
নামাজ/নামায/সালাত - বাংলা ইসলামিক কুইজ
ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। একজন মানুষ মুসলিম পরিচয় লাভের জন্য সর্ব প্রথম তাকে ইমান আনতে হবে। আর সেই ইমানটা হলো আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় তার কোনো শরিক নেই, মুহাম্মাদ সা: তার নবী ও রাসূল। এর পরই নামাজের স্থান। নামাজ শব্দটিকে আরবিতে বলা হয় সালাত।
সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ দোয়া, তাসবিহ, রহমত তথা দয়া, ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় বলা হয় ‘নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট নিয়মে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইবাদত করার নামই সালাত।
রাসূলুল্লাহ সা: যখন মিরাজে গমন করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেন রাসূল সা: ও তার উম্মতের ওপর। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বমোট ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন।
নামাজ একটি ফরজ তথা আবশ্যক ইবাদত, সেই প্রসঙ্গে আল্লাহপাকের বর্ণিত কুরআনের কিছু আয়াতÑ ‘যারা অদৃশ্যের বিষয়গুলোতে ইমান আনে এবং নামাজ কায়েম করে’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৩)। ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো; জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৪৩)। ‘হে নবী! আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের বলুন, নামাজ কায়েম করতে’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৩১)। ‘তোমরা লোকদের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামাজ আদায় করবে’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৮৩)। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তুমি বলে দাও, আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় তোমাদের মুখমণ্ডল স্থির রেখো’ (সূরা আরাফ, আয়াত-২৯)। ‘অতএব, আল্লাহকে সিজদা করো এবং তার ইবাদত করো’ (সূরা নাজম, আয়াত-৬২)।
নামাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪৫) ‘যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি এরূপ সৎকর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করি না’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১৭০)। ‘মুমিনরা নামাজ আদায় করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ মেনে চলে, এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৭১)।
মানুষের জীবনে কোনো বিপদ-আপদ এলে একজন প্রকৃত মুমিন বান্দার উচিত ধৈর্য্য ধারণ করা ও আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং অবশ্যই তা নামাজের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাজের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৫৩)। ‘অশান্তি বা গোলযোগের সময় হলে পায়ে হেঁটে অথবা বাহনে চড়ে যেভাবেই সম্ভব নামাজ পড়ো। আর যখন শান্তি স্থাপিত হয়ে যায় তখন আল্লাহকে সেই পদ্ধতিতে স্মরণ করো, যা তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন, যে সম্পর্কে ইতঃপূর্বে তোমরা অনবহিত ছিলে’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৯)। ‘নামাজ কায়েম করো এবং তাঁর নাফরমানি করা থেকে দূরে থাকো। তাঁরই কাছে তোমাদের সমবেত করা হবে’ (সূরা আল আনয়াম, আয়াত-৭২)।
‘বলো, আমার নামাজ, আমার ইবাদতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য’ (সূরা আল আনয়াম, আয়াত-১৬৩)। ‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ কায়েম করো’ (সূরা ত্বহা, আয়াত-১৪।
নামাজের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসূল সা: বলেছেন ‘নামাজ বেহেশতের চাবি’। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে তার বান্দার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। আর এ জন্যই একজন মুসলিমের জীবনে নামাজের গুরুত্ব অনেক, কারণ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় ইবাদত হলো নামাজ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞাসা করলাম, (হে আল্লাহর রাসূল) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘নামাজ’। (বুখারি ও মুসলিম)
নামাজ এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে কুফর এবং ইমানের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। কোন ব্যক্তি ইমানদার আর কোন ব্যক্তি কাফির তার স্পষ্টত ফারাক হলো নামাজ। কারণ মুমিন ব্যক্তি যেকোনো অবস্থাতেই প্রত্যহ পাঁচবার নামাজ আদায় করবে, আর কাফির ব্যক্তি নামাজ থেকে দূরে থাকে।
এ সম্পর্কে জাবির রা: বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সা: নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, কুফর ও ইমানের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা।’ (সুনানে তিরমিজি-২৬১৮, সহিহ ইবনে মাজাহ-১০৭৮, মুসলিম)
হুসায়ন ইবনে হুরায়স রহ. বুরায়দা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমাদের এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল হলো সালাত। যে সালাত ছেড়ে দিলো সে কুফরি করল।’ (সুনানে নাসায়ি-৪৬৪, সহিহ ইবনে মাজাহ-১০৭৯)
ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, নামাজ সর্বোপরি সব জীবনের জন্যই একটি কল্যাণকর ইবাদত। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সব বান্দাকে সঠিকভাবে নামাজ আদায়ে তৌফিক দান করুক, আমিন।