ইমরানের কন্যা মারইয়াম
Table of Content:
ইমরানের কন্যা মারইয়াম
ইমরান আলাইহিস সালাম এর কন্যা মারইয়াম আলাইহিস সালাম কে আল্লাহ তাআলা সতীত্ব ও পবিত্রতার উচ্চ আসনে বসিয়েছিলেন। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন,
وَ مَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَنَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهِ مِنْ رُوحِنَا وَ صَدَّقَتْ بِكَلِمَتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِ وَكَانَتْ مِنَ الْقُنِتِينَ
(আল্লাহ আরো উদাহরণ পেশ করেন) ইমরান কন্যা মারইয়াম-এর, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম। আর সে তার রবের বাণীসমূহ ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যতা স্বীকার করেছিল এবং সে ছিল অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।” [১]
প্রিয় মুসলিম বোনেরা! অনুগ্রহ করে বলবেন না যে, আমি মারইয়াম নই, আমার পরিবার ইমরান আলাইহিস সালাম এর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয় বা আমার কাছে কোনো ফেরেশতা এসে আমার সতীত্ব, পবিত্রতার ঘোষণা দেননি। আমার সাথে কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটেনি যা মারইয়াম আলাইহিস সালাম এর সাথে ঘটেছিল। তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া অতি অলৌকিক ঘটনা ছিল ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَ هُدًى وَ رَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ )
"তাদের কাহিনিতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এগুলো তো কাল্পনিক কাহিনি নয়। বরং কুরআন হচ্ছে পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী ও প্রত্যেক বস্তুর বিস্তৃত বিবরণ এবং মুমিনদের জন্য হেদায়ত ও রহমত। [২]
আমরা বর্তমানে এমন এক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বাস করি যেখানে, অশ্লীলতা খুবই সহজলভ্য। লজ্জা-শরম ও হায়া উঠে যাচ্ছে সমাজ থেকে। আসুন আমরা জেনে নিই, সতীত্ব ও পবিত্রতার উজ্জ্বল নক্ষত্র মারইয়াম আলাইহাস সালাম এর ঘটনাটি।
বংশপরিচয়
বনী ইসরাঈলের মধ্যেও অনেক আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন। তারা ছিলেন খুবই ধার্মিক। ঈসা আলাইহিস সালাম-এর নানা ইমরানের পরিবার ছিল এমনই একটি পরিবার। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا قَالَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَنَ عَلَى الْعَلَمِينَ ) ذُرِّيَّةً بَعْضُهَا مِنْ بَعْضٍ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ )
"নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম, নূহ এবং ইবরাহীমের পরিবার ও ইমরানের পরিবারকে নির্বাচিত করেছেন। তারা ছিলেন একে-অন্যের বংশধর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।”[৩]
ইমরান আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন ইবাদতগুজার মানুষ। তিনি ছিলেন দ্বীনদার, নিবেদিতপ্রাণ ও আল্লাহমুখী। দাউদ আলাইহিস সালাম- এর বংশধর ছিলেন তিনি। ইমরানের পরিবারের তাকওয়ার কারণে আল্লাহ তাঁদেরকে ও তাঁদের বংশধরদেরকে তৎকালীন সমাজের নানাবিধ গুনাহ ও মন্দ বিষয় থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
ইমরানের স্ত্রী হান্নাহ বিনতু ফাকুদ ছিলেন একজন বন্ধ্যা নারী। একদিন তিনি দেখলেন, একটি মা পাখি তার ঠোঁট দিয়ে ছানাদের মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে হান্নাহ'র মধ্যে মাতৃত্ববোধ জেগে উঠল। তিনি মনে মনে ভাবলেন, 'হায়! আমারও যদি এমন সন্তান থাকত!' কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এটা ছিল অসম্ভব। কারণ, সন্তানধারণের বয়স অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছেন তিনি। তবুও তিনি আশা হারাননি। আল্লাহর কাছে দুআ করলেন যেন তাঁকে একটি সন্তান দেয়া হয়। আর আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের ডাকে সাড়া দিয়েই থাকেন! আল্লাহ তাঁর দুআ কবুল করলেন আর বললেন, 'কুন ফায়া কুন!' মানে, কোনো কিছু ঘটানোর জন্য আল্লাহ তাআলা শুধু বলেন, 'হও, আর তা হয়ে যায়!'
একদিন ইমরানের স্ত্রী তাঁর গর্ভে শিশুর নড়াচড়া অনুভব করলেন! কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনি ওয়াদা করলেন, এই সন্তানকে আল্লাহর দ্বীনের খিদমতে উৎসর্গ করবেন তিনি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِذْ قَالَتِ امْرَأَتُ عِمْرَانَ رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَمَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
"(আর স্মরণ করুন!) যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে আমার রব! আমার গর্ভে যা আছে, তাকে আমি তোমার নামে উৎসর্গ করলাম, দুনিয়ার সকল কাজ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।”[৪]
ইমরানের স্ত্রী মনে-মনে চেয়েছিলেন, তাঁর যেন একটি পুত্র-সন্তান হয়। তাহলে এই সন্তানকে তিনি মাসজিদুল আকসার খিদমতে নিয়োজিত করতে পারবেন। এই মাসজিদ ছিল জেরুজালেমে। আর জেরুজালেম ছিল ইবাদত-বন্দেগির কেন্দ্রস্থল, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ এলাকা।
[১] সূরা তাহরিম, ৬৬: ১২।
[২] সূরা ইউসুফ, ১২:১১১।
[৩] সূরা আলে ইমরান, ৩: ৩৩-৩৪।
[৪] সূরা আলে ইমরান, ৩: ৩৫।