- A গণতান্ত্রিক
- B একনায়কতান্ত্রিক
- C গোত্রপ্রধান
- D রাজতান্ত্রিক
আরবদের ঐতিহ্যগত সামাজিক ব্যবস্থা গোত্রপ্রধান ছিল, যেখানে গোত্রের প্রধান বা নেতা ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। গোত্রের লোকজন সাধারণত রক্তের সম্পর্ক দ্বারা সংযুক্ত থাকত এবং গোত্রীয় একাত্মতা এবং সম্পর্ক আরব সমাজের মূল ভিত্তি ছিল। গোত্রের প্রধানই গোত্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন এবং অন্যান্য গোত্রের সাথে বিরোধ মীমাংসার দায়িত্ব পালন করতেন। আরবের পূর্ব-ইসলামিক যুগে সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রধানত গোত্রনির্ভর ছিল। ইসলাম আসার পর এই গোত্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, তবে আরব সমাজে গোত্রের গুরুত্ব অপরিবর্তিত ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের মূল অধিবাসী হিসেবে আরব জাতি পরিচিত। তারা এই অঞ্চলের পুরোনো বাসিন্দা এবং এদের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। আরব জাতি বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল, এবং তাদের সমাজ ব্যবস্থা গোত্রীয় কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ইসলাম পূর্ববর্তী সময় থেকেই আরব জাতির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিল। কুরআন নাজিল হওয়ার পর এবং ইসলামের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আরব জাতির প্রভাব বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য এখনও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে।
আদনানী আরবরা ইবরাহীম (আঃ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বড় পুত্র এবং তাঁর বংশধরদের মধ্যে থেকেই ‘আদনানী আরবদের উদ্ভব হয়। ‘আদনানী আরবরা ইরাক থেকে আগত এবং তাদের বংশেই ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্ম হয়। তাদের মূলত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশজ শাখার পরিচয় দেওয়া হয়। এদের মাধ্যমে আরবদের এক বিশেষ অংশের সৃষ্টি হয়, যারা ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আদনানী আরবরা ইরাক থেকে আগত ছিলেন। ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর হিসেবে এদের প্রথম নিবাস ইরাক ছিল। এখান থেকেই তাদের বংশধারার বিস্তার ঘটে এবং তাদের মধ্যে থেকে ইসলামি নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্ম হয়। ইরাক থেকে আগত আদনানী আরবরা ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্ম ‘আদনানী আরবদের বংশে হয়েছিল। এরা ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর এবং তাদের বংশধারার মধ্যেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে। আদনানী আরবরা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গোত্র ছিল এবং তাদের মধ্যে থেকেই ইসলামের প্রচার শুরু হয়।
বায়তুল মুক্বাদ্দাস, যা ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়, এটি কা‘বাগৃহের চল্লিশ বছর পর আদম-পুত্রগণের হাতে নির্মিত হয়েছিল। এটি মূলত সেই সময়ের একটি পবিত্র স্থান ছিল, যেখানে বহু ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল। তবে এটি পরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পৌত্র ইয়াকূব বিন ইসহাক (আঃ) কর্তৃক নির্মিত হয়। অতঃপর দাউদ ও সুলায়মান (আঃ) কর্তৃক পুনর্নির্মিত হয়। ইবরাহীমপুত্র ইসমাঈল-এর বংশধরগণ মক্কা এলাকা আবাদ করেন। তাঁরাই বংশ পরম্পরায় বায়তুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণ, হাজী ছাহেবদের জান-মালের হেফাযত এবং তাদের পানি সরবরাহ, আপ্যায়ন ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন।
ইয়াকূব (আঃ)-এর অপর নাম ছিল ইস্রাঈল, যা আরবি ভাষায় ‘إسرائيل’ হিসেবে পরিচিত। এই নামের অর্থ 'আল্লাহর দাস' বা 'আল্লাহর প্রতিনিধি'। ইয়াকূব (আঃ) একজন মহান নবী ছিলেন, যিনি আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর জীবনযাত্রা ও শিক্ষা মুসলমানদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ইসলামে ইয়াকূব (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের কাহিনী একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে।
আরবে মুস্তা’রিবা : এরা হচ্ছেন ঐ আরব সম্প্রদায় যারা ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধারা থেকে আগত। এদেরকে আদনানী আরব বলা হয়।
আরবে ‘আরিবা : এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত গোত্র যারা ইয়াশজুব বিন ইয়া‘রুব বিন ক্বাহত্বানের বংশোদ্ভূত। এদেরকে ক্বাহত্বানী আরব বলা হয়।
আরবে আরিবা সম্প্রদায়কে ক্বাহত্বানী আরব বলা হয় কারণ তারা ইয়াশজুব বিন ইয়া‘রুব বিন ক্বাহত্বানের বংশোদ্ভূত।