ভাববাদ (Idealism)
Table of Content:
ভাববাদ (Idealism)
পাশ্চাত্য দার্শনিক মতবাদগুলির মধ্যে প্রাচীনতম মতবাদ হল ভাববাদ। বস্তুত এটি একটি বিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি। শিক্ষাতত্ত্বের ভিত্তিরচনা বিশেষ করে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ণয়ে ভাববাদী দার্শনিকদের গুরুত্ব অসীম। ভাববাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Idealism', এর মূলেই আছে Ideas বা ভাব। অর্থাৎ, যে তত্ত্ব Ideas বা ভাবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, সেটি ভাববাদ বা Idealism নামে পরিচিত। ভাববাদী মতবাদে বিশ্বাসী দার্শনিকরা মানুষ এবং বিশ্বব্রয়ান্ডকে এক ভাবসুলভ সত্তার অংশ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এঁদের মতে, জড় জগৎ ছাড়াও আরও একটা জগৎ আছে যাকে বলা হয় ভাবজগৎ বা আধ্যাত্মিক জগৎ। এই জগতের অধীশ্বর হল সর্বজনীন মনের অধিকারী ঈশ্বর। মানুষের জ্ঞান হল সর্বজনীন মনের অংশ মাত্র। মানবসত্তার লক্ষ্য হল এই ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা। ঈশ্বর যেমন চিরন্তন সত্য তেমনই জীবনের মূল্যবোধগুলো চিরন্তন সত্য।
ভাববাদ একটি বিশেষ দার্শনিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর অধিবিদ্যায় 'ভাবের জগতে সত্যের অধিষ্ঠান তত্ত্ব'-এর মাধ্যমে। ভাববাদীদের কাছে 'Matter and Body' অপেক্ষা 'Mind and Soul' অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভাববাদীরা মানুষের পার্থিব জীবন অপেক্ষা অপার্থিব জীবনের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন। ভাববাদী দার্শনিকদের মতে, মানুষ একটা আধ্যাত্মিক সত্তা নিয়ে জন্মায় আর শিক্ষার মধ্যে দিয়েই তার প্রকৃত আত্মোপলব্ধি হয়। ফলে চিরন্তন সত্য যে ব্রহ্ম তাকে পাওয়ার পথে এগিয়ে যায়। তাই রাঙ্ক (Rusk) বলেছেন, শিক্ষার কাজ হবে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক সত্তার প্রসার করা। শিক্ষাক্ষেত্রে ভাববাদকে যাঁরা প্রয়োগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে প্লেটো, কমেনিয়াস, কান্ট, ফ্রয়েবেল, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধিজি, বিবেকানন্দ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।