রোযা / রমযান / সাওম - বাংলা ইসলামিক কুইজ

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-03-13 08:32:01   30 Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details 69 MCQ
☰ Table of Contents

Table of Content:


রমজান কি

রমজান ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডারের নবমতম মাস। যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ-সবল, সুস্থমস্তিস্কের, আবাসি মুসলিমের জন্য রমজানে সিয়াম (রোযা) পালন করা বাধ্যতামূলক (অর্থাৎ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পান করা এবং সহবাস থেকে বিরত থাকা)। এটি কলেমা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ), নামাজ ও যাকাতের পর ইসলামের চতুর্থ স্তম্ব, এবং রমজানের রোযাকে প্রত্যাখ্যান করলে একজন মুসলিম ইসলামের বাইরে চলে যায়।

রমজান শব্দটা প্রথম কুরআনে এসেছে নিম্নের আয়াতেঃ

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। [২:১৮৫]

রমজানের ফাযায়েল

১। এই মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই মাসের প্রত্যেক রাতে জিব্রাইল আলাইহি সালামের সাথে বসে কুরআন নিয়ে পড়াশোনা করতেন।

২। সব আমলের সাওয়াব রমজানে ১০ থেকে ৭০০ অথবা তারও বেশী গুন বেড়ে যায়।

৩। রমজানে খারাপ কাজ করা অন্য মাসের থেকে গুরুতর।

৪। শয়তানদেরকে রমজানে আটক করে রাখা হয়। [নাসাই]

৫। এই মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং বেহেশতের দরজা খুলে যায়। [নাসাই]

৬। এই মাসের শেষ দশ রাতের মধ্যে লায়লাতুল কদর (ভাগ্যনির্ণয়ের রাত) পড়ে। এই একরাতের আমল এক হাজার মাসের (৮৩ বছরের) আমলের থেকেও বেশী পুরস্কৃত।

৭। এই মাসে সব গুনাহ মাফ হয় ৩টি কারনেঃ

ক। যেই ব্যাক্তি রমজান মাসে বিশ্বাসের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রোযা রাখে তার পূর্বকালীন সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। [বুখারি ও মসলিম]

খ। যেই ব্যাক্তি রমজানের রাতগুলোতে বিশ্বাসের সাথে ও সাওয়াবের আশায় নামাজ পড়ে তার পূর্বকালীন সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। [বুখারি ও মুসলিম]

গ। যেই ব্যাক্তি লায়লাতুল কদরে বিশ্বাসের সাথে ও সাওয়াবের আশায় আল্লাহ্র ইবাদত করে তার পূর্বকালীন সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। [বুখারি ও মুসলিম]

৮। রমজানে প্রত্যেক ইফতারের সময় কিছু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করা হয়। [আহমেদ]

৯। রমজানের উমরার সাওয়াব হজ্জের সমান।[বুখারি ও মুসলিম]

১০। কেয়ামতের দিনে মদ্ধস্থতা

রাসুলুল্লাহ বলেছেনঃ সিয়াম ও কুরআন এমন দুই মধ্যস্ততা প্রদানকারী যারা কেয়ামতের দিনে আল্লাহ্র বান্দাদের পক্ষে কথা বলবে। সিয়াম বলবেঃ হে রব, আমি ওকে দিনের বেলায় খাবার ও কামনা থেকে দূরে রেখেছি, আমাকে ওর পক্ষে মধ্যস্ততা করতে দিন। কুরআন বলবেঃ হে রব, আমি ওকে রাতের বেলায় ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, আমাকে ওর পক্ষে মধ্যস্ততা করতে দিন। এবং তাদের মধ্যস্ততা গ্রহন করা হবে। [আহমেদ]

রমজান কি নয়

১। রমজান অন্য এগারো মাসের গাফলতির খেসারতের মাস না। রমজানে ইবাদত করলে কেউ বাকি বছরের জন্য ইবাদত থেকে ছুটি পেয়ে যায় না।

২। রমজান দাওয়াতের আর খাওয়াদাওয়ার মাস না, ঠিক তার উলটো।

৩। রমজান কেনাকাটার মাস না। এর অমূল্য মুহূর্তগুলোর সবটাই কাজে লাগান আল্লাহ্র ইবাদতের জন্য।

রমজানে করনীয়

১। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (বাধ্যতামূলক)। কেউ যদি প্রথম সিরি পাড় না করে দ্বিতীয় সিরিতে উঠার চেষ্টা করে, তা কি সম্ভব? নামাজ পড়াটা অত্যন্ত জরুরী।

২। রোযা (বাধ্যতামূলক)

৩। কুরআন পাঠ ও কুরআনের অর্থ ও তাফসির নিয়ে পড়াশোনা

৪। দোয়াঃ একজন রোজদার যখন ইফতার করে, তখন তার দোয়া ফেরত যায় না। [ইবন মাজাহ]

৫। সাদাকাঃ

আল্লাহ্র রসূল সবচেয়ে মুক্তহস্ত ছিলেন, কিন্তু তার সাদাকা সবচেয়ে বেড়ে যেত রমজান মাসে। [সহি মুসলিম]

যে একজন সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে, সে সিয়াম পালনকারীর সমান সাওত্তাব পাবে। [তিরমিযি]

৬। তারাবি ও কিয়ামুল লায়ল (রাতের নামাজ)

৭। ইস্তিগফার করা (আল্লাহ্র কাছে মাফ চাওয়া)।

৮। রাসুলুল্লাহ্ র উপর দুরুদ পাঠ

৯। ই'তিকাফ: রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুলুল্লাহ ইতিকাফ করতেন। [সহি মুসলিম]

১০। উমরা

রমজানে পরিহার করতে হবে

সব ধরনের হারাম কাজ।

রাসুলুল্লাহ বলেছেন, যেই ব্যাক্তি মিথ্যা, খারাপ কাজ ও অন্যের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকে না, তার ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত থাকার (অর্থাৎ সিয়ামের) আল্লাহ্র কোন প্রয়োজন নেই। [সহি বুখারি]

রোজা ভঙ্গ হয় না এমন কয়েকটি কাজ

  1. রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা ভাঙে না। তবে স্মরণ হওয়া মাত্রই পানাহার ছেড়ে দিতে হবে।
  2. চোখে ওষুধ-সুরমা, মাথায় বা শরীরে তেল লাগালে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করলেও অসুবিধা নেই।
  3. অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙ্গবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
  4. মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না। অনুরূপভাবে ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না।
  5. স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
  6. চোখের দু’ এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তবে তা যদি গলার ভেতর চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
  7. সুস্থ অবস্থায় রোযার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে যায় তাহলে রোযা নষ্ট হবে না।
  8. রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত বের করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।
  9. রাত্রে স্ত্রীসহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে না পারলেও রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কোনো ওযর ছাড়া, বিশেষত রোযার হালতে দীর্ঘ সময় অপবিত্র থাকা অনুচিত।
  10. বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েয। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া যাবে না। আর তরুণদের যেহেতু এ আশঙ্কা বেশি থাকে তাই তাদের এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
  11. শুধু যৌন চিন্তার কারণে বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, সব ধরনের কুচিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ আর রোযার হালতে তো তা আরো বড় অপরাধ।
  12. কামভাবের সাথে কোনো মহিলার দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়া-কর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেওয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কু-দৃষ্টি তো গুনাহ। যা রোযা অবস্থায় আরো ভয়াবহ। এতে ঐ ব্যক্তি রোযার ফযীলত ও বরকত থেকে মাহরূম হয়ে যায়।

এসব বিষয়ে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অনেকেই অজ্ঞতাবশত এগুলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করে থাকেন। ফলে এসবের কোনো কিছু ঘটে গেলে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করেন। আবার কেউ কেউ এসব থেকে বেঁচে থাকার জন্যে অযথা কষ্ট করেন। আশা করি, ছোট এ পোস্টের মাধ্যমে উভয় শ্রেণির ভুল দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।