- A তাকে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে উৎসাহিত করা
- B তাকে সহানুভূতির মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করতে শেখানো
- C তাকে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে বলানো
- D তাকে সর্বদা নিজের জন্য যুদ্ধ করতে শেখানো
সহানুভূতি হল এমন একটি গুণ যা মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং হিংসা কমাতে সাহায্য করে। শিশুকে সহানুভূতির মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করতে শেখালে তার মনোভাব অনেক বেশি ইতিবাচক এবং হিংসা মুক্ত হয়। যখন একটি শিশু অন্যদের অনুভূতিতে সহানুভূতি দেখাতে শেখে, তখন সে হিংসা, অসন্তোষ এবং অবহেলা থেকে দূরে থাকে। সহানুভূতি এবং মমত্ববোধ শিশুর ভিতরে অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গড়ে তোলে, যার ফলে তার আচরণ অনেক ভালো হয়। পাশাপাশি, এটি শিশুকে শেখায় যে পৃথিবীটা একসাথে কাজ করার জায়গা, যেখানে অন্যদের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি গুরুত্বপূর্ন।
একটি শিশুর সুস্থ মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য তাকে এমন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠতে দেয়া প্রয়োজন যেখানে ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশে শিশু তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে কাজ করতে শেখে এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অনুভূতি গড়ে তোলে। এটি হিংসার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। কঠোর বা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ শিশুর মধ্যে হিংসা বা বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে, যা তার সামাজিক দক্ষতা এবং সম্পর্কের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। একে অপরকে সহায়ক হতে শেখানো শিশুর বিকাশের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
হিংসার পরিবর্তে শিশুকে শান্তভাবে সমস্যা সমাধান করার জন্য উৎসাহিত করা অনেক বেশি ফলপ্রসূ। যখন শিশুকে শেখানো হয় যে, সমস্যাগুলির জন্য শান্ত এবং সহানুভূতিশীল সমাধান খোঁজা যায়, তখন তার মধ্যে শান্তিপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে ওঠে। শারীরিক শক্তি ব্যবহার বা অন্যদের প্রতি অবহেলা দেখানো তাকে আরও আক্রমণাত্মক এবং হিংসাপূর্ণ আচরণের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সঠিক পথে তার অনুভূতিগুলি প্রকাশ করার জন্য শিশুকে গাইড করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা তাকে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
সামাজিক দক্ষতা হল সেই গুণ যা শিশুর জীবনকে আরও সহজ এবং সুষ্ঠু করে তোলে। সামাজিক পরিস্থিতিতে শিশুকে সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য গাইডলাইন প্রদান তাকে অন্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করে। যখন শিশুটি জানে কীভাবে সামাজিক সম্পর্কগুলো পরিচালনা করতে হয় এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তখন সে হিংসার বদলে সুষ্ঠু সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝতে শিখে। একাকিত্ব বা সামাজিক পরিস্থিতি এড়ানো তাকে সামাজিক দক্ষতা থেকে বঞ্চিত করতে পারে, যা তার হিংসার প্রবণতা বাড়াতে পারে।
দয়া ও সহানুভূতি হল এমন গুণাবলি যা শিশুর মধ্যে সহানুভূতির অনুভূতি তৈরি করে এবং হিংসা কমাতে সাহায্য করে। যখন একটি শিশু অন্যদের প্রতি দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল থাকে, তখন সে অন্যদের কষ্ট অনুভব করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করতে শেখে। এটি তার মধ্যে সহানুভূতি এবং বন্ধুত্বের মূল্যবোধ গড়ে তোলে, যা হিংসার পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। শিশুদের এই গুণগুলি শেখানো তাদের সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করে এবং হিংসা থেকে বাঁচায়।
শিশুকে তার আবেগ শান্তভাবে প্রকাশ করতে শেখানো তার মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যখন একটি শিশু শিখে যে সে তার অনুভূতি শাস্তিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে, তখন তা হিংসা এবং রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবেগের প্রশিক্ষণ শিশুকে তার অনুভূতিগুলি সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে এবং শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম করে। এটি তাকে শিখায় যে কোনো পরিস্থিতিতে তার অনুভূতি সংযত রাখতে হয় এবং নিজের আবেগকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত না করতে হয়।
শিশুর মানসিকতা এবং আচরণ গড়ে উঠতে বড় ভূমিকা পালন করে যে ধরণের সিনেমা বা বই তারা দেখে। শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষণমূলক বই এবং সিনেমা শিশুকে মানুষের প্রতি সহানুভূতি, প্রেম এবং শান্তিপূর্ণ আচরণ শেখায়। এগুলি হিংসার পরিবর্তে ইতিবাচক মূল্যবোধ গড়ে তোলে এবং শিশুর মধ্যে সহানুভূতি এবং সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। হিংসা বা আতঙ্কপূর্ণ কনটেন্ট শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং তার আচরণকে হিংস্র করে তুলতে পারে।
বাবা-মা যদি তাদের আচরণে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন এবং শিশুকে ভাল আচরণে উৎসাহিত করেন, তবে শিশুর মধ্যে হিংসা কমানোর ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত কার্যকর। শিশুরা তাদের মা-বাবার আচরণ অনুসরণ করে, তাই যদি বাবা-মা শান্তিপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করেন, তবে শিশুও সেই আচরণ অনুসরণ করবে। শিশুকে ভালো আচরণে উৎসাহিত করার মাধ্যমে হিংসা মুক্ত এবং ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
আত্মবিশ্বাস একটি শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি তার আচরণের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। যখন একটি শিশু তার সাফল্য উদযাপন করতে শেখে, তখন তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সে হিংসা থেকে দূরে থাকে। আত্মবিশ্বাসী শিশু অন্যদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তার আচরণ আরও ইতিবাচক হয়ে ওঠে। আত্মবিশ্বাসী শিশুরা সাধারণত অন্যান্য শিশুদের থেকে হিংসা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম করে এবং সহানুভূতি ও সহযোগিতা শেখে।
যখন শিশুকে শেখানো হয় যে সমাজে সবাই সমান এবং একে অপরকে শ্রদ্ধা ও সমর্থন করা উচিত, তখন তাদের মধ্যে হিংসা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যায়। এটি তাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে এবং তারা সমাজে একে অপরের সাহায্যকারী সদস্য হতে শিখে। যখন একটি শিশু অন্যদের শ্রদ্ধা করে এবং সমান দৃষ্টিতে দেখায়, তখন তাদের মনোভাব খুব ইতিবাচক হয়ে ওঠে, যা সমাজে শান্তিপূর্ণ এবং হিংসা মুক্ত সম্পর্ক গড়ে তোলে।