ইবলিস কে নিয়ে ৮ নং শিক্ষা

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-06-12 09:52:40   78  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ TContent
☰Fullscreen

Table of Content:

৮ নং শিক্ষা: আল্লাহ কেন পরীক্ষায় ফেলেন এই শিক্ষাটাও আমাদের সঠিক ভাবে অনুধাবন করা উচিত এবং এটাও চিন্তা করে দেখা উচিত যে বহু ঈমানদার লোকদের দেখি তারা কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। এসব খটকা মনে মাঝে মাঝে উদয় হয়। কাজেই এ খটকাও দূর করা দরকার। এবার এদুটো বিষয়ের উপর কিছু চিন্তা করা যাক।

১. আমাদের যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি পরীক্ষা ছাড়াই কাউকে ১ম বিভাগে পাশ করান হয় আর কাউকে ফেল করিয়ে দেয়া হয়। এরপরে যদি ঐ শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা যায় যে আপনি এভাবে কাউকে ১ম বিভাগে কাউকে ২য় বা ৩য় বিভাগে পাশ করালেন আর কাউকে ফেল করালেন এর কারণ কি? তিনি যদি বলেন যে ওরা ১০ বছর একটানা আমার কাছে পড়েছে তাই আমি জানি কে কেমন ছেলে এবং জানি পরীক্ষা নিলে কে কেমন ফল পেত। আমার জানার ভিত্তিতেই আমি বিনা পরীক্ষায় কাউকে পাশ করিয়েছি আর কাউকে ফেল করিয়েছি। তাহলে কোন ছাত্রই শিক্ষকের এ যুক্তি গ্রহণ করতো না তারা বলত আপনি পরীক্ষা নিয়েই দেখতে পারতেন আমাদেরকে কেমন রেজাল্ট করতে পারি। তখন শিক্ষককে অবশ্যই লা জবাব হতে হতো।

এই জন্যই পরীক্ষার বিধান রয়েছে। ঠিক তেমনই আল্লাহও বিনা পরীক্ষায় কারো মর্যাদা বেশী কারো মর্যাদা কম দিলে কিয়ামতের দিন বিচারের মাঠে আল্লাহকে কেউ ন্যায় বিচারক হিসাবে মানবেনা, আপনীও মানবেন না আমিও মানব না, এই জন্যই আল্লাহর পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর পরীক্ষা মানুষের আমলের দ্বারা এবং তাকে কোন ফেতনার ভিতর ফেলেই তার আমলেরও ঈমানের যাচাই বাছাই আল্লাহ করেন।

এরপরও একটা কথা থেকে যায়। তাহচ্ছে এই যে টেষ্ট পরীক্ষায় পাশ না করলে তার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয় না। আর টেষ্টে পাশ করলেই যে ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করবে তারও কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এই জন্যে মানব সমাজে যেমন টেষ্ট পরীক্ষা আছে তেমন আল্লাহর নিকটও টেষ্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। যেমন ইব্রাহিম (আঃ) সর্ব প্রথম চিন্তার বিশুদ্ধতার পরীক্ষা দিয়ে যখন উতরে গেলেন। অর্থাৎ তারকা চাঁদ সূর্য কেউযে দেবতা হতে পারে না এটা কোন শিক্ষক তাঁকে শেখান নি, এটা তাঁর নিরপেক্ষ চিন্তা দ্বারা বুঝতে পেরেই আল্লাহকে বললেন “ইন্নি অজ্জিহাতু অজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাচ্ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।"

অর্থাৎ বর্তমান সামাজের সবগুলো মানুষ সৃষ্টি কর্তা সম্পর্কে যে ভুল চিন্তার মধ্যে রয়েছে আমি তার থেকে পৃথক হয়ে একনিষ্ঠভাবে তারই দিকে আমার মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আসমান ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে আমি একাই এ সমাজের ভুলচিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে পড়লাম। আমি এখন থেকে আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। এইটাই ছিল হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর টেষ্ট পরীক্ষার ফল। এরপরই আগুনে যাওয়ার মত পরীক্ষা, সদ্য প্রসূত সন্তান ও স্ত্রীকে নির্বাসনের ব্যবস্থা এবং ফাইনাল পরীক্ষা হলো ছেলে কুরবানীর পরীক্ষা।

এসব পরীক্ষায় তিনি পাশ করলেন। কিন্তু ইবলিস ফাইনাল পারীক্ষায় এমনভাবে ফেল করলো যে তা একেবারে চরম ফেল। আল্লাহ যদি টেষ্ট পরীক্ষার পরে আদম (আঃ) কে সিজদা করার হুকুম দিয়ে ফাইনাল পরীক্ষার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে ইবলিসের মধ্যে অহংকার ছিল ওটা চাপা-ই রয়ে যেত এবং যে অহংকারীদের থেকে আল্লাহ বেহেস্তকে পাক রাখবেন তা আল্লাহ পারতেন না। ইবলিসের মত চরম অহংকারীকেও বেহেস্তো দিতে হতো এবং বেহেস্তে গিয়ে বেহেস্ত নাপাক করে ফেলত। আর যে অহংকারীদের জন্যে আল্লাহ দোজখ তৈরী করে রেখেছেন সেই দোজখ ঐ অহংকারীকে ধরতে পারত না। এই জন্যে আল্লাহ পাক তাকে এমন পরীক্ষার সম্মুখীন করলেন যে পরীক্ষায় তার অন্তরের ভিতরের গোপন অহংকার প্রকাশ হয়ে পড়ল। এইটাই আল্লাহর বিজ্ঞেচিত ব্যবস্থা।

শয়তান পারাচাত

এরপর লক্ষনীয় যে, কোন কাজ না দিলে কাউকে পরীক্ষা করা যায় না, আর যারা কোন কাজ নিতে চায় না তারা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়েই বেহেস্তে যাওয়ার সার্টিফিকেট পেতে চায়, যা আল্লাহর বিধানের খেলাফ।

উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি কথা বলি যেমন ধরুন আপনি কিছু লোকের প্রশংসা করেছেন এভাবে যে-

১. যায়েদ এত ভাল লোক যে সে জীবনেও কোন মেয়ে ছেলের বা কোন মহিলার দিকে নজর করে দেখেনি, এটা অবশ্যই প্রশংসার কথা।

২. আর বললেন খালেদ জীবনেও কোনদিন মিথ্যা কথা বলেনি, এটাও তার প্রশংসার কথা।

৩. বললেন আমর জীবনেও কোনদিন গান শোনেনি, এটা অবশ্যই তার প্রশংসার কথা।

৪. বললেন তারেক জীবনেও কারো কাছ থেকে নয়া পয়সাও ঘুষ খায়নি এটাও তার প্রশংসার কথা।

৫. বললেন হারেস জীবনেও কাজে ফাকি দেয়নি এটাও তার প্রশংসার কথা। কিন্তু এর এটাও প্রশংসার কথা হবে না যদি এমন হয় যে-

১. যাবেদা একজন জন্মঅন্ধ কাজেই মেয়ে লোক দেখেনি এটা তার জন্য প্রশংসার কাজ হতো যদি তার দৃষ্টিশক্তি থাকতো। জন্মঅন্ধের জন্যে এটা কোন প্রশংসার ব্যাপার নয়।

২. খালেদ একজন বোবা, সে কথাই বলতে পারে না, কাজেই সে মিথ্যা বলেনি এটা তার জন্যে কোন প্রশংসার কথা নয়, যদি বাকশক্তি থাকত সে মিথ্যা না বলত তবেই হতো তার জন্য প্রশংসার কথা।

৩. আর আমর একজন বধির কাজেই তার গান না শোনা কোন প্রশংসা পাওয়ার ব্যাপার নয়।

৪. তারেক কোনদিনও এমন কোন পোষ্টে চাকুরী করেনি যেখানে চাকুরি করলে ঘুষ তার সামনে আসতো। কাজেই সে যে ঘুষ খায় না তা প্রমাণ হতো যদি তাকে কেউ ঘুষ দিতে যেত আর যদি তা না নিত। তাহলেই এটা তার প্রশংসার ব্যাপার হতো।

৫. হারেস তার জীবনেও কোনদিন কোন কাজের দায়িত্ব নেয়নি কাজেই সে কাজে ফাঁকি দেয়নি এটা তার জন্যে কোন প্রশংসার কথা নয়, এটা প্রশংসার কথা হতো যদি কোন কাজের দায়িত্ব নিয়ে তাতে ফাঁকি না দিত তাহলেই।

ঠিক তেমনই যে ইসলামকে কায়েম করার জন্য কোন দায়িত্ব নেয়নি সে টেষ্ট পরীক্ষা দিল না, কাজেই আল্লাহ তার ফাইনাল পরীক্ষাও নিবেন না, আর এ দেখে মনে করা উচিত হবে না যে, এ লোকটা খুব দ্বীনদার পরহেজগার লোক। দ্বীনদার পরহেজগার হিসেবে তখনই সে প্রমাণিত হতো যখন দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব নিত, তবে টেষ্ট পরীক্ষাও তার সামনে আসত, এরপর টেষ্টে এলাউ হলে ফাইনাল পরীক্ষাও তার সামনে আসত, এরপর প্রমাণ হতো যে সে কি বেহেস্তের সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য না কি দোজখের সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহ মানুষকে ঘরের কোনে বা মসজিদের কোনে বসে জীবন যাপন করতে বলেননি! বলেছেন কাজ করতে এবং কাজের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে যে সে কি প্রতিফল পাওয়ার যোগ্য।

ইবলিসের ইবাদতে কোন ফাকিবাজী ছিলনা, বহুত ইবাদত বন্দেগী করেছে। কিন্তু যখনই বাস্তব পরীক্ষার সম্মুখীন করা হলো তখনই তার দীর্ঘ জীবনের ইবাদত-বন্দেগীর আসল গুমোর ফাঁস হয়ে গেল।

শুধু যদি মসজিদের কোনায় বসে আল্লাহর জিকির করলে আর যথারীতি নামায রোযা করলে বেহেস্তের সার্টিফিকেট পাওয়া যেত তাহলে রাসূল (সাঃ) কে-

১. হিজরত করা লাগতো না।

২. তায়েফের বাবলা বনে মার খেয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতে হতো না।

৩. শীবে আবু তালেবে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হতো না এবং গাছের পাতা, ঘাস, উটের শুকনো চামড়া ইত্যাদি খাওয়া লাগত না।

৪. ওহুদের যুদ্ধের মাঠে দাঁত ভাঙ্গা লাগত না। এমনকি তাঁর জীবনে কোন বিপদ আপদই আসত না যদি তিনি সমাজের সর্বত্র ইসলাম কায়েমের দাবী না তুলতেন। ঠিত তেমনই আমরাও যদি ইসলাম কায়েমের দাবী তুলি তাহলে আমাদেরকেও এমন চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। যেমন হয়েছেন নবী রাসূলগণ। এসব বুঝতে হলে মনকে একেবারেই ধুয়ে মুছে নিরপেক্ষ করে নিতে হবে। নইলে এ সব কিছুই মাথায় ধরবে না এবং মনে রাখতে হবে যে শয়তান আমাকে চার দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। আপনি আপনার নিজের মনদিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন এ পর্যন্ত পড়ে আসার পর শয়তান আপনার মনে এমন সংঘাতিক মারনাস্ত্র নিক্ষেপ করবে যে তার হাত থেকে আপনাকে আত্মরক্ষা করা অত্যান্ত কঠিন হয়ে পড়বে। যেমন শয়তান অবশ্যই আপনার মনের মধ্যে এসে এই ওয়াস ওয়াসা দেবে যে পাড়লে তো এতক্ষণ বুঝলে কিছু?

দেখ তো লেখকটা কে? সে কোন দলেন লোক, যে যত কথাই বলুক না কেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে তোমাকে তার দলে টানার চেষ্টা করবেই। কাজেই ওর কথা শুনোনা, তুমি যদি নিজেকে অপবিত্র করার হাত থেকে বাঁচতে চাও তাহলে কোন ঝুঁকি ঝামেলার ভিতর না গিয়ে পীর সাহেবের কাছে মুরিদ হয়ে বা অমুকদের সাথে মিশে এমন ভাবে ইসলামের কাজ করবে যেন জীবনেও কোন দিন কোন বিপদের সামনে না পড়েই বেহেস্তে যাওয়া যায়। এভাবে যদি ইবলিস কাউকে বুঝিয়ে নিতে পারে তাহলে তার আমি কি উপকার করে দিতে পারব লেখর মাধ্যমে বা ওয়াজের মাধ্যমে? তাকে আল্লাহর দয়ার উপর সোর্পদ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কাজেই আমি আবারও বলছি মনকে নিরপেক্ষ করুন। আল্লাহর দেয়া মহামূল্যবান বিবেককে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর মত কাজে লাগান তাহলে অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য পাবেন এবং শয়তানের বেড়াভেঙ্গে বেহেস্তের রাস্তায় বেরিয়ে আসতে পারবেন।