তাহারাত কুইজ প্রতিযোগিতা

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-02-20 10:48:19   31 Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details 41 MCQ
☰ Table of Contents

Table of Content:


পরিচ্ছন্নতা

পরিষ্কার, সুন্দর ও পরিপাটি অবস্থাকে পরিচ্ছন্নতা বলে । শরীর, মন ও অন্যান্য ব্যবহার্য বস্তু সুন্দর ও পবিত্র রাখা, ময়লা-আবর্জনা ও বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে মুক্ত রাখাকে পরিচ্ছন্নতা বলা হয়। দুর্নীতিমুক্ত, ভেজালমুক্ত ও ঝামেলামুক্ত অবস্থাও পরিচ্ছন্নতার অন্যতম রূপ । পরিচ্ছন্নতার আরবি প্রতিশব্দ হলো নাজাফাত । ইসলামি শরিয়তে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্থে সাধারণত তাহারাত শব্দটিই ব্যবহৃত হয়ে থাকে । ইসলামি পরিভাষায় শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতে দেহ, মন, পোশাক, খাদ্য, বাসস্থান ও পরিবেশ পরিষ্কার ও নির্মল রাখাকে তাহারাত বলা হয় ।

গুরুত্ব

মানবজীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম । পরিচ্ছন্ন থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য । নোংরা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকা ইমানদারগণের স্বভাব নয়। বরং মুমিনগণ সদা সর্বদা পরিষ্কার ও পবিত্র থাকেন । রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন,

অর্থ : “পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক ।” (মুসলিম)

প্রকৃত ইমানদার হওয়ার জন্য পবিত্র থাকা অপরিহার্য । কেননা পবিত্রতা ব্যতীত কোনো ইবাদত কবুল হয় না । সালাত আদায়ের জন্য মানুষের শরীর, পোশাক ও সালাতের স্থান পরিষ্কার ও পবিত্র হতে হয় । এগুলো নাপাক থাকলে সালাত শুদ্ধ হয় না । তেমনি আল-কুরআন তিলাওয়াতের জন্যও পাক-পবিত্র হতে হয় । অপবিত্র অবস্থায় আল-কুরআন স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ । আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, অর্থ : “আর এটা (আল-কুরআন) পবিত্রগণ ব্যতীত আর কেউ স্পর্শ করবে না।” (সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯)

পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের সবাই ভালোবাসে । আল্লাহ তায়ালাও তাদের ভালোবাসেন, পছন্দ করেন । আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

إنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২২)

ইসলামি শরিয়তে পরিষ্কার-পবিত্র থাকার জন্য ওযু, গোসল ও তায়াম্মুমের বিধান প্রদান করা হয়েছে । দৈনিক পাঁচবার সালাতের পূর্বে ওযু করার দ্বারা মানুষের সকল অপবিত্রতা ও অপরিচ্ছন্নতা দূরীভূত হয় ।

দৈহিক পরিচ্ছন্নতা

দৈহিক পরিচ্ছন্নতা মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । দৈহিক পরিচ্ছন্নতা হলো হাত, পা, মুখ, দাঁত ও গোটা শরীর পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকা । কারও হাত, পা, মুখ, দাঁত, তথা গোটা শরীর অপরিষ্কার ও ময়লাযুক্ত থাকলে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হয় । এসব ময়লা, দুর্গন্ধ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার । কেননা অপরিচ্ছন্ন মানুষকে সকলে ঘৃণা করে । গোসল করার দ্বারা আমরা নিজেদের শরীর পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি । শরীরের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করতে পারি ।

রাতের বেলা ঘুমানোর পর সকালে আমাদের মুখমণ্ডল পরিচ্ছন্ন, সতেজ ও নির্মল থাকে না । চোখে পিঁচুটি লেগে থাকে, দাঁত দুর্গন্ধযুক্ত হয় । খাদ্য গ্রহণ করলেও আমাদের দাঁতে ময়লা লাগে । সুতরাং দাঁত মুখ সদা- সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হয় । রাসুলুল্লাহ (স.) দাঁত পরিষ্কারের জন্য মিসওয়াক করতেন । আমাদেরও তিনি মিসওয়াক করতে উৎসাহিত করেছেন । তিনি বলেছেন, “আমার উম্মতের কষ্টের আশঙ্কা না করলে আমি তাদের প্রত্যেক সালাতের আগে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।” (বুখারি)

আমাদের অনেকে চুল ও নখ বড় রাখে । এতে দেখতে খারাপ লাগে । নখ বড় হলে এতে ময়লা জমে । অতএব, নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে । চুল পরিপাটি করে রাখতে হবে । এটাই ইসলামের বিধান । মহানবি (স.) একবার এলোমেলো চুলের এক লোককে দেখে বললেন, এ ব্যক্তি কি চুল ঠিক করার কিছু পেল না?

প্রস্রাব-পায়খানা করে ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়াও ইসলামের বিধান। এজন্য প্রথমে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করতে হবে । এখন সহজলভ্য টিস্যু ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে । অতঃপর পানি ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হতে হবে । মহানবি (স.) বলেছেন, “নিশ্চয় প্রস্রাবই বেশির ভাগ কবর আযাবের কারণ হয়ে থাকে ।” (মুসনাদে আহমাদ)

অপর একটি হাদিসে এসেছে, “তোমরা প্রস্রাবের ছিটা-ফোঁটা থেকে বেঁচে থাক । কারণ কবরের বেশিরভাগ আযাব প্রস্রাবের ছিটা-ফোঁটা থেকে বেঁচে না থাকার কারণে হবে ।” (দারাকুতনি)

দৈহিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার গুরুত্ব সীমাহীন । সুতরাং আমরা প্রতিদিন গোসল করব । পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে ভালোভাবে ওযু করব । আমাদের হাত, পা, নখ, চুল, দাঁত, চোখ সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব ।

পোশাকের পরিচ্ছন্নতা

দৈহিক পরিচ্ছন্নতার মতো পোশাক পরিচ্ছদের পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কাপড়-চোপড় পরিষ্কার থাকলে দেহ মন ভালো থাকে, কাজে উৎসাহ পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, অর্থ : “আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন ।” (সূরা আল মুদ্দাস্সির, আয়াত ৪)

 

আমাদের প্রিয়নবি (স.) সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন । কাপড়-চোপড় অল্প মূল্যের হতে পারে, ছেঁড়া ফাটা হতে পারে, কিন্তু তা পরিষ্কার হওয়া উচিত । এজন্য সবসময় কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা

আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, হাট- বাজার, স্কুল-মাদ্রাসা, দোকানপাট, রাস্তাঘাট এসবই আমাদের পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের কর্তব্য । পরিবেশ পরিচ্ছন্ন না থাকলে নির্মল জীবন-যাপন করা সম্ভব নয় ।

যেখানে সেখানে কফ-থুথু, মলমূত্র ফেললে পরিবেশ নোংরা হয়। বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট, ময়লা-আবর্জনা, রাসায়নিক বর্জ্য ডাস্টবিনে না ফেলে রাস্তাঘাটে ফেলা উচিত নয় । এতে রাস্তাঘাট ময়লা হয় । নোংরা- আবর্জনা আমাদের শরীরে ও পোশাকে লাগে । নানা রকম রোগজীবাণু জন্মে । আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি ।

পানি ও বায়ু পরিবেশের অন্যতম উপাদান । এ দুটো মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমরা পানি পান করি, পানিতে গোসল করি, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করি । সুতরাং পানি ও বায়ু সবসময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার । পানিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না । অনেকে পানিতে মলমূত্র ত্যাগ করে । এটা ঠিক নয় । আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় মলত্যাগ করব । ফলে আমাদের বায়ুও দুর্গন্ধযুক্ত হবে না ।

পরিবেশ আমাদের । এ পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদেরই । সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক হব । আমাদের ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখব । সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাব । যানবাহন, বাসস্টেশন, ফেরিঘাট, খেলার মাঠ, হাট-বাজারও পরিষ্কার রাখা দরকার । আমরা এ ব্যাপারেও সচেষ্ট হব । এলাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাহায্য করব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা শরীর, পোশাক ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ৫টি করে মোট ১৫টি বাক্য খাতায় লিখে শিক্ষককে দেখাবে ।