- A পারসিক
- B কুর্দি
- C আরব
- D ইহুদি
মধ্যপ্রাচ্যের মূল অধিবাসী হিসেবে আরব জাতি পরিচিত। তারা এই অঞ্চলের পুরোনো বাসিন্দা এবং এদের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। আরব জাতি বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল, এবং তাদের সমাজ ব্যবস্থা গোত্রীয় কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ইসলাম পূর্ববর্তী সময় থেকেই আরব জাতির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিল। কুরআন নাজিল হওয়ার পর এবং ইসলামের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আরব জাতির প্রভাব বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য এখনও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে।
ক্বাহত্বানী আরবরা ইয়ামনের অধিবাসী ছিলেন এবং এরা ইয়া‘রাব বিন ইয়াশজাব বিন ক্বাহত্বানের বংশধর ছিলেন। ক্বাহত্বানী আরবরা নিজেদের "আল আরাবুল আরিবা" বা মূল আরব হিসেবে পরিচিত করত। তাদের বংশ পরিচয় ক্বাহত্বান থেকে শুরু হয়ে ইয়ামনের দিকে বিস্তৃত হয়েছিল। আরবদের ইতিহাসে ক্বাহত্বানী বংশ অন্যতম প্রধান এবং পুরোনো আরব বংশ হিসেবে স্বীকৃত। তারা ইয়ামনে বসবাস করত এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী গোত্রের উৎপত্তি হয়েছিল।
ক্বাহত্বানী আরবরা মূলত ইয়ামনের অধিবাসী ছিলেন। তারা আরবের প্রাচীন এবং প্রভাবশালী এক জাতি হিসেবে বিবেচিত হত। তাদের নিবাস ছিল আরব উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে, যা বর্তমানে ইয়ামন নামে পরিচিত। ক্বাহত্বানী আরবরা আরবদের মূল জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল এবং তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি আরব সমাজে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রাচীন আরব গোত্রের উৎপত্তি হয়েছিল।
আদনানী আরবরা ইবরাহীম (আঃ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। ইসমাঈল (আঃ) ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বড় পুত্র এবং তাঁর বংশধরদের মধ্যে থেকেই ‘আদনানী আরবদের উদ্ভব হয়। ‘আদনানী আরবরা ইরাক থেকে আগত এবং তাদের বংশেই ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্ম হয়। তাদের মূলত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশজ শাখার পরিচয় দেওয়া হয়। এদের মাধ্যমে আরবদের এক বিশেষ অংশের সৃষ্টি হয়, যারা ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্ম ‘আদনানী আরবদের বংশে হয়েছিল। এরা ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর এবং তাদের বংশধারার মধ্যেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটে। আদনানী আরবরা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গোত্র ছিল এবং তাদের মধ্যে থেকেই ইসলামের প্রচার শুরু হয়।
ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, বায়তুল্লাহ বা কা‘বাগৃহ প্রথম নির্মাণ করেন হযরত আদম (আঃ)। আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম মানব এবং ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে মানবজাতির প্রথম নবী। কা‘বাগৃহকে পৃথিবীর প্রথম ইবাদতের স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে কা‘বাগৃহটি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এবং তার পুত্র ইসমাঈল (আঃ) মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করেন। বায়তুল্লাহ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান এবং এটি মুসলিমদের কিবলা হিসেবে গণ্য হয়, যার দিকে মুখ করে প্রতিদিন তারা নামাজ আদায় করে। কা‘বাগৃহের ইতিহাস মুসলিম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, বরং এটি ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু।
বায়তুল মুক্বাদ্দাস, যা ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়, এটি কা‘বাগৃহের চল্লিশ বছর পর আদম-পুত্রগণের হাতে নির্মিত হয়েছিল। এটি মূলত সেই সময়ের একটি পবিত্র স্থান ছিল, যেখানে বহু ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল। তবে এটি পরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পৌত্র ইয়াকূব বিন ইসহাক (আঃ) কর্তৃক নির্মিত হয়। অতঃপর দাউদ ও সুলায়মান (আঃ) কর্তৃক পুনর্নির্মিত হয়। ইবরাহীমপুত্র ইসমাঈল-এর বংশধরগণ মক্কা এলাকা আবাদ করেন। তাঁরাই বংশ পরম্পরায় বায়তুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণ, হাজী ছাহেবদের জান-মালের হেফাযত এবং তাদের পানি সরবরাহ, আপ্যায়ন ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন।
ইয়াকূব (আঃ)-এর অপর নাম ছিল ইস্রাঈল, যা আরবি ভাষায় ‘إسرائيل’ হিসেবে পরিচিত। এই নামের অর্থ 'আল্লাহর দাস' বা 'আল্লাহর প্রতিনিধি'। ইয়াকূব (আঃ) একজন মহান নবী ছিলেন, যিনি আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর জীবনযাত্রা ও শিক্ষা মুসলমানদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ইসলামে ইয়াকূব (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের কাহিনী একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে।
আরবে মুস্তা’রিবা : এরা হচ্ছেন ঐ আরব সম্প্রদায় যারা ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধারা থেকে আগত। এদেরকে আদনানী আরব বলা হয়।
আরবে আরিবা সম্প্রদায়কে ক্বাহত্বানী আরব বলা হয় কারণ তারা ইয়াশজুব বিন ইয়া‘রুব বিন ক্বাহত্বানের বংশোদ্ভূত।