নবজাতক শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ কীভাবে ঘটে?

Rumman Ansari   2024-01-31   Developer   youth society > নবজাতক শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ কীভাবে ঘটে?   74 Share

নবজাতক শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ কীভাবে ঘটে?

মানুষের যাবতীয় ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক ক্রিয়াকলাপ, চলাফেরা, চোখে দেখা, কথা বলা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, বুদ্ধিমত্তা, বিবেক-বিবেচনা, নীতি-নৈতিকতা-সবকিছুই ১.৩ থেকে ১.৪ কেজি ওজনের মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি বিল্ডিং যেমন ভিত্তি বা পিলার অথবা ফাউন্ডেশনের ওপর নির্মিত হয়, আমাদের মস্তিষ্কও তেমনিভাবে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর নির্মিত হয়। এই নির্মাণ-প্রক্রিয়া শুরু হয় জন্মের আগে, মাতৃজঠরে এবং জীবনের প্রথম তিন বছর এই প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের কোষগুলো (নিউরন) হচ্ছে এক একেকটা 'ইট' যা ঘর তৈরির কাঁচামালের মতো। একটি শিশুর পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা, সামাজিক যোগাযোগ ও সংযোগের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অবকাঠামো তৈরি করে, এবং এর দ্বারা কোষগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ বা নেটওয়ার্ক স্থাপিত (weiring) হয়। মস্তিষ্কে কোষের সংখ্যা এবং তাদের প্রাথমিক বিন্যাস নির্ধারিত হয় জিনগতভাবে।

শিশুর ৬ বছর বয়সে মস্তিষ্কের আকার প্রাপ্তবয়স্কদের আকারের প্রায় শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগের সমান হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সচরাচর ১১ বছর বয়সে মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড় আকারে পৌঁছে যায় এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটে ১৪ বছর বয়সে। কৈশোরে মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য পুনর্বিন্যাস (remodelling) ঘটে এবং সবশেষে ২০ বছরের শুরুতে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে মস্তিষ্ক বিকাশের প্রক্রিয়া শেষ হয়।

একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয় ১০০ বিলিয়ন মস্তিষ্ক কোষ (নিউরন) নিয়ে, যা পূর্ণাঙ্গ মস্তিষ্ক গঠনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।১ বাড়ন্ত শিশুদের অভিজ্ঞতার আলোকে কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ (কানেকশন) তৈরি হয়, যা সিনান্স (Synapse) নামে পরিচিত। শুরুতে প্রতিটি কোষে ২৫০০-এর মতো কানেকশন বা সিনান্স থাকে, কিন্তু জন্মের দুই বছরের মধ্যে তা বেড়ে ১৫,০০০-এ উন্নীত হয়। অর্থাৎ মস্তিষ্কে কোষের সংখ্যা বাড়ে না, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সিনান্সগুলো মোটাতাজা হতে থাকে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে-জন্মের পরপর মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে এবং এই সময় একজন মানুষের দেহের ৯৭ শতাংশ শক্তি তার মস্তিষ্ক সচল ও সক্রিয় রাখতে ব্যয় হয়, অন্যদিকে ৪ বছর বয়সী একজন শিশুর ৪৪ শতাংশ শক্তি মস্তিষ্ক বিকাশের কাজে খরচ হয়ে থাকে। জীবনের প্রথম ১০ বছর মস্তিষ্কের নিউরন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নিউরাল নেটওয়ার্ক বা কানেকশন তৈরি করে, এরপরও মস্তিষ্ক বিকাশ থেমে থাকে না; কিন্তু এটি কীভাবে বিকশিত হবে, তা নির্ভর করে জীবনের প্রাথমিক বছরগুলোতে কীভাবে পিলার বা ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়

Baby Brain
Figure: Baby Brain

ছবি: জীবনের প্রথম তিন বছরে বিস্ময়কর দ্রুততায় মস্তিষ্ক কোষের মধ্যে কানেকশন বা সিন্যান্স তৈরি হয়। প্রথম দশকের বাকি অংশে, শিশুদের মস্তিষ্কে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি সিন্যান্স থাকে। শিশুর প্রারম্ভিক বয়সগুলোতে যে সিনান্সগুলো অব্যবহৃত থাকে, সেগুলো মস্তিষ্ক থেকে ঝরে পড়ে। তাই এই সময়টা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ-কারণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন-শিশুরা যেন প্রথম দুই বছর স্ক্রিনের (স্মার্টফোন, টিভি, ল্যাপটপ) সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে।

Source: Rethinking the Brain: New Insights into Early Development, Rima Shore

শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ কীভাবে হয়, তা নিয়ে নিউরোসায়েন্স ফিল্ডে অনেক গবেষণা হয়েছে। নতুন নতুন গবেষণার আলোকে মস্তিষ্ক বিকাশের ধারণাও পরিবর্তন হয়েছে, যা নিচের চার্টে সারমর্ম আকারে দেওয়া হলো।

মস্তিষ্ক বিকাশে পুরাতন ধারণা

মস্তিষ্ক বিকাশে নতুন ধারণা

মস্তিষ্কের বিকাশ হচ্ছে জিনগত (Gene centric), অর্থাৎ বাবা-মা থেকে জন্মগত ভাবে অর্জিত।

জিন এবং অভিজ্ঞতার আলোকে (Gene and environment centric) মস্তিষ্কের বিকাশ হয়।

জীবনের প্রথম তিন বছর একটি শিশু যে অভিজ্ঞতা লাভ করে, তা শুধু সীমিত পরিসরে পরবর্তী ধাপের মস্তিষ্ক বিকাশে প্রভাব ফেলে।

জীবনের প্রারম্ভিক অভিজ্ঞতা (০-৩ বছর) এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, তা বয়স্ক পর্যায়ে দক্ষতা অর্জনেও প্রভাব ফেলে। এ-সময়ের অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের গঠন এবং বিকাশের মৌলিক ভিত্তি দাঁড় করায়।

সন্তানের মা-বাবার সাথে অনুরাগ বা উষ্ণ সম্পর্ক (attachment) শিশুদের প্রাক থমিক বিকাশ এবং শেখার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

মায়ের অনুরাগ (attachment) শুধু একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করে না; বরং তা মস্তিষ্ক কোষগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন বা সার্কিট তৈরিতেও সরাসরি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

মস্তিষ্কের বিকাশ রৈখিক, অর্থাৎ মস্তিষ্কের বিকাশ (শিখন ও পরিবর্তন) শিশুকাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।

মস্তিষ্কের বিকাশ অরৈখিক, অর্থাৎ মস্তিষ্কের বিকাশ হয় নির্দিষ্ট সময়কালে (developmental window)।

কলেজ ছাত্রের তুলনায় শিশুর মস্তিষ্ক অনেক কম সক্রিয়।

তিন বছর বয়সী একটি মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের তুলনায় দ্বিগুণ সক্রিয় (দেহের ৯৭% শক্তি ব্যবহার করে)। এর সক্রিয়তা (৪৪%) বয়ঃসন্ধিকালে অনেক কমে যায়।