এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য | Post 5
18. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর হে ভালোবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় তিনিই হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটির পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন মা।
প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না। মা হচ্ছেন জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ন্যায় ও সমতার ধর্ম ইসলাম মায়ের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইসলাম মাকে উচ্চাসনে স্থান দিয়েছে। ইসলামের ঘোষণা হচ্ছে, মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত। মায়ের সেবা শুশ্রƒষার দ্বারা জান্নাতের হকদার হওয়া যায়। বাবার তুলনায় ইসলাম মায়ের অধিকার অধিক ঘোষণা করেছে।
এক সাহাবী রাসুলকে [সা.] জিজ্ঞেস করলেন, আমার সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? আল্লাহর রাসুল [সা.] স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন, তোমার মা। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমার মায়ের পরে আমি কার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করব? আল্লাহর নবি তাগিদ দেয়ার জন্য বললেন, তোমার মায়ের পরেও তোমার মায়ের অধিকার পালন করতে হবে। তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ তোমাকে করতে হবে। এভাবে তিনবার আল্লাহর রাসুল [সা.] মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার কথা বলেছেন। চতুর্থবার বলেছেন, অতঃপর তুমি তোমার বাবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করবে।
এ জন্য আল্লাহর রাসুল [সা.] বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ হতো, তবে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হতো তার মাকে সেজদা করার জন্য। মায়ের পায়ের নিচেই আপনার জান্নাত। আমাদের প্রিয় নবি [সা.] পরিণত বয়সে মায়ের সান্নিধ্য পাননি। এ জন্য তিনি আফসোস করতেন। মায়ের সেবা করতে না পারার কষ্ট তার অন্তরে সর্বদা পীড়া দিত। এ জন্য তিনি দুধমাতা হালিমা সাদিয়াকে [রা.] নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
সন্তানের ওপর মায়ের যে হক তা কখনো আদায় হওয়ার মতো নয়। মায়ের বুকের এক ফোঁটা দুধের মূল্য সন্তানের গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও আদায় হবে না। সন্তানের জন্য মায়ের এক রাতের কষ্টের বিনিময় আদায় করা যাবে না কোনোভাবেই। মায়ের সঙ্গে নম্র আচরণ, যথাসাধ্য সেবা শুশ্রƒষা এবং কায়মনোবাক্যে তার প্রতিদানের জন্য প্রভুর দরবারে দোয়া করলে মায়ের হক যৎকিঞ্চিত আদায় হতে পারে। মা সন্তানের জন্য জান্নাতের পথ করে দেন। যে সন্তান মায়ের সান্নিধ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি মাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তারাই সাফল্যের সন্ধান পেয়েছে। #মাওলানা_মিরাজ_রহমান
লিখেছেন - #মাওলানা_মিরাজ_রহমান
19. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
মাকে দেখতাম গরিব ভালোবাসতে। আমি গরিব সহ্য করতে পারতাম না। বাড়িতে ভিক্ষুক এলে মা কখনও কখনও তাদেরকে ভাত খেতে দিতেন। যে প্লেটে মা তাদেরকে খাবার খেতে দিতেন সেই প্লেটে আমি কখনও খেতাম না। আমার ঘেন্না করতো। আমাদের গ্রামের পাশেই ছিলো এক গরিব হিন্দুগ্রাম। হিন্দুগ্রামের পাশ দিয়ে আমরা স্কুলে যেতাম। ওইগ্রাম থেকে দুর্গন্ধ আসতো। আমি নাক চেপে পাড় হতাম ওটুকু পথ। একটা পদ্ম পুকুর ছিলো গ্রামটাতে।
শীতকালে সেই ডোবাজলের ভেতর সুন্দর ফুল ফুটতে দেখে আমি অবাক হতাম। ঋষিপাড়ার সঞ্জয় শীল আমাকে একবার একটা ফুল তুলে দিয়েছিলো। আমি ঘেন্না-ঘেন্না মনে ফুলটা নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মা রাগ করবেন। কিন্তু আমার মা সেই ফুলের গন্ধ শুকেছিলেন। বলেছিলেন মানুষের মাঝে ভেদাভেদ নেই। ধর্মে বর্ণে পার্থক্য থাক্লেও সবাই একজনেরই সৃষ্টি।
মনে পড়ে, মা রোজ ভোরবেলা সুর ক’রে কোরান পড়তেন। শৈশবের দিনগুলোতে আমার ঘুম ভাঙতো সত্যের সেই মায়াবী সঙ্গীতে। একদিন, জায়নামাজে ব’সে মা বললেন, ‘কাছে আসো বাছা, তোমাকে দোয়া দেই।’ তারপর, আয়াতুল কুরসি প’ড়ে মা ফুঁ ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। মমতা মাখানো হাত বুলিয়ে দিলেন মাথায়। আজ এতোগুলো বছর পেরিয়ে যাবার পর, যখন আমি মায়ের কাছে থাকি না, তখন মায়ের শরীরের গন্ধ পাচ্ছি। পাচ্ছি তার স্নেহের পরশ। আর মনে হচ্ছে, মায়ের সেই ফুঁয়ের ভাষা অলৌকিক ছিলো না। সেই ভাষা ছিলো আল্লার পবিত্র কালাম। চিরভাষ্য সত্য ও সুন্দরের। য্যানো মা বলছেন, গরিবকে ভালোবেসো সোনা। জেনো, হৃদয়ে আঘাত দেবার নামই সাম্প্রদায়িকতা।
লিখেছেন - -সাইয়েদ জামিল
20. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
ইন্টারমেডিয়েট পরিক্ষা শেষে ঢাকায় এসেছি এডমিশন টেষ্ট কোচিং এর উদ্যেশে।লক্ষ একটাই ইউনিভার্সিটিতে চান্স।ঢাকায় আমার দ্বিতীয়বার আসা।এর আগে একদিনের একটা পোগ্রামে রাজধানী শহরে আসা হয়েছিল।উঠেছি বড় মামার বাসায় মোহাম্মদপুরে।ভর্তি হলাম UCCতে মোহাম্মদপুর শাখায়।সাথে এসেছ ’মা' আর ছোট বোন।ক্লাস শুরু হবে সপ্তাহখানিক পরে।শুরু হল অচেনা শহরে ভ্রমণ।বঙগবন্ধু নভোথিয়েটার,ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস,লালবাগ কেল্লা আর চিড়িয়াাখানা। ভ্রমণসাথী ’মা' ,মামী,মামা আর ছোটবোন।
এবার মায়ের বিদায় নেওয়ার পালা।বিদায়বেলায় মায়ের কান্নাজড়িত কন্ঠ।মামা-মামীর আর নানোর হাতধরে বলা ছেলেকে তোমাদের হাতে দিয়ে গেলাম দেখে রেখ। আমাকে উপদেশ দেওয়া মামা-মামীর কথা যেন শুনি।মামা-মামী আর নানোর মাকে আশ্বস্ত করা।মায়ের চোখের জলে আমার চোখেও জল।মামার চোখও টলমল।নোনা জলের তীব্রতা বাড়ে।সেই তীব্রতায় বড্ড অচেনা লাগে মাকে,আমাকে,মামাকে।বড্ড অচেনা।মায়ের শেষ কথা,“বাবা মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করো"।যেই আশা নিয়ে এত দূরে এসেছ তা পূরণ কর।’মা' সিএনজিতে উঠে চলে যায়।আমি তাকিয়ে থাকি।একসময় ঝাপসা হয়ে উঠে চোখ।রাস্তায় হাজারো ভিড়ে হারিয়ে যায় সেই সিএনজি।তবু আমি তাকিয়ে থাকি।অপলক তাকিয়ে থাকি।ক্লাস শুরু হয়।নতুন জায়গা,নতুন পরিবেশ।সবকিছু বড্ড অচেনা। অচেনা নগরীর পথঘাট অচেনা।অচেনা হাওয়ায় অচেনা জীবন।অচেনা জীবনের হাওয়া বদল।এত এত মানুষ।তবুও মানুষের মাঝে একা।সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত।সবাই গন্তব্যের পেছেনে ছুটে। কেউ পিছু তাকাবার নয়।শহরের নিয়ন আলোয় নিজেকে হারিয়ে ফেলি। হারিয়ে যাই কাকডাকা ভোরে।মানিয়ে যাই নিয়ন আলোতে, ভুলে যাই চাঁদের আলো।ভুলে যাই ফসলের মাঠ,ভুলে যাই ফসলের গন্ধ।মাঝে মাঝে ভেসে উঠে মায়ের মুখ।
মায়ের সাথে শেষ কথোপকথন।আবারো ঝাপসা চোখ। পরমুহুর্তেই হারিয়ে হারিয়ে যাই নাগরিক কোলাহলে।মামা-মামীর সাথে মাঝে মাঝে ঘুরাঘুরি।মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া। মামা-মামীর হেল্পে মানিয়েই যেতে থাকি।মানিয়েই যাই।দুইমাস টানা নাগরিক জীবন কাটিয়ে রেজাল্টের আগের দিন বাড়ি যাই।রেজাল্ট শেষে আবার ফেরার দিন ভোরে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে রওয়না দিব ঢাকারউদ্যেশে। মায়ের চোখে পানি।
মায়া ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না।মায়ের চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারি না যদি চোখে জল এসে যায়।তবুও নোনাজল এসেই যায়।নিরবে নোনাজল পরে যায়।মায়ের একই কথা “মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করো।”তোমাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা।অনেক অনেক।আমি শুধু শুনে যাই মায়ের কান্নাজড়িত কন্ঠ।আমি মায়ের আশা হয়ে বেচে থাকতে চাই সারাজীবন। মায়ের আশায় আলো ফুটাতে চাই। মায়েরআলো হয়ে থাকতে চাই। এরপর যতবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়েছি ততবার মা-ছেলের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
লিখেছেন -অর্কিড নীহারিকা