ফেরেশতাদের দায়িত্বাবলী
Answer:
ফেরেশতাদের দায়িত্বাবলী
- তাদের মধ্যে কারো দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে রাসূলগণের কাছে ওহী পৌঁছানো। তিনি হচ্ছেন: আর-রুহুল আমীন জিব্রাইল আলাইহিস সালাম। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি জিব্রাঈলের শত্রু—কারণ সে আল্লাহ্র নির্দেশেই তোমার অন্তরে এই কুরআন নাযিল করেছে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ৯৭] তিনি আরও বলেন: “তা নিয়ে অবতরণ করেছে বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরাঈল) তোমার অন্তরে; যাতে করে তুমি সতর্ককারী হও।”[সূরা আশ-শুআরা, আয়াত: ১৯৩-১৯৪]
- তাদের মধ্যে কেউ বৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত এবং আল্লাহ্ যেখানে চান সেখানে বৃষ্টি দেয়া। তিনি হচ্ছেন মিকাঈল আলাইহিস সালাম। তাঁর রয়েছে কিছু সহকারী; যারা তিনি তার প্রভুর নির্দেশে তাদেরকে যা নির্দেশ দেন তারা সেটা পালন করে এবং বাতাস ও মেঘকে আল্লাহ্ যেভাবে চান সেভাবে পরিচালিত করে।
- তাদের মধ্যে কেউ শিঙ্গার দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হচ্ছেন ইস্রাফিল। কিয়ামত সংঘটনের সময় তিনি এতে ফুঁক দিবেন।
- তাদের মধ্যে কেউ আত্মাসমূহ কবজ করার দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হচ্ছেন মালাকুল মউত ও তার সহযোগীরা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “বলুন, তোমাদের (জান কবজের) জন্য নিয়োজিত মালাকুল মউত (মৃত্যুর ফেরেশতা) তোমাদের জান কবজ করবে। অতঃপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে।”[সূরা আস-সাজ্দাহ, আয়াত: ১১]
- তাদের মধ্যে কারো কারো দায়িত্ব হচ্ছে বান্দাকে সফরে ও সস্থানে, শয়নে ও জাগরণে এবং সর্বাবস্থায় সংরক্ষণ করা। এরাই হচ্ছেন- “মুআক্কাবাত”। যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন করে আর যে তা প্রকাশ করে এবং যে রাতে লুকিয়ে থাকে আর যে দিনে অবাধে বিচরণ করে (তাঁর কাছে) সবাই সমান। মানুষের জন্য তার সামনে ও পেছনে রয়েছে ‘মুআক্কাবাত’ (একের পর এক আগমনকারী ফেরেশতাবৃন্দ)। তারা আল্লাহ্র নির্দেশে তাকে পাহারা দিয়ে রাখে। আল্লাহ্ তো কোন জনগোষ্ঠীর অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর আল্লাহ্ যখন কোন জনগোষ্ঠীতে শাস্তি দিতে চান তখন কেউ তা ফেরাতে পারে না। তিনি ছাড়া তাদের কোন মিত্র নেই।”[সূরা আর-রাদ, আয়াত: ১০-১১]
তাদের মধ্যে কেউ রয়েছে বান্দার ভাল-মন্দ কর্ম সংরক্ষণকারী। এরাই হচ্ছে ‘কিরামান কাতেবীন’ (সম্মানিত লেখক ফেরেশতারা)। আল্লাহ্ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীগুলো তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে। তিনি বলেন: “তিনি তোমাদের জন্য রক্ষকদের পাঠান।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৬১] তিনি আরও বলেন: “নাকি তারা মনে করে যে, আমি তাদের গোপন কথা ও গোপন পরামর্শ শুনি না? অবশ্যই শুনি। অধিকন্তু আমার দূতগণ (ফেরেশতারা) তাদের কাছে থেকে সবকিছু লিখে রাখে”।[সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮০] তিনি আরও বলেন: “স্মরণ করুন, দুই গ্রহণকারী (ফেরেশতা) (একজন) ডানে ও (একজন) বামে বসে (তার আমল) গ্রহণ করছে। সে যে কথাই উচ্চারণ করুক (তা গ্রহণ করার জন্য) তার কাছে একজন সদাপ্রস্তুত প্রহরী রয়েছে”।[সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৭-১৮] তিনি আরও বলেন: “তবে তোমাদের ওপর অবশ্যই তত্ত্বাবধায়করা আছে (অর্থাৎ তোমাদের কাজকর্মের ওপর নজর রাখার জন্য ফেরেশতারা নিয়োজিত আছে); সম্মানিত লেখকেরা;”[সূরা আল-ইনফিতার, আয়াত: ১০-১১] - তাদের মধ্যে কেউ কেউ কবরের পরীক্ষা নেয়ার জন্য নিয়োজিত। এরা হলেন: মুনকার ও নাকীর। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন তার নিকট কালো বর্ণের ও নীল চোখবিশিষ্ট দুইজন ফেরেশতা আসেন। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার ও অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেন: তুমি এ ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে কী বলতে?... হাদিসটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
- তাদের মধ্যে কেউ রয়েছেন জান্নাতের প্রহরী হিসেবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর যারা তাদের প্রভুকে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা জান্নাতের কাছে আসবে এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। আর জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে: ‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা খুশী হও এবং চিরকাল থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর”।[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩৭]
- তাদের মধ্যে কেউ রয়েছেন জাহান্নামের প্রহরী। এদেরকে বলা হয় ‘যাবানিয়্যা’। এই যাবানিয়্যাদের প্রধান হচ্ছেন উনিশজন। আর তাদের দলপ্রধান হচ্ছেন: মালিক। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “কাফেরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নেওয়া হবে। অবশেষে যখন তারা তার কাছে আসবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং তার রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূল আসেননি, যারা তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাত এবং তোমাদেরকে আজকের দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে সতর্ক করত? তারা বলবে, হ্যাঁ, তবে কাফেরদের বিরুদ্ধে শাস্তির হুকুম চূড়ান্ত হয়ে গেছে”।[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৭১] তিনি আরও বলেন: “অতএব সে যেন তার সভাসদদেরকে (সাহায্যের জন্য) ডাকে। আমিও শীঘ্রই যাবানিয়্যাদেরকে ডাকব”।[সূরা আলাক্ব, আয়াত: ১৭-১৮] তিনি আরও বলেন: “আপনি কি জানেন, সাক্বার কী? তা বাঁচিয়েও রাখবে না, ছেড়েও দিবে না। মানুষকে দগ্ধকারী। এর প্রহরায় আছে উনিশজন ফেরেশতা। আমি ফেরেশতাদেরকেই জাহান্নামের প্রহরী করেছি। আর তাদের এ সংখ্যা নির্ধারণ করেছি কেবল কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যই; যাতে কিতাবীদের প্রত্যয় জন্মে, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।”[সূরা আল-মুদ্দাছ্ছির, আয়াত: ২৭-৩১] তিনি আরও বলেন: “তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক (জাহান্নামের রক্ষী)! আপনার প্রভু যেন আমাদের মৃত্যু ঘটান। (জবাবে) তিনি সে বলবে: আসলে তোমরা (এভাবেই এখানে) চিরকাল থাকবে।”[সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৭৭]
- তাদের মধ্যে কেউ জরায়ুতে বিদ্যমান ভ্রুণের দায়িত্বে নিয়োজিত। ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন আর তিনি হচ্ছে সত্যবাদী ও সত্যায়িত: “তোমাদের সৃষ্টির উপাদানকে নিজ মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়— চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয় অনুরূপ সময়ে। এরপর তা গোশতপিন্ডে পরিণত হয় অনুরূপ সময়ে। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করেন। তখন ফেরেশতা তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়। ফেরেশতাকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়: তার আমল, তার রিয্কি, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে; নাকি নেককার হবে। সেই সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতের অধিবাসীর আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করতে থাকে; অবশেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি জাহান্নামবাসীর কর্ম করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ও জাহান্নামের মাঝখানে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। তখনি ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করতে থাকে। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।”[ফাতহসহ সহিহ বুখারী (৩২০৮) ও সহিহ মুসলিম (২৬৪৩)]
- তাদের মধ্যে কেউ রয়েছেন আরশ বহনকারী। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “যারা আল্লাহ্র আরশ বহন করে এবং যারা চারপাশ ঘিরে থাকে তারা (সেই ফেরেশতারা) তাদের প্রভুর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তাঁর প্রতি ঈমান রাখে এবং মুমিনদের জন্য (তাঁর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। (তারা বলে) ‘হে আমাদের প্রভু! অনুগ্রহ ও জ্ঞান দ্বারা আপনি সবকিছু ধারণ করে আছেন। অতএব যারা তওবা করে ও আপনার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন’।”[সূরা গাফির, আয়াত: ৭]
- তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন পৃথিবীতে বিচরণকারী; যারা যিকিরের মজলিসগুলোকে খুঁজে বেড়ান। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যাঁরা আল্লাহর যিকিরে রত লোকেদের খোঁজে পথে পথে ঘুরে বেড়ান। যখন তাঁরা কোথাও আল্লাহর যিকরে রত লোকেদের দেখতে পান, তখন তারা একে অপরকে ডেকে বলে: তোমরা আপন আপন কাজ করার জন্য এগিয়ে এসো। তখন তাঁরা তাঁদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঘিরে ফেলেন নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত। তখন তাঁদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন (যদিও ফেরেশতাদের চেয়ে তিনিই অধিক জানেন) আমার বান্দারা কী বলছে? তখন তাঁরা বলে: তারা সুবহানাল্লাহ্, আল্লাহু আকবার, আলহামদু লিল্লাহ্ পড়ছে এবং আপনার স্তুতি করছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তাঁরা বলেন: হে আমাদের প্রভু, ওয়াল্লাহি! তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলেন: আচ্ছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তাঁরা বলেন: যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও অধিক পরিমাণে আপনার ইবাদত করত, আরও অধিক আপনার মাহাত্ম্য ঘোষণা করত, আরও অধিক পরিমাণে আপনার প্রশংসা করত এবং আরও অধিক পরিমাণে আপনারা পবিত্রতা বর্ণনা করত।
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ বলবেন: তারা আমার কাছে কী চায়? তাঁরা বলবে: তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞেস করবেন: তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন: আল্লাহ্র কসম! না। হে আমাদের প্রভু! তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করবেন: যদি তারা দেখত তবে তারা কী করত? তাঁরা বলবে: যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরও বেশি আগ্রহী হত, আরও বেশি সন্ধানী এবং এর জন্য আরও বেশি বেশি আকৃষ্ট হত। আল্লাহ্ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেন: তারা কীসের থেকে আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলবেন: জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন: তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দেবে: আল্লাহর কসম! হে আমাদের প্রভু! তারা জাহান্নাম দেখেনি।
তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা তা দেখত তাদের কী অবস্থা হত? তাঁরা বলবে: যদি তারা তা দেখত, তাহলে তারা তা থেকে আরও অধিক পলায়নপর হত এবং একে আরও বেশি ভয় করত। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন: আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি- আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবে: তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন: তারা এমন উপবেশনকারী যাদের মজলিসে উপবেশনকারী বিমুখ হয় না।[ফাতহুল বারীসহ সহিহ বুখারী (৬৪০৮)]
- তাদের মধ্যে কেউ আছে পাহাড়পর্বতের দায়িত্বে নিয়োজিত। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন: উহুদের দিনের চাইতে কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বললেন: আমি তোমার কওমের লোকদের পক্ষ থেকে যে নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়ার তা তো হয়েছি। সবচেয়ে বেশী কঠিন নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছি আকাবা (তায়েফের একটি স্থানের নাম)-এর দিন। যে দিন আমি নিজেকে ইবনে আবদে ইয়ালীল ইবনে আবদে কুলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিলাম তাতে তো সে সাড়া দেয়নি। তখন আমি এমন বিমর্ষ চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিব (একটি স্থানের নাম)-এ পৌঁছা পর্যন্ত আমার দুঃচিন্তা কাটেনি। এখানে এসে যখন আমি মাথা উপরের দিকে উঠালাম হঠাৎ দেখতে পেলাম এক টুকরা মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে তাকালে দেখলাম এর মধ্যে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আছেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন: আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে এবং যে উত্তর দিয়েছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার কাছে পাহাড়ের (দায়িত্বে নিয়োজিত) ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন যাতের করে আপনি এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা তাকে তা হুকুম করতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাক দিয়ে সালাম দিলেন। তারপর বললেন: হে মুহাম্মদ! বিষয়টি আপনার ইচ্ছাধীন; আপনি চাইলে আমি তাদের উপর আখশাবাইন (দুটো পাহাড়)-কে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: (না, তা নয়) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের ঔরশে এমন প্রজন্ম বের করে আনবেন যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে; তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।”[ফাতহুল বারীসহ সহিহ বুখারী (৩২২১)]
- তাদের মধ্যে কেউ রয়েছেন ‘আল-বাইতুল মা’মুর’ যিয়ারতের দায়িত্বে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যেমনটি ইসরা ও মেরাজের লম্বা হাদিসে এসেছে: তারপর আমাকে আল-বাইতুল মা’মুরে উঠানো হল। তখন আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: এটি আল-বাইতুল মা’মুর। প্রতিদিন এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা নামায আদায় করে। একবার যারা বের হয়ে যায় তারা আর ফিরে আসে না। অপর দল একই আমল করে।
- তাদের মধ্যে এমন কিছু ফেরেশতা আছে যারা কাতারবদ্ধ ক্লান্ত হয় না, দণ্ডায়মান বসে না, রুক ও সেজদারত; এর থেকে উঠে না। যেমনটি আবু যার (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না এবং আমি যা শুনি তোমরা তা শুন না। আসমান গোঙানির মত শব্দ করছে। তার শব্দ করাটা অযাচিত নয়। আসমানের এমন চার আঙ্গুল জায়গা নেই যেখানে কোন একজন ফেরেশতা আল্লাহ্র জন্য কপাল ঠেকিয়ে সেজদায় পড়ে নেই। আল্লাহ্র শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা কম হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং স্ত্রীদের সাথে বিছানায় মজা করতে না। বরং তোমরা আল্লাহ্র কাছে মিনতি করার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে আসতে।”[সুনানে তিরমিযি (২৩১২)]
সম্মানিত ফেরেশতাদের সম্পর্কে এটি একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদেরকে ফেরেশতাদের প্রতি ঈমানদার ও তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী বানিয়ে দেন।
আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হোক।
Related Articles:
This section is dedicated exclusively to Questions & Answers. For an in-depth exploration of প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান, click the links and dive deeper into this subject.
Join Our telegram group to ask Questions
Click below button to join our groups.