আরবদের সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় যে, প্রাচীন কালে তারা দীনে ইবরাহীম (আ)-এর ধারক-বাহক ছিল এবং তাদের ভূখণ্ডেই আল্লাহ্র সর্বপ্রথম ঘর নির্মিত হয়। কিন্তু নবুওয়াত ও আম্বিয়ায়ে কিরামের সঙ্গে কালের দূরত্ব এবং আরব উপদ্বীপে বৃত্তাবদ্ধ হবার কারণে তারা খুবই নিম্নস্তরের পৌত্তলিকতার মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল যাদের দৃষ্টান্ত ভারতবর্ষের মূর্তিপূজক ও মুশরিক ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেত না। তারা শিরক ও মূর্তি পূজার ক্ষেত্রে বহু দূর এগিয়ে গিয়েছিল এবং এক আল্লাহর পরিবর্তে বহু উপাস্য দেবতায় তারা বিশ্বাস করত । এসব স্বনির্মিত উপাস্য দেবতা গোটা সৃষ্টি জগতের ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা বিধানে আল্লাহ্র সঙ্গে শরীক, কল্যাণ-অকল্যাণ ও লাভ-ক্ষতির মালিক এবং কাউকে জীবিত রাখার বা মারার ব্যক্তিগত ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করত। গোটা আরব জাতিগোষ্ঠী পৌত্তলিকতার মধ্যে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল । প্রতিটি গোত্র ও প্রতিটি এলাকার পৃথক উপাস্য দেবতা ছিল। যদি বলা হয় যে, আরবের প্রতিটি ঘরই একেকটি পুতুল গৃহে পরিণত হয়েছিল তবে তা অত্যুক্তি হবে না ।
স্বয়ং কা'বা শরীফের অভ্যন্তরে ও এর প্রাঙ্গণে, যে গৃহ হযরত ইবরাহীম (আ) কেবল আল্লাহ্ ইবাদত-বন্দেগীর জন্যই নির্মাণ করেছিলেন, তিন শত ষাটটি মূর্তি স্থান পেয়েছিল ।
তারা মূর্তিপূজা ও দেবদেবীর পূজা-অর্চনা থেকে অগ্রসর হয়ে শেষাবধি সব ধরনের পাথরকেই পূজা করতে শুরু করেছিল। তারা ফেরেশতা, জিন ও তারকারাজিকেও তাদের উপাস্য জ্ঞান করত । তারা বিশ্বাস করত যে, ফেরেশতারা আল্লাহ্র কন্যা সন্তান এবং আল্লাহর অংশীদার। এজন্য তারা এসবের শক্তি ও প্রভাবে বিশ্বাসী ছিল এবং এর পূজা-অর্চনাকে অপরিহার্য জ্ঞান করত ।
[তথ্যসূত্র: নবীয়ে রহমত - সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী - আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী অনূদিত - পৃষ্ঠা নম্বর: 51-52]