তাজমহল - কালজয়ী প্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন

Rumman Ansari   2024-06-09   Developer   competitive examination > তাজমহল   6 Share

তাজমহল

কালজয়ী প্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন

তাজমহল ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। সপ্তদশ শতকে আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে মোগল সম্রাট শাহজাহানের নির্মিত বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই তাজমহল। এটি প্রেমের এক অমর প্রতিমা হয়ে যমুনার তীরে দণ্ডায়মান হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। মোগল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। মমতাজের মূল নাম ছিল আরজুমান্দ বানু বেগম। এই আরজুমান্দ তাদের তৃতীয় কন্যা গওহর বানুর জন্মদানের সময় মৃত্যুবরণ করেন। অনেকের মতে, সম্রাজ্ঞী মৃত্যুবরণ করার পূর্বে সম্রাটকে তার শেষ ইচ্ছা হিসেবে বলেছিলেন, তার সমাধি যেন এমন স্থানে হয়, যার সৌন্দর্যে পুরো পৃথিবী অবাক হয়ে দেখবে। যদিও এটি ধারণা মাত্র। বলা হয় সম্রাট তার প্রিয় স্ত্রীর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন এবং তার ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে নির্মাণ করেন এই সমাধি। যার নাম দেওয়া হয় তাজমহল।

স্থপতি ও নির্মাণকাজ

তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ সালে। প্রায় ২১ বছর ২০,০০০ শ্রমিকের নিরলস প্রচেষ্টায় ১৬৫৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। যদিও মূল কাঠামো নির্মাণ করতে মাত্র ১০ বছর সময় লেগেছিল। বাকি এক যুগ ব্যয় হয়েছিল মার্বেল পাথরের কাজ এবং তাজমহল কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করতে। শিল্প- নৈপুণ্য সম্পন্ন একদল নকশাকার ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। অনেকে ওস্তাদ ঈসা সিরাজিকে তাজমহলের প্রধান স্থপতি হিসেবে দাবি করেছেন। বলা হয়, ঈসা সিরাজি তার স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি ভাস্কর্য বানিয়েছিলেন। সেটি দেখে সম্রাট শাহজাহানের পছন্দ হয় এবং তার আদলেই তৈরি করেন তাজমহল।

নির্মাণের উপকরণসমূহ ও নির্মাণ শ্রমিক

তাজমহল তৈরি হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে আনা বিভিন্ন দামি রত্ন ও পাথর দিয়ে। এসব নির্মাণসামগ্রী বহন করে। আনার জন্য ১,০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাজমহলের দেওয়ালে আটাশ মতান্তরে উনত্রিশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরের ওপর বসানো রয়েছে। এর ভিতর ও বাহিরের ক্যালিগ্রাফির চমৎকার কাজ আছে। মমতাজমহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি দেখা যায়। মমতাজ মহলের সমাধিক্ষেত্রের একপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপিতে অঙ্কিত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সূক্ষ্ম কারুকাজের মাধ্যমে মহলটিকে করা হয়েছে সৌন্দর্যমণ্ডিত। মহলের সামনেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন উদ্যান। তাজমহল সম্পর্কে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে- নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সম্রাট প্রতিটা শ্রমিকের হাতের কব্জি কেটে ফেলার নির্দেশ দেন, যাতে কেউ দ্বিতীয় তাজমহল তৈরি করতে না পারে। তবে এর কোনো বাস্তব ভিত্তি পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর অনেক স্থাপত্যকে ঘিরে এমন মিথ প্রচলিত রয়েছে। আরেকটি মিথ হচ্ছে- সম্রাট শাহজাহান কালো মার্বেল দিয়ে তাজমহলের মতোই আরেকটি সমাধি এর বিপরীতে অর্থাৎ নদীর অন্যপ্রান্তে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।

নান্দনিক সৌন্দর্য

তাজমহলে সুচতুরভাবে আলোকীয় বিভ্রম ব্যবহার করা হয়েছে। ঢোকার সময় মূল আঙিনায় তাজমহলকে বিশাল মনে হয়। এছাড়া এর চারটি। মিনার বাইরের দিকে একটু হেলানো হওয়ার পরও দেখলে মনে হয় যেন একদম সোজা। তাজমহল থেকে বের হওয়ার সময় প্রধান ফটক দিয়ে তাকালে মনে হয় এটি যেন ক্রমে ক্রমে বড় হচ্ছে। এর মূল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বাইরে থেকে। সাদা মার্বেল পাথরের দ্বারা নির্মিত হওয়ায় সূর্যের গতি পরিবর্তনের সাথে সাথে এর রংও বদলায়। একেক সময় ধারণ করে একেক রূপ। তাজমহলের পূর্ণিমা রাতের দৃশ্য সব থেকে আকর্ষণীয়। চাঁদের আলোয় যেন ঝলমল করে ওঠে এই নান্দনিক স্থাপত্য। এর চার কোনো চারটি মিনার ও ২২টি গম্বুজ রয়েছে। এর অভ্যন্তরে দুটি সারিতে আটটি করে ১৬টি কক্ষ। এসব কক্ষ অষ্টভুজাকৃতির সমাধি দুটিকে বেষ্টন করে রেখেছে। পথের মাঝখানে রয়েছে পানির ফোয়ারা। তাজমহলের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে রবি ঠাকুর লিখেছেন, "এক বিন্দু নয়নের জল, কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল, এ তাজমহল।"

শেষকথা

এ তাজমহলকে মোগল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামি স্থাপত্যশিল্পের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম একটি হলো এই তাজমহল। তালিকাভুক্তির সময় একে বলা হয়েছিল 'Universally admired masterpiece of the world's heritage.