প্রাগৈতিহাসিক যুগ

Rumman Ansari   Software Engineer   2023-11-24 04:41:44   134  Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ TContent
☰Fullscreen

প্রাগৈতিহাসিক যুগ কাকে বলে?

লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের পূর্বের সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে। মানব ইতিহাসে যে অংশে কোন লিখিত বিবরণ নেই বা পাওয়া যায় না সেই সময়কালকে প্রাক-ইতিহাস বা প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে । প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিচারে প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে। তবে সাধারণ ভাবে ধরে নেয়া হয় মানুষ খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে লিখনপদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের পূর্বের এই সময়কাল হল প্রাগৈতিহাসিক যুগ।

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আদিম মানুষ পাথর দিয়ে হাতিয়ার বানাত। সেজন্য পাথরের যুগ মানুষের ইতিহাসের একটা বড়ো অংশ। পাথরের যুগকে সাধারণভাবে তিনটে পর্যায়ে ভাগ করা হয়। সেই প্রতিটা ভাগে পাথরের হাতিয়ারগুলির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাছাড়া আদিম মানুষের জীবনযাপনেও অনেক বদল ঘটেছিল।

  • • মানুষের সাংস্কৃতিক ইতিহাস বর্ণনা করেছেন ড্যানিশ ঐতিহাসিক পি. এফ. সুহম 1776 সালে।

  • • সি. জে. থমসেন 1836 সালে ড্যানিস মিউজিয়ামের একই বিষয়বস্তু নিয়ে একটি প্রদর্শনী করেন।

  • •লুব্বক (ফ্রান্স) প্রস্তর যুগকে পুনরায় পুরাতন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগে ভাগ করেন। গ্যাব্রিয়েল ডি মরটিলেট (একজন ফরাসী প্রত্নতত্ত্ববিদ) সাংস্কৃতিক পর্যায়গুলিকে কিছু ভাগে ভাগ করেন : -

    (1) পুরাতন প্রস্তর যুগ

    (2) মধ্য প্রস্তর যুগ

    (3) নব্য প্রস্তর যুগ

প্রাগৈতিহাসিক যুগ এর বিভাজন এইরুপ --

প্রস্তর পূর্ব যুগ( Eolithic Age) :

১০ লক্ষ খ্রীস্টপূর্ব থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়কাল। এ যুগের মানুষের মধ্যে পিকিং ও জাভা মানুষ উল্লেখযোগ্য। এ সময় মানুষ পাথরের ব্যবহারের সূচনা করে।

১. পুরনো পাথরের যুগ/ পুরোপলীয় প্রস্তর যুগ (paleolithic age) :

পোড়ানো পাথরের যুগকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন সময়ে বিভক্ত করেছেন। কোন কোন ঐতিহাসিক বলে থাকেন ৩ লক্ষ খ্রীস্টপূর্ব থেকে শুরু করে ১০ হাজার খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত সময় কালকে পুরোপলীয় প্রস্তর যুগ বলে। কোন কোন ঐতিহাসিক বলে থাকেন পুরোনো পাথরের যুগ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০ লক্ষ বছর থেকে খ্রিস্ট পূর্ব ১০ হাজার বছর ।

এ সময় হাতিয়ার বড়ো ও ভারী পাথরের, এবড়োখেবড়ো। শিকার করে ও বনের ফলমূল জোগাড় করে খেত।

এ সময় খোলা আকাশের নীচে কখনও বা গুহায় থাকত।

এ সময় মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী। তারা দলগত ভাবে শিকার করত। যাযাবর জীবন যাপন করলেও তারা অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে তুলেছিল। গাছের বাকল ও পশুর চামড়া দিয়ে শীত নিবারন করা শিখেছে। মানুষ এ সময় পাথরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শেখে।এ যুগের প্রধান আবিষ্কার আগুন।

২. মাঝের পাথরের যুগ/ মধ্যপ্রস্তর যুগ ( Mesolithic Age):

খ্রীস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দ থেকে আনুমানিক ৮,০০০ খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত সময় কাল। এসময় মানুষ পশুপালন শুরু করে। ডাল বাকলের ঘর তৈরি করতে শেখে। পাথরের সূক্ষ্ণ অস্ত্র তৈরি করতে শেখে। শিল্পকলার বিকাশ ঘটে।

হাতিয়ারের পাথর ছোটো হালকা ও ধারালো। শিকার করে ও বনের ফলমূল জোগাড় করার পাশাপাশি পশুপালন শুরু হয়।

গুহা থেকে বেরিয়ে ছোটো ছোটো বসতি বানানো শুরু।

৩. নুতন পাথরের যুগ / নবোপলীয় যুগ ( Neolithic Age) :

কোন কোন ঐতিহাসিক বলে থাকেন সময় কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮ হাজার থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার বছর।

হাতিয়ার অনেক হালকা ও ধারালো। নানারকমের হাতিয়ার পশুপালন ও কৃষিকাজ শুরু হয়। মাটির পাত্র বানানো শুরু।

যাযাবর জীবন ছেড়ে একটা অঞ্চলে স্থায়ী বসতি বানানো।

একে নবোপলীয় বিপ্লব নামেও অবিহিত করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মধ্যপ্রস্তর যুগের অবসানের পর খ্রীস্টপূর্ব ৭,০০০/৬,০০০/৫,০০০ অব্দে এর সূচনা এবং স্থানভেদে খ্রীস্টপূর্ব ৪,০০০/৩,০০০ অব্দে লিখন পদ্ধতি আবিস্কারের পর এর সমাপ্তি ঘটেছে। এ যুগের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল মানুষ এসময় কৃষি কাজের সূচনা করে। ফলে খাদ্য সংগ্রহকারী মানুষ এ যুগে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিনত হয় যা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লব। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা চাকার আবিষ্কার,মৃৎপাত্রের ব্যবহার, বয়ন শিল্পের বিস্তার, গ্রামের উদ্ভব, রাস্ট্রের উদ্ভব, শ্রেণিভেদ প্রথার সূচনা, স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি, বিনিময় প্রথা চালু, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার প্রথা চালু, নৌযান ও পালের ব্যবহার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সময়গুলিকে একত্রে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়েছে।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ

প্রাচীন প্রস্তর যুগ মধ্য প্রস্তর যুগ নব্য প্রস্তর যুগ
500,000-10,000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ 10,000 - 4,000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ 6,000-1,000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ

প্রাচীন প্রস্তর যুগকে পুনরায় তিনভাগে ভাগ করা যায়

নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর যুগ মধ্য প্রাচীন প্রস্তর যুগ উচ্চ শেষ দিককার প্রাচীন প্রস্তর যুগ
500,000- 100,000 খ্রীঃপূঃ 100,000-40,000 খ্রীঃপূঃ 40,000-10,000 খ্রীঃপূঃ

প্রাগৈতিহাসিক পর্যায়

প্রস্তর যুগ মুখ্য সংস্কৃতি / কৃষ্টি মুখ্য স্থান গুরুত্ব

নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর যুগ

আঁশ, তুষার কণা, ধারালো হাতিয়ার

কাশ্মীর, পাঞ্জাব, সমগ্র ভারত (সিন্ধুপ্রদেশ ও কেরালা বাদ দিয়ে)

মুখ্য জায়গা :- সোহন (পাঞ্জাব) সিংগ্রাউলী বেসিন (উত্তর প্রদেশ), ছোটনাগপুর (ঝাড়খন্ড), আসাম, নর্মদা, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক

হাতের কুঠার, নুড়ির অস্ত্র, লম্বভাবে দাঁড়িয়ে থাকা হোমোএরিকটাস্ (Homoerectus)-এর জীবাশ্ম হাতনাউড়ার (নর্মদার) তীরে পাওয়া গেছে - সোহন সংস্কৃতি (বর্তমানে পাকিস্তানে) অবস্থান করছে।
মধ্য প্রাচীন প্রস্তর যুগ ঘষিবার বস্তু / যন্ত্র নাভাসা (মহারাষ্ট্র), দিদওয়ানা (রাজস্থান), ভীমবেটকা (মধ্যপ্রদেশ), বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া (পশ্চিমবঙ্গ), নর্মদা উপত্যকা ইত্যাদি

বিভিন্ন ধরণের ধারালো ছুরি, বিদ্ধ করবার যন্ত্রের তীক্ষ্ণতা, ছিদ্র করিবার জন্য বিদ্ধ করার যন্ত্র, ঘষবার যন্ত্র (যেগুলি আঁশ বা তুষার কণা দিয়ে তৈরী হয়েছে)

-200 প্রস্তর এর তৈরী আশ্রয়স্থল ও গুহা ভীমবেটকা পাহাড়ের ওপর আছে, যেগুলিতে হাজারের ওপর চিত্র চিত্রিত আছে।

উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ তরবারি বা ছুরির ফলক এবং তামার উপর খোদাই করবার বাটালি বিশেষ অন্ধ্রপ্রদেশ (কুর্ণল, চিত্তোর) কর্ণাটক, কেন্দ্রীয় মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ডের মালভূমি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট

- নিয়ান্ডারথ্যাল মানুষের যুগ।

-আঘাত ও বধ করবার বল্লম, ছুরির ফলকের অস্ত্র (অন্ধ্রপ্রদেশের রেণুগুন্টায় পাওয়া গেছে)।

-কর্ণলে অস্থির তৈরী অস্ত্র /যন্ত্র পাওয়া গেছে।

মধ্য প্রস্তর যুগ

মাইক্রোলিথ সংস্কৃতি অথবা জ্যামিতিক অস্ত্র

কর্ণাটক, রাজস্থান (বেগর, তিলওয়ারা) গুজরাট (লনগঞ্জ), মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ (বিরভানপুর), উত্তর প্রদেশ (সরাই নাহর রাই)

-মাইক্রোলিথ (প্রযুক্তির এক বিশাল উন্নতি, যৌগিক বা মিশ্র যন্ত্রের আবির্ভাব)

-মানুষ তখনও বন্য ছিল, কিন্তু মৃৎপাত্র তৈরী (তিলওয়ারা) ও স্থায়ী বসতির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মানুষ তখনও শিকারী ও মৎস্যজীবি ছিল।

নব্য প্রস্তর যুগ

মসৃণ পালিশ করা অস্ত্রের / যন্ত্রের ব্যবহার

কাশ্মীর (বুর্জাহম, গুফক্রাল), আসাম (দাওজিলি হেডিং), মেঘালয়ের গাড়ো পাহাড়, বিহার (চিরান্ড), ভারতবর্ষের উপদ্বীপ, আমরি, কোটদিজি, মেহেরগড় ইত্যাদি।

- কৃষিজীবি সম্প্রদায় 

- রাজার পদ সামাজিক ব্যবস্থার ভিত্তি হয়ে গিয়েছিল।

- গভীর গর্তের ভিতর বাড়ী।

- খাদ্যদ্রব্য আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া হত। -

- কুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বাঁশ, অস্থির যন্ত্রের তৈরী বৃত্তাকার কুটীর, হাতের তৈরী মৃৎপাত্র ইত্যাদি পাওয়া গেছে।

- 'নব প্রস্তর যুগের বিপ্লব' বলা হয় এই যুগকে।

নৌকা তৈরী, ঘূর্ণমান তুলা ও পশমের ব্যবহার।

MCQ Available

There are 126 MCQs available for this topic.

126 MCQTake Quiz

No Questions Data Available.
No Program Data.
ইতিহাস

Stay Ahead of the Curve! Check out these trending topics and sharpen your skills.