সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-06-12 05:26:10   92  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ TContent
☰Fullscreen

Table of Content:

১৮ ও ১৯. ঐ একই সূরার ১০২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:

অথচ তারা সেই সব জিনিষকে মানতে শুরু করল, শয়তান যা সোলায়মানের রাজত্বের নাম নিয়ে পেশ করতে ছিল। প্রকৃত পক্ষেঃ সোলায়মান (আঃ) কখনই কুফরী অবলম্বন করেননি। কুফরী অবলম্বন করেছে সেই শয়তান গণ যারা লোকদেরকে যাদু শিক্ষা দান করতে ছিল। বেবিলনের হারুত ও মারুত ২ ফেরেস্তাদের প্রতি যা কিছু নাযিল করা হয়েছিল। তারা উহার প্রতিই বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। অথচ তারা (ফেরেস্তারা) যখনই এই জিনিসের শিক্ষা দিত তখন প্রথমেই এই কথা বলে স্পষ্ট ভাষায় হুশিয়ার করে দিত যে, দেখ আমরা কিন্তু নিছক একটা পরীক্ষা মাত্র। তোমরা কুফরীর মধ্যে নিমজ্জিত হয়ো না।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা: শয়তান মানুষকে বিপদগামী, পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ করায় সাধারণতঃ দুটি উপায়ে যথাঃ

(১) শয়তানের একটা কাজ হচ্ছে হাজারও যুক্তি ও পন্থার মাধ্যমে অন্যায়

কাজের উপকারীতা দেখান।

(২) আর যুক্তি ও পন্থার মাধ্যমে ভাল কাজের অপকারীতা প্রমাণ করে দেখানোর চেষ্টা করে। এভাবেই শয়তান লোকদেরকে বিপথগামী করে।

সোলায়মান (আঃ) এর যুগেও শয়তান লোকদের এভাবে প্রচার করতেছিল যে যাদুতো একটা ভাল বিদ্যা। এ বিদ্যাতো খোদ আল্লাহর নবী হযরত সোলায়মান (আ এর ছিল তিনি নিজেই একজন বড় যাদুকর ছিলেন। শয়তানের এই মিথ্যা প্রচারণার জবাবে আল্লাহ বল্লেন, সোলায়মান (আঃ) কুফরী করেননি, অর্থাৎ যাদু হচ্ছে কুফরী। এ শজ তিনি আল্লাহর নবী হয়ে করতেই পারেন না। বরং কুফরী করতেছিল শয়তানরা। এখানে সেই সব মানুষকেও শয়তান বলা হয়েছে যারা যাদুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি সাধন করতো। তারা যাদু করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করতো। একটা সুখের সংসারকে ভেঙ্গে চুরমান করে দিত।

এ সময় আল্লাহ নবীর মাধ্যমেও যাদুর অপকারীতা সম্পর্কে আল্লাহ লোকদের সাবধান করতে পারতেন। কিন্তু তাতে এমন কিছু কথা নবীর মুখ দিয়ে বের হওয়া লাগত যা কোন নবীর মুখে শোভা পায় না। তাই যাদুর অপকারীতা সম্পর্কে লোকদের হুশিয়ার করার জন্য বেবিলনে হারুত ও মারুত নামে দুই ফেরেস্তাকে পাঠান, তারা প্রথমেই বলে নিলেন যে আমরা কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত পরীক্ষামাত্র। তারা লোকদের যাদু শিক্ষা দিতেন কিন্তু যতক্ষণ না তারা ওয়াদা করতো যে, আমরা যাদু শিখে তা কোন খারাপ কাজে লাগাব না ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের যাদু শিক্ষা দিতেন না।

যেমন একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি ধরুনঃ আমার নিজের ব্যাপারেই একটা কথা বলে থাকি যে, আল্লাহর যত প্রকার গাছ পালা সৃষ্টি করেছেন তার সব কিছুই মানুষের উপকারের জন্যে কিন্তু এমনও গাছ আছে যে গাছের পাতাটা বোটা থেকে ছিড়লেই টপটপ করে ঐ গাছের রস পড়তে থাকে। তার মাত্র ৫ ফোটা রস যদি বিষাক্ত সাপে কামড়ান কোন রুগীকে খাইয়ে দেয়া যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিষের ক্রীয়া নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু যদি এমন লোককে খাওয়ান যায় যাকে বিষাক্ত সাপে কামড়ায় নাই। তাহলে সে উর্দ্ধে ১ ঘন্টা জীবিত থাকতে পারবে তার পর মৃত্যু ঘটবেই। আমি বলি যদিও সে গাছটা আমার চেনা আছে তবুও আমি বলব না। কারণ, যদি বলি তাহলে যার সঙ্গে শত্রুতায়ী আছে তাঁকে ৫ ফোটা রস যে কোন খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে দিলে ১ ঘন্টার মধ্যে সে মরে যাবে। তবে এই গাছ আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে মারার জন্য নয়, বরং বিষাক্ত সাপে কাউকে কামড়ালে তাকে বাঁচানোর জন্যই। আমি বলি যদি কেউ আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পরে যে আমাকে শিখিয়ে দিন আমি এর দ্বারা লোকের উপকার করব এবং কখনও কারো ক্ষতি করব না। তবে তাকে আমি শিখিয়ে দিতে পারি। এরপর বহু লোকই এসে আমার কাছে ওয়াদা করেছে যে আমাকে শিখিয়ে দিন আমি মানুষের উপকারই করব, এবং কারুরই কোন ক্ষতি করব না। এর পরও আমি তা কাউকে শিখিয়ে দেই না। আমার যতদূর মনে পড়ে তাতে মনে হয় সারা জীবনে বোধ হয় ৪/৫ জন লোককে শিখিয়ে দিয়েছি যাদের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে যে এ দিয়ে সে কারো ক্ষতি করবে না, তাকেই শিখিয়ে দিয়েছি।

হারুত ও মারুত ঠিক এইভাবে লোকের কাছ থেকে আগে আঙ্গিকার আদায় করে তারা বলেছে যে এই কথা বল্লে শয়তান তার উপর খুব খুশি হয়ে যায় তখন সে যা চায় (যাদু মন্ত্রের মাধ্যমে) শয়তান তাকে তা দেয়। কারণ শয়তান মানুষের সব ধরণের ক্ষতির পথ পন্থা জানে। (যাদু এই যে এমন কুফরী কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করায় যা মুখ দিয়ে যে কোন ব্যক্তি উচ্চারণ করলে শয়তান তার প্রতি খুশি হয়ে যায় এবং যাদুকর ঐ মন্ত্র পড়ে যা চায় শয়তান তা করে দেয়। এই হলো যাদুর আসল হাকীকত) তাহলে কোন কথা বল্লে শয়তান খুশী হবে যে কথাটা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা লাগে অথচ তা কুফরী কথা। এই জন্যে মানুষের ঈমান পরীক্ষার জন্যে কোন কথার দ্বারা কোন প্রকার যাদু করা যায় তা শিক্ষা দিলেন ফেরেস্তাদের মাধ্যমে, নবীর মাধ্যমে নয়।

এরপর অঙ্গিকার করে যাদু শিখে সে যদি পরের ক্ষতি করে তাহলে সে যে যদি পরের ক্ষতি করে ও কুফরী করবে তাও ফেরেস্তাদ্বয় তাদেরকে পূর্বে বলে দিয়েছেন এবং অঙ্গিকার নিয়েছেন যে তারা কোন ক্ষতি করবে না।

এভাবে কোন মন্ত্রের দ্বারা কি ক্ষতি করা যায় তা তো মানুষ মানুষের নিকট থেকেই শিখে তাদিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো। কিন্তু আল্লাহ ফেরেস্তা পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমে বলে দিলেন যে এ মন্ত্রের দ্বারা এই ক্ষতি করা যায়। কিন্তু তোমরা এ সব কাজ করো না, তাহলে তাতে কুফরী হবে এবং পরকালে জাহান্নামী হবে। এই হলো এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ব্যাখ্যা।