসলাম থেকে ফিরানোর জোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ক্ষেপে গিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। কখনো হোগলায় পেঁচিয়ে দড়ি বেধে নাকে ধোঁয়া দিতো। ফলে তার জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠতো। তবুও তিনি ইসলাম ত্যাগ করেননি, বরং তিনি বলতেন, 'যতো কিছুই করুননা কেন আমি আবার কাফির হতে পারিনা।'
কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রথমে তিনি হাফশায় হিজরত করেন। পরে হাফশা থেকে ফিরে এসে শুনেন রাসূল (সা.) মদীনায় হিজরত করেছেন। অতএব তিনিও মদীনায় হিজরত করেন।
ব্যক্তি হিসাবে হযরত তালহা (রা.) ও হযরত যুবাইর (রা.) কেমন ছিলেন তা হযরত মুয়াবিয়া (রা.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'আল্লাহ তাদের দু'জনের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। আল্লাহর কসম, তাঁরা দু'জনই ছিলেন অত্যন্ত সংযমী, পুণ্যবান, সৎকর্মশীল, আত্মসমর্পণকারী, পুত পবিত্র, পবিত্রতা অর্জনকারী ও শাহাদাত বরণকারী।'