হাজ্জ: ইসলামের এক অন্যতম স্তম্ভ
Table of Content:
জিলহজ্ব মাসের ৫টি বিশেষ আমল
১. প্রথম দশ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা:
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত (প্রথম ৯ দিন) যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা। যথা: নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।
ফযীলত: হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের
ইবাদতের তুলনায় বেশী প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায়। (তিরমিজী শরীফ, সিয়াম অধ্যায়, দশ দিনের আমল পরিচ্ছেদ, ১ম খ-, ১৫৮ পৃষ্ঠ্য) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল আল্লাহ তাআলার নিকট বেশি প্রিয় আর কোন দিনের আমল তাঁর নিকট তত প্রিয় নয়। (বুখারী শরীফ, দুইঈদ অধ্যায়, আইয়ামে তশরীফ পরিচ্ছেদ, ১ম খ., ১৩২ পৃষ্ঠা।)
২. চুল-নখ না কাটা:
যারা কুরবানী করবে ও না করবে তাদের জন্য যিলহজের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব। হাদীস: হযরত উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করবে ও কুরবানী করবে না তারা যেন [এই ১০ দিন) চুল ও নখ না কাটে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, কুরবানী অধ্যায়, যে কুরবানী করবে তার জন্য চুল-নখ না কাটার বর্ণনার অধ্যায়, পৃষ্ঠা-২২৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫২৩৩)
৩. আরাফার দিন রোযা রাখা:
জিলহজের প্রথম নয় দিন বিশেষ করে আরাফার দিন অর্থাৎ নয় জিলহজে নফল রোযা রাখা। (তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য নয়)
ফযীলত:
হযরত আবু কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু- আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তা'আলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসর ও সামন এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।
(তিরমিজী শরীফ, সাওম অধ্যায়, আরাফার দিনে রোযার ফযীলত পরিচ্ছেদ, ১ম খ., ১৫৭ পৃষ্ঠা, সুনামে ইবনে মাজাহ, ১২৪ পৃষ্ঠা।)
৪. তাকবীরে তাশরীফ বলা:
যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে আর মহিলাদের জন্য নিচু আওয়াজে। তাকবীর হলো- “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ"। (ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খ., ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরভূত তাশরীফ পরিচ্ছেদ, ৮ম খ-, ১৪৮ পৃষ্ঠা)
৫. স্বচ্ছল ব্যক্তির কুরবানী করা:
১০, ১১ অথবা ১২ই যিলহজের যে কোন দিন কোন ব্যক্তির মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য।
(ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭; ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২; সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)
ফযীলত:
যায়েদ বিন আরকাম রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কুরবানীর ফযীলত কী? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু- আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন-এটি তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নত। তারা (রা.) পূণরায় বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা (রা.) আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল। ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন-ভেড়ার লোমের প্রটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬পৃ.)
কঠোর হুশিয়ারী: আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সমতা থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬পৃ.।)