আমাদের সমাজে প্রচলিত শিরক :
আমাদের দেশের গ্রাম ও শহরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে শিরক, বিদ‘আত ও নানাবিধ কুসংস্কার। কুসংস্কারজনিত এমন শিরক রয়েছে যা এসব দেশের লোকজন ধর্মীয় বিধান বা নিয়ম মনে করেই পালন করে থাকে। যেমন-
- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো গায়েবী ক্ষমতায় বিশ্বাস করা: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জগতের উপর কর্তৃত্ব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা। যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, সে অলৌকিক শক্তির অধিকারী এবং অলৌকিকভাবেই কোন ঘটনা সংঘটিত করতে, বিপদগ্রস্তকে সাহায্য, রোজগারহীনকে রোজগার, সন্তানহীনকে সন্তান দিতে পারে, তাহ’লে সে মুশরিক বলে গণ্য হবে।
- জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত : জ্যোতির্বিদ্যা হ’ল সৌরজগতের বিভিন্ন অবস্থা পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা। জ্যোতির্বিদরা বলে থাকেন যে, অমুক নক্ষত্রের অমুক স্থানে অবস্থানের সময়ে যে ব্যক্তি বিবাহ করবে তার অমুক অমুক জিনিস অর্জিত হবে। যে ব্যক্তি অমুক নক্ষত্রের অমুক জায়গায় অবস্থানের ক্ষণে সফরে থাকবে সে ভাগ্যবান কিংবা ভাগ্যহীন হবে। যেমন- বর্তমানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের অর্থহীন-আজগুবি খবরাখবর পরিবেশন করা হয়, আর এগুলোর আশে-পাশে বিক্ষিপ্ত তারকারাজি, সরলরেখা, বক্ররেখা ইত্যাদি ধরনের অাঁকা-বাঁকা রেখা অংকিত থাকে। কিছু সংখ্যক মূর্খ ও দুর্বল ঈমানের মানুষও বিভিন্ন সময় জ্যোতিষীদের নিকট গমন করে থাকে এবং তাদেরকে স্বীয় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিবাহ-শাদী ইত্যাদি সম্পর্কেও প্রশ্ন করে থাকে।
- যাদু-টোনা, বাণ মারা, বধ করা: আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যদি কারো সাথে কারো শত্রুতা সৃষ্টি হয় এবং এ দু’পক্ষের কোন এক পক্ষ যদি দুর্বল হয়, তবে দুর্বল পক্ষ সাধারণত বিভিন্ন জিন সাধকের মাধ্যমে যাদুর আশ্রয় গ্রহণ করে সবল পক্ষকে বাণ মারে বা বধ করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সবল পক্ষও দুর্বল পক্ষকে সমূলে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে যাদুর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এভাবেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অধিকতর ভালবাসা সৃষ্টি, কারো সাথে শত্রুতা সৃষ্টি, কারো বিবাহ হ’তে না দেয়া, কারও প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি, কাউকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে চলে যাদুর খেলা। আর এখানেই শেষ নয় বরং এ সকল যাদুকে নিষ্ক্রিয় করতে পুনরায় আশ্রয় গ্রহণ করা হয় যাদুমন্ত্রের। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট তথা জিন, পীর, ওলী-আওলিয়া, এমনকি হিন্দুদের দেব-দেবী প্রভৃতির নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করা, নির্দিষ্ট দিনে লাল বা কালো মোরগ জিন বা ভূতের নামে রোগীকে যবহ করতে বলা কিংবা মিষ্টি ও ফলমূল গায়রুল্লাহর নামে এমনকি হিন্দুদের মন্দীরে অবস্থিত দেব-দেবীকেও মানত করা।