কেন এই আকীকার বিধান

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-06-06 02:05:15   26 Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ Table of Contents

Table of Content:


সন্দেহ নেই আকীকার রয়েছে নানা তাৎপর্য ও কল্যাণময় দিক। যেমন :

এক. অলীউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, ‘এতে আছে ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বহাল রাখেন, এর আমল করেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। এসব কল্যাণময় দিকের মধ্যে রয়েছে, যেমন :

ক. ভদ্রোচিত পন্থায় সন্তানের বংশ পরিচয় প্রকাশ করা। কারণ বংশ পরিচয় প্রকাশ না করলেই নয়। যাতে অনভিপ্রেত কথা না শুনতে হয়। আর এমনটি কখনো সুন্দর দেখায় না যে কেউ পথে পথে ঘুরে মানুষকে বলে বেড়াবেন যে এ আমার সন্তান।

খ. খ্রিস্টানদের যখন কোনো সন্তান হতো, তারা তাকে হলুদ পানি দিয়ে হরিদ্রা বানিয়ে দিত। তারা এর নাম দিয়েছিল ‘মা‘মুদিয়া’। তারা বলতো, এর মধ্য দিয়ে শিশুটি খ্রিস্টান হয়ে যাবে। এ নামের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখেই নাযিল হয়েছিল

﴿ صِبۡغَةَ ٱللَّهِ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ صِبۡغَةٗۖ وَنَحۡنُ لَهُۥ عَٰبِدُونَ ﴾ [البقرة :138]

‘(বল,) আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করলাম। আর রং এর দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক সুন্দর? আর আমরা তাঁরই ইবাদাতকারী।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৩৮}

অতএব তাদের ওই রীতির বিপরীতে হানীফীদেরও কোনো কাজ থাকা বাঞ্ছনীয়। যে থেকে বুঝা যাবে শিশুটি হানীফী তথা ইসমাঈল ও ইবরাহীম আলাইহিমাস সালামের অনুসারী। আর তাঁদের সন্তানদের মধ্যে বংশানুক্রমে আগত কাজগুলোর মধ্যে সবচে প্রসিদ্ধ পুত্র কুরবানীর বিষয়টি। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আপন পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাও তাঁকে নিয়ামতে ভূষিত করেন। তাঁর সন্তানকে মহান যবেহের মাধ্যমে মুক্ত করেন এবং তাঁদের বিধান হজকে দেন কিয়ামতাবধির জন্য স্থায়িত্ব, যার মধ্যে রয়েছে মাথা নেড়ে করা এবং পশু যবেহ করা। ফলে এই আকীকা ও মাথা মুণ্ডনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ হবে। হানীফী মিল্লতের প্রতি ইঙ্গিতও হবে আবার ঘোষণাও হবে যে সন্তানটির সঙ্গে এ উম্মতের কাজই করা হয়েছে।

গ. এ কাজ তাকে শিশুটির জন্মের পর মুহূর্তেই তাকে এ কল্পনায় নিয়ে যাবে যে সে তার সন্তানকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দিল, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম করেছিলেন তাঁর পুত্র ইসমাঈলকে।

দুই. সন্তান দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। কেননা, সন্তানই অন্যতম সেরা নেয়ামত। আর এ সন্তান হলো পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف :46]

‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা...।’ {সূরা আল-কাহফ, আয়াত : ৪৬}

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে সে সন্তান ভূমিষ্ট হলে আনন্দিত হয়। তাই মানুষের কাছে তার স্রষ্টা ও দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশই কাম্য। এ জন্যই হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু  থেকে সদ্য সন্তানের পিতা হওয়া ব্যক্তিকে অভিবাদন জানিয়ে এমন বলার কথা বর্ণিত হয়েছে,

باركَ اللّه لكَ في الموهوب لك وشكرتَ الواهبَ وبلغَ أشدَّه ورُزقت برّه.

‘তোমাকে যা দান করা হয়েছে আল্লাহ তাতে বরকত দিন। তুমি দানকারীর শুকরিয়া আদায় করো, সে তার বয়স পুরো করুক এবং তোমাকে তার পুণ্য প্রদান করা হোক।’ [মুসনাদ ইবনুল জা‘দ : ১৪৪৮; ইবন আদী, আল-কামেল : ৭/১০১; ইনব আবিদ্দুনইয়া, আল-ইয়াল : ১/২০১।][1]

অতএব বুঝা গেল, আকীকা হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও তাঁর নৈকট্য লাভের একটি উত্তম উপায়।

তিন. এতে আছে সন্তানের মুক্তি এবং তার বিনিময় প্রদান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইসমাঈল যবীহের বিনিময়ে ভেড়া কুরবানী দিয়ে দেন। জাহেলী যুগের লোকেরাও এটা করত এবং তারা এটাকে আকীকা বলত। আর শিশুর মাথায় তারা রক্ত লাগিয়ে দিত। ইসলাম সেই নিয়মটিকে সমর্থন করে এবং নবজাতকের মাথায় রক্ত লাগানো নিষিদ্ধ করে দেয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দেন যে, নবজাতকের জন্য যা-ই যবেহ করা হবে তা হতে হবে কুরবানী ও হজের হাদীর মতো ইবাদত হিসেবে। তিনি বলেন,

«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْ وَلَدِهِ فَلْيَنْسُكْ عَنْهُ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافَأَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ».

‘যে তার সন্তানের জন্য কোনো কুরবানী দিতে চায়, তবে যেন পুত্র হলে দুটি সমবয়সী ছাগল এবং কন্যা হলে একটি ছাগল গিয়ে ইবাদত (তথা আকীকা) করে।’ [নাসায়ী : ৪২২৯; শরহু মা‘আনিল আছার : ১০১৫।]

অর্থাৎ তিনি এটাকে কুরবানী হিসেবে করতে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যেটাকে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্য কুরবানী ও বিনিময় হিসেবে দিয়েছিলেন। আর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে অসম্ভব নয় যে তিনি সন্তানের জন্য, তার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ু জন্য এ বিধান দিয়েছেন। যাতে ওই যবেহকৃত পশুর প্রতিটি অঙ্গ এ শিশুর বিনিময় হয়।

চতুর্থ. এ কথার সংবাদ ও ঘোষণা দেয়া যে এ ব্যক্তি সন্তানের পিতা হয়েছে এবং সন্তানের নাম অমুক রেখেছে। ফলে তার পরিজন, প্রতিবেশি ও বন্ধ-বান্ধব এ সংবাদ জানবে এবং তাকে মোকারকবাদ দিতে আকীকায় উপস্থিত হবে। এতে করে মুসলিম ভাইদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হবে।

পঞ্চম. এতে ইসলামের সামাজিক দায়িত্বগুলোর একটি প্রকারের চর্চা হয়। কেননা, যিনি তার সন্তানের জন্য আকীকা হিসেবে পশু জবাই করেন এবং তা বন্ধ-বান্ধব, প্রতিবেশি ও গরীব-মিসকীনদের জন্য পাঠিয়ে দেন বা তাদের দাওয়াত করেন। আর এটি গরীবদের অভাব মোচন ও দারিদ্র হ্রাসে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে।

[1]. উল্লেখ্য, এর সবগুলো সূত্রই দুর্বল। এটি হাদীস নয়; একটি আছর, যা হাসান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। এটা হাদীস মনে না করে কেবল একটি দু‘আ হিসেবে পড়া যাবে। (নাববী, আল-আযকার : ১/৬৪৮)