এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য | Post 6
21. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
গত চুরাশি দিন ধরে আমি মায়ের খুব কাছাকাছি ছিলাম। খুব কাছাকাছি। আমি, ইয়ার্কি মা। মা, ইয়ার্কি আমি। মায়ের কাঠগোলাপের মত তুচ্ছ নরম দেবকির ভেতর পরম নিশ্চিন্তেই ছিলাম। মা ভালবাসতো আমায়। জানো! খুব ভালবাসতো। মা'কে বুঝতে পারতাম আমি। আমি যে তার উ র্ব শীই ছিলাম! তার উ র্ব শী অপ্রাপ্তবয়স্ক নবজাতক! তার উ র্ব শী ফেলনা পুতুল। তার উ র্ব শী ভোরের সুখ। তার উ র্ব শী সোনার কানফুল। তার উ র্ব শী ব্যাকটুকরো বৃদস্পন্দন। কেউ বোঝেনি। কেউ । এমনকি এই যে আমার লক্ষী মা...বোকা মেয়ে, সে ও বোঝেনি।
শুধু আমি বুঝেছি, মা ভালবাসে আমাকে। খুব ভালবাসে। কেন বুঝবো ! চুরাশি দিন তার উ র্ব শী বৃদস্পন্দনের সঙ্গীনি ছিলাম যে! কাছাকাছি... খুব কাছাকাছি। আমি, ইয়ার্কি মা। মা, ইয়ার্কি আমি। ইয়ার্কি ব্যাকটা স্বপ্ন। আমার। নিঃশ্বব্দের স্বপ্ন। জন্ম নিব। পৃথিবী দেখব। মা'কে দেখব। আমার মা। ভোরের শিশিরে আটকে পরা আলোটুকুর মত যার চোখ... মায়াময়। মা বুঝতে পারেনা নি। বোকা মেয়ে তো! অ্যাবোর্শন করেনা আমাকে সরিয়ে দিয়েছে তার উ র্ব শী কাছ থেকে। আমাকে বুঝতে পারেনা নি সে। বুঝলে নিশ্চই এমনটা করতো ! নিশ্চই করতো ! আমাকে যে সে প্রচন্ড ভালবাসে! জানো! ঠিক তোমাদের পৃথিবীর ওই আকাশটার মতো। আমি যে তার উ র্ব শী নিঃশ্বাসের ভাগীদার! তার উ র্ব শী জন্ম নেয়া বৃদয়। তার উ র্ব শী মেয়ে। ব্যাকটা সুখী ফিটাস। ..............
আচ্ছা, পৃথিবী কি খুব সুন্দর? জানো তোমরা? আমার অনেক শখ পৃথিবী দেখার। মানুষ দেখব। চেনা মানুষ, ইয়ার্কি অচেনা মানুষ। জ্যান্ত মানুষ ইয়ার্কি মৃত মানুষ। সুখী মানুষ ইয়ার্কি দুঃখী মানুষ। ইয়ার্কি, আমিও মানুষ বব। যখন লজ্জ্বাবতী বেমন্তের বিকেল তার উ র্ব শী রাঙা আলোয় সবুজ পাতাগুলোকে সোনালী আদরে সুখী করেনা তুলবে, আমি আমার বাবার বাত ধরে কাল রাস্তায় বাঁটব। যখন সন্ধ্যের নীল আলোর কালচে আঁচলে লাল আভা মিশবে, আমি মায়ের বকুনী খেয়ে বাতমুখ ধোব।পড়তে বসে জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে কবিতা মুখস্ত করবো। যখন ক্লান্তসুখী রাতের আকাশে ব্যাকটা অলস চাঁদ পরে পরে ঘুমুবে, পড়ার টেবিলে পাঠ্যবইয়ের কবিতায় মাথা রেখে আমিও ঘুমিয়ে যাব। মা যখন আমাকে রাতের খাবার খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে যাবে, আমার ঘুম কমে আসবে। বোকা মা বুঝে ঘুমন্ত আমার কপালে যখন চুমু খেয়ে যাবে, আমি বুঝতে দিব তাকে, আমি জানি, মা ভালবাসে আমাকে। খুব ভালবাসে। .............
আমিও মানুষ বব। জীবিত মানুষ। সুখী মানুষ। কিংবা দুখী...তাতে কী! তবু তো মানুষ! অনেক বড় ব্যাকটা জীবন থাকবে আমার। কিংবা ছোট্ট ব্যাকটুকরো জীবন। তবুও তো জীবন! জীবিত জীবন। আমি পৃথিবী দেখব। সময় দেখব। জীবন দেখব। মানুষ দেখব। অমানুষ দেখব। আমি নিঃশ্বাস নিব। আমার ব্যাকটা ক্লান্তিবীনা বৃদপিন্ড আমার শরীরে উষ্ণ রক্ত পাঠাবে প্রতি স্পন্দনে। আমি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিব।
আমি খেলব, ঘুমাব, ক্লান্ত বব। আমি বাসব, অনেক বাসব। চোখে পানি আনা বাসি। আনন্দ খাব। অক্সিজেনের সাথে চিৎকার মিশিয়ে...জীবন্তের চিৎকার... ভরপুর আনন্দ খেয়ে কষ্ট দিয়ে বজম করবো। জীবন দেখব আমি। জ্যান্ত জীবন। ইয়ার্কি দৌড়াব। আকাশের সাথে বারিয়ে যাওয়া কালচে সবুজ ঘাসগুলোকে বালকা পায় নাে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দৌড়াব।
বাতাসের সাথে। ধূসর কাল কালবৈশাখীর উন্মত্ত বাতাস। ঠান্ডা শীতল উষ্ণতায় ভেজা বাতাস। আত্মাকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া বাতাস। চোখের পানিগুলোকে চোখ থেকে ছিন্ন করা বাতাস। দৌড়াব আমার রক্তমাংসের জুক পায় নাে। আমি পৃথিবী দেখব। আকাশ দেখব। সমুদ্র দেখব। সীমাবীনতার উ র্ব শী শ্বাসরুদ্ধতা আমার বুকে বিদ্ধ ববে। আমি কাঁদব। চিৎকার করবো। সময়কে ছিঁড়ে ফেলে চিৎকার করবো আমি। মেঘগুলো গর্জন করেনা উঠবে। কালবৈশাখী মেঘ। ঠান্ডা শীতল উষ্ণভেজা মেঘ। আত্মাকে পুঞ্জিভূত করা মেঘ। আমি কাঁদব। নিঃশ্বব্দে। সীমাবদ্ধতাগুলো জড়িয়ে ধরে। কাল ক্ষুদার্থ মেঘগুলো আমার চোখের পানির স্বচ্ছতা কেড়ে নিবে। তবু...রক্তমাংসের জীবন ববে আমার। তবু……..মা, তোমাকে খুব ভালবাসি"।
লিখেছেন- তাবসিন ফারজানা
22. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
মেয়েরা কি মায়ের মত ভালোবাসা দিতে পারে?
আমায় প্রশ্ন করলে ছোট্ট করে উত্তর দিবঃ না, পারে না।
স্নেহ অধঃগামী, আমার মা আমাকে তাঁর বাবার চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন, আমি আমার মেয়েকে বেশি ভালোবাসি আমার মায়ের চেয়ে, আর আমার মেয়ে, তার সন্তানকে বেশী ভালোবাসবে, যতটুকু ভালোবাসবে তাঁর এই বাবাকে।
এটাই বাস্তব, মন মানুক আর নাই মানুক। এইই হবে।
মায়ের সংগে আমার কখনই আদর-সোহাগ ভরা কথা হয়নি। কখনই না। আমার মা যে চাইতেন না তা নয়, তিনি বেশ ভালো করেই চাইতেন, আমি বুঝতে পারতাম। কিন্তু আমার কখনো বলা হয়ে উঠেনি আমার মাকে “ আমি তোমাকে ভালোবাসি মা, খুব খুব ভালোবাসি”। অথচ আমার মা আমাকে প্রায় প্রতিদিনই তাঁর ভালোবাসার কথা শুনাতেন। এর মধ্যে অন্য কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না । অথবা ছিল না অন্য চাহিদা কোনকিছুর।
বাবার চাহিদা ছিল অনেক, পরীক্ষায় ভালো করতে হবে, আদর্শ ছাত্র হতে হবে, ক্যাডেটে চান্স পেতে হবে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হবে, খেলায় প্রাইজ পেতে হবে, অ—নে—ক। হয়ত সবগুলোই আমার ভালোর জন্যই চাইতেন তিনি। হয়তোবা। কিন্তু, কিন্তু ছোট্ট আমি যে দম হারিয়ে ফেলতাম তাঁর চাহিদা পূরন করতে গিয়ে। আর মা?
না, তাঁর এমন কোন চাহিদা ছিল না। অংকে সর্বোচ্চ নাম্বার পেলেও তিনি স্কুল থেকে ফেরা এই আমার মুখে মমতায় ভরা দু’মুঠো খাবার যেভাবে তুলে দিতেন, ইংরেজীতে ফেল করলেও সেই মমতা মাখা হাতে ভালোবাসার কমতি দেখিনি কোনদিন। বেশীর থেকে বেশী হয়ত বলতেন, আমার ব্যর্থতায় তিনি দূঃখ পেয়েছেন। ব্যস, এটুকুই।
সারাজীবন আপ্রান চেস্টা করে গেছেন, যাতে আমার প্রাপ্য সমস্ত ঝড় তাঁর উপর দিয়েই যায়, সেই ঝড় যেইদিক থেকেই আসুক না কেন, বাবা, স্কুল, পরীক্ষা, খেলাধূলা, চাকুরী, অসূস্থতা, সব, সব এমনকি সওওওওওব।
সিএমএইচে অনেকদিন এডমিট ছিলাম, প্রতিদিন তিনি আমাকে দেখতে আসতেন, রিক্সা করে। ফেরার সময় রিক্সা পেতেন না, হেঁটে যেতে হত অনেকটা পথ, দুপুরের রোদ্রের মধ্যে। এমনকি একদিন রাস্তায় পড়েও গিয়েছিলেন হোঁচট খেয়ে। কিন্তু হাসিমাখা ঐ মুখ কোনদিন বলেনি “তুমি তো সূস্থ হয়ে গেছ, আমি এখন থেকে একদিন পর পর আসবো তোমাকে দেখত।” কোনদিন না।
বাবা কি আসতেন এমন করে আমাকে দেখতে?
ইন্টারের পরের এলোমেলো সময়টাতে একমাত্র আমার মা আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন, আর কেউ না। এই আমি সাক্ষী দিলাম। আর কেউ না জানুক বা না জানুক, আমি জানি। এর পরে, আমাকে দিয়ে যত সফল কাজ হয়েছে, পারিবারিক ভাবে স্বীকৃত, তার সমস্ত কিছু হয়েছে একমাত্র আমার মায়ের জন্য। এই আমি সাক্ষী দিলাম। সেই সময় আমার মা পাশে না দাঁড়ালে, আমি হারিয়ে যেতাম অন্ধকারে, এই আমি আবারো সাক্ষী দিলাম।
জিহান জন্মের পরে আমাকে অনেকবার বলেছিলেন, “তোমার নতুন মা চলে এসেছে বাবা, এবার ছুটি আমার ।” আমি এসব কথার গুরুত্ব কখনই দেইনি। দেয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি, হয়তো হাসতাম তাঁর কথায়। হয়তো ভাবতাম, মায়েরা এমন কথা তো বলেই, এ আর এমন কি।
কি বোকা আমি!?
একটা আফসোস ছিল জীবনে, আমার মাকে সবাই স্বপ্নে দেখে, ভাই-ভাবী-বউ তো বটেই এমনকি দুধওয়ালা, মাছওয়ালা পর্যন্ত। কিন্তু আমি দেখিনা। আজব।
যদি দেখতে পেতাম, কিভাবে দেখতাম তাঁকে? কেমন আছে আমার মা? কোথায় আছে সে?
প্রতিদিন অসংখ্যবার মেয়েকে বলি “আমি তোমাকে ভালোবাসি মা” “মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব” “ I love you, Mamony” “I miss you, mamony”.
আমার মাকে যদি, তাঁরা সারাটা জীবনে, মাত্র একটিবার এই কথাটা বলতে পারতাম!
-লিখেছেনঃ ফয়েজ
23. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
'পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মা গো বল কবে শীতল হবো কতদূর আর কতদুর বল মা..'
এই এডটা যতবার দেখেছি ততবার ভেতরে ভেতরে আমার অশ্রুজলে ভেসেছে হৃদয়- মুখচোরা ছেলে আমি কোনদিন কাঁদি না- আমার কান্না কখনো চোখে আসে নি। মায়ের একমাত্র ছেলে আমি জীবনে কোনদিন একরাত মাকে ছাড়া থাকি নি- আর এখন আমাকে কতদুরে থাকতে হচ্ছে। ভাল রেজাল্টের কাঙ্গাল ছিলাম- এখন সেই আমার মাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এডটা দেখলেই মনে হতো চঞ্চলের মত আমিও বাড়ি চলে যাই। যেখানে আমাদের সুন্দর বাড়িটা- আমার সযত্নে গড়া গোলাপ বাগানটা- যেখানে আমার মা।
কলেজের ক্লাসে বসে ঘড়ি দেখতাম, বারোটা বাজে- আম্মা নিশ্চয়ই দুপুরের রান্না শুরু করেছে। বাড়িতে থাকলে দুপুরের রান্নার সময় আমি মায়ের চুলার পাশে বসে থাকতাম। আম্মা কোন না কোন খাবার বানিয়ে দিতেন- বসে বসে সেটাই খেতাম। আমাকে পাশে না রেখে একা একা রান্না করতে মায়ের কি এখন কষ্ট হচ্ছে না? মা কি কাঁদছে না?
মা অবশ্যই কাঁদে- কিন্তু মা জানে যে আমাকে বাইরের পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা এখন আরো জরুরী। ভালবেসেছেন- আচলে বেধে রাখেন নি। কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন- আমার সামনে ছিলেন হাসিমুখে। তিনি আমার মা- সবাই যখন আমাকে শরীয়তপুর কলেজে ভর্তি করার জন্যে চেষ্টা করছিলেন একমাত্র মায়ের কারনেই আমি পড়তে পেরেছ নটরডেমে- আমাকে দূরে রেখে কষ্ট পেয়েছেন তিনিই বেশি, কষ্ট সহ্য করেছেন- আদরে ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেন নি।
তখন খুব খারাপ লাগতো অসুস্থ হলে- একা একা রুমে পড়ে থাকা- পাশে কেউ নেই, মাথায় পানি দিতে দিতে কেউ বকছে না কেন রোদে ছিলাম সে কথা বলে। বাড়িতে অসুখ মানে উৎসব- মায়ের হাতে বাড়তি আদর ভালোবাসা পাওয়া, মাকে সারাক্ষণ কাছাকাছি পাওয়া। তাই এখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে যত না কষ্ট হতো শরীরে তার চেয়ে অনেক বেশি হতো মনে।
নটরডেমে যাবার পথে মাওয়া যাবার বাসগুলোর কাউন্টার। ওগুলোতে চড়েই আমার বাড়িতে যেতে হয়। কলেজে যাবার পথে বা ফিরে আসার সময় দেখতাম কত মানুষ বাসে করে চলে যাচ্ছে, আমি ভাবতাম তারা সবাই বুঝি মায়ের কাছে যাচ্ছে। আমি তাদের হিংসা করতাম। ভাবতাম যেদিন কলেজ থেকে আমার মুক্তি মিলবে তখন আর ফুফুর বাসায় ফিরবো না, কলেজে থেকে বেরিয়ে বাসে করে সোজা বাড়ি চলে যাবো- মায়ের কাছে যাবো।
আমাদের মত যারা ডালে ডালে মানুষ- যারা স্রোতে ভেসে ভেসে চলি- আজ এখানে, কাল ওখানে- জীবন আমাদের কাছে এক প্রতি পাতায় দুঃখ-উপন্যাস। দুঃখ আমাদের স্বাভাবিক প্রাপ্তি, সকল দুঃখ মেনে নিলেও যখন মনে হয় মা কাছে নেই- সে দুঃখ অমোচনীয়। মাকে কাছে না পাবার ব্যথা ভুলতে পারি না- ভোলা যায় না।মাঝে মাঝে ভাবতে চেষ্টা করি মা না থাকলে আমার জীবন কিভাবে চলবে? ভেবে কোন কিনারা পাই না। ছোট বেলায় মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখতাম- মা মারা গেছে- ঘুম ভেঙ্গে গেলে মাকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম- মা পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। দুঃস্বপ্ন এখনো দেখি- শুধু মাথায় আর মা হাত বুলায় না।
লিখেছেন- #মিজানুর_পলাশ