এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য | Post 3

Rumman Ansari   2019-10-05   Student   WhatsappStory > Maa   3688 Share

10. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

প্রথম যেদিন স্বপ্নে দেখলাম মা বলছে, সবাই কি আর চিরদিন বেঁচে থাকে ? কেন এমন করিস ? সেদিন থেকে মাকে হারানোর দুঃখ আমার অন্য রকম ভাবালুতায় মোড় নিয়েছে।

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে নিজকে বড় একা লাগত, অরক্ষিত মনে হতো নিজকে। ভাবতাম পৃথিবীতে আমি বড় একা, নিরাপদ আশ্রয় বলতে আমার আর কিছুই নেই। সে রাতে মাকে স্বপ্ন দেখার পর থেকে মনে হতে লাগল মা আমার কাছ থেকে চির বিদায় নিয়েছে একথা সত্যি, তাই বলে পৃথিবীতে আমি একেবারে একা নই, অরক্ষিত হয়ে যাইনি।

মা আছেন আমার চারপাশে অদৃশ্য শক্তি হয়ে। শুধু সশরীরে মাকে দেখতে পাচ্ছি না আমি। আমার মনে হয় এটাও অতি সাময়িক একটা ঘটনা। মাকে আমি একদিন না একদিন দেখতে পাবই।

রাস্তায়-বাসে বা অন্য কোথাও আমার মা-বাবার বয়সী কোন বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধাকে দেখলে আমার মা-বাবার মুখ দুটি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। মনে হয়, কেন বেঁচে থাকল না আমার মা-বাবা ?

আর যদি এই বয়সের কাউকে অন্যের কাছে হাত পাততে দেখি কিংবা অন্য কোনভাবে কষ্ট পেতে দেখি তহিলে আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। আমি মেনে নিতে পারিনা তাদের এহেন অবস্থাকে। তাদের সন্তান আছে কি না, থাকলে কোথায় কি অবস্থায় আছে ? --এসব প্রশ্নের উত্তরের তোয়াক্কা না করেই আমার মনটা বিষিয়ে উঠে সেই সন্তানদের প্রতি। প্রচন্ড রকম বিদ্রোহী হয়ে উঠে তখন আমার মনটা। অথচ আমরা সাত জন ভাই-বোনের সবাই কিন্তু সমানভাবে আমার মা-বাবার দেখভাল করিনি।

আমার যে ভাইটা পরিপূর্ণ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও মায়ের দীর্ঘ অসুস্থকালীন সময়ে মায়ের খোঁজ-খবর নিত না, দেখতাম মা ওকে দেখার জন্যই সব সময় উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। এই হচ্ছে মায়ের মন ! সন্তানকে কখনও এপিঠ-ওপিঠ করে দেখতে পারে না। আর সেই সন্তানরা কত সহজেই না মা-বাবার অমর্যাদা করে ! জানিনা ঐসব সন্তানদের হৃদয়ের তন্ত্রীগুলো কি দিয়ে গড়া ! বিধাতা কি স্বহস্তে ওদের মনে কঠিন কোন প্রলেপ এঁটে দিয়েছেন ? লিখেছেন- sufia akhter

লিখেছেন- sufia Akhter

11. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

"আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে বৃদ্ধাশ্রম।" কঠিন এক সত্য। আর এ সত্যকে মেনেই অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা আশ্রয় নেন বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানের কাছে যাদের বেশি কিছু চাওয়ার নেই; শেষ বয়সে আদরের সন্তানের পাশে থেকে সুখ-দুঃখ ভাগ করবার ইচ্ছা এতোটুকুই যা চাওয়ার। আর এ নিয়েই প্রতিটি পিতা-মাতা প্রহর গুণতে থাকেন দিবা-রজনী। কিন্তু অনেকেরই সেই সন্তানের কাছে আশ্রয় না হয়ে; আশ্রয় হয় আপনজনহীন বৃদ্ধাশ্রমে।

শেষ বয়সে মস্ত ফ্ল্যাটের ঘরের কোণেও জনমদুখী মা-বাবার এতোটুকুও জায়গা মিলে না। ওদের ছুঁড়ে দেয়া হয় প্রবীণ নিবাসনামীয় নরকে। তবুও প্রতিবাদ দানা বাঁধে না; মন অভিশাপ দেয় না। নাড়ী ছেঁড়া ধন ওরা। তাই চুপ থাকেন...একেবারে চুপ। তবে এ নিষ্ঠুরতা তাদের কেবলই কাঁদায়... এ কেমন নিয়তি? ভাবি আমরা কতোটাই না আধুনিক স্বার্থপর!

লিখেছেন- #মীর_আব্দুল_আলীম

12. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

স্কুলের ক্লাস শুরু হবার আধ ঘন্টা আগে এই তেতুল গাছ তলায় একটা ক্লাস হতো। এক স্যার বাঁশীতে ফু দিতেন। আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই খেলা ফেলে তেতুল গাছ তলায় এসে গোল হয়ে বৃত্তাকারে দাঁড়াতাম। একজন দাঁড়াত গোল বৃত্তের ঠিক মাঝখানে। সে নামতা বলত। আমরা সবাই সমস্বরে তার সাথে সাথে বলতাম, এক একে এক, দুই একে দুই, দুই দুগুণে চার ----।

মাঝে মাঝে কবিতাও পড়তাম আমরা। আমার আজও মনে পড়ে, মাঝে মাঝে গোল বৃত্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি এই ক্লাসের নেতৃত্ব দিতাম। আধ ঘন্টা চলত এই ক্লাস। তারপর ঘন্টা পড়লেই সবাই দৌড়ে যে যার মতো ক্লাসে গিয়ে বসতাম। স্কুল ছুটি হতো দুপুরে। ছুটির ঘন্টা পড়লেই সবাই কলরব করতে করতে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসতাম। তারপর বই-খাতা বুকে চেপে ধরে বাড়ির দিকে হাঁটতাম। আমার বাড়ির দিকে যাবার পথে আমিই ছিলাম সর্বশেষ জন। সবার বাড়ি আমার বাড়ি যাবার পথে আগে পড়ত।

আমি যখন বাড়ি পৌঁছুতাম তখন সূর্য পশ্চিম দিকে হেলতে শুরু করেছে। সারাটা পথ আমাকে সূর্যের দিকে মুখ করে হাঁটতে হতো। বাড়ি ফিরলেই আম্মা তাই প্রথমে শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মুখটা মুছে দিতেন আর বলতেন, রোদে মুখটা পুইরা ছাই অই গেছে।

হায় রে সময় ! আর একটিবার যদি আম্মা এসে তার শাড়ির আঁচলে আমার মুখটা মুছে দিতেন!

লিখেছেন #mihir_sumon

13. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা নামছে, খুব আলতো করে, পাখির পালকের মত নরম কোমল বিষণ্ণ মায়াময় সন্ধ্যা। আস্তে আস্তে জ্বলে উঠছে হাজারো নিয়ন বাতি, কাজাং এর এই আলো ঝলমল শপিং কমপ্লেক্সের ডানে প্রশস্ত সবুজ আঙ্গিনায় কফি শপ, খোলা আকাশের নীচে , এই সপ্তাহান্তে সব কাজ কর্ম ছুটি করে দিয়ে একা বসে আছি আমি। চারপাশে যাপিত জীবনের কোলাহল । তরুন তরুণীর সংখ্যাই বেশী। ক্ষণিকের ভুলে বিভ্রমে যারা আঁকড়ে আছে হাত, চোখে চোখ , ঝলমলে হাসিতে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে এই শেষ বিকেলের গহীন নিস্তব্ধতা । ভীত সন্ত্রস্ত করে দিচ্ছে সবুজ চত্বরে চড়ে বেড়ানো বুনো কবুতরের দল।

আমার সামনে এক কাপ চা। উষ্ণ ঠিকই। গাঢ় নয়, টি- ব্যাগের চা, আহামরি কিছু নয়। এখানে এই নামকরা WHITE COFFE তে বেলা শেষে যারা আসে তারা চা খায়না , কফি খায়, কিন্তু আমি চা ই খাচ্ছি। তোমার প্রিয় চা। এখানকার টলটলে স্বাদহীন, গন্ধহীন চায়ে আমি কি খুঁজছিলাম ? তোমাকে ? তাইনা মা? চায়ের উষ্ণ স্পর্শে আমি তোমার স্পর্শ খুজছিলাম ? চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে আমি তোমার মুখ, তোমার গহন মায়ার মুখ ছুঁয়ে দেখতে চাচ্ছিলাম ?

আজকাল কি একটু স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি আমি ? নিজেকে নিয়ে মগ্ন ? কিন্তু এই বিকেলে কত কি ভেসে আসছে মনের পাতায় , চোখ ভিজে যাচ্ছে অবাধ্য জলে, আমার বুকের কষ্ট কান্না হয়ে অদৃশ্য বৃষ্টির জলে মিলে মিশে যাচ্ছে । আমি তোমাকে খুব মিস করছি, খুব। আমি তোমাকে ভেবে অনেক কষ্ট পাচ্ছি।

মা, তোমাকে খুশী করতে আমার বা আমাদের তিন ভাই বোনের সারা জীবন তেমন কিছুই করতে হয়নি। শুধু বলতে পড় , আমরা শুনে গেছি তোমার কথা, এসএসসি বা এইচএসসি তে যখন মেধা তালিকায় নাম চলে এলো তখন তোমার চোখে যে আনন্দাশ্রু দেখেছি তাতে বুঝেছি মা হলে এমনি হতে হয়, নিজের চাওয়া পাওয়াকে বিলীন করে শুধু সন্তানের অর্জনে নিজের অর্জন হয়, গর্বিত হতে হয়।

এই যে এখন আমরা – যার যার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, সে কি তোমার অবদান নয় ? ভাইয়া কখনো কোথাও প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি, ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করে ডাক্তার, এফসিপিএস, মনবুশো স্কলারশিপ পাওয়া। বোনটি বুয়েট থেকে পাশ করে টেক্সাস এর এএনএম থেকে মাস্টার্স অথবা আমি এই ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে এই নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি। এইসব সাফল্য - তার পেছনে তোমার কি দারুন ত্যাগ, কত অগাধ স্বপ্ন, কত বিনিদ্র রাত্রি যাপন।

মননে আর মেধায় বাবার যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে, তিনটি ভাই বোনকে নিজে পড়িয়ে, নিজ হাতে রান্না করে, আত্মীয় স্বজন সবাইকে তোমার সেবায় মুগ্ধ করে আবার একই সাথে শিক্ষকতার মত মহান জব করে, কি এক মহান উদাহারন স্থাপন করেছ আমাদের সামনে তুমি ! কেমন করে পারো তুমি মা ? এক মানুষ কেমন করে সবখানে নিখুঁত ভাবে নিজেকে ছড়িয়ে দেয় !! আমি আমার মুগ্ধতা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাইনা।

জানি আমরা নিয়েই যাব চিরকাল আর তুমি আমাদের ছায়া হয়ে অকৃপণ, নিরন্তর সাহস হবে, স্বপ্ন বুনে দিবে, বিষণ্ণতার বাদল দিনে মাতাল করা হাস্নাহেনার গন্ধ বিলাবে। নিজেকে বিলীন করে দিয়ে এই যে সবার সুখে নিজের সুখ, এতেই কি সব প্রাপ্তি তোমার মা ?

আজ আমি দূরে আছি, শত সহস্র যোজন দূরে, ভুলে আছি তোমায়, তিনটি ভাই বোন পৃথিবীর তিন প্রান্তে আছি । একা রেখেছি তোমায় , কিন্তু এই অসম্ভব নিস্তব্ধ বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় এক কাপ চায়ের পেয়ালা হাতে আমি এক মনে আছি তোমার সাথে, সামনে ল্যাপটপ , থিসিস এর কাজে মন নেই , মন চলে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মনের মানুষটির কাছে । তোমার কাছে, আমার ভালবাসার কাছে। এই এক জনম কেটে যাচ্ছে ভুলে বেভুলে মিথ্যে মায়ার পেছনে, সামান্য ডিগ্রির জন্য ভুলে আছি অসামান্য তোমাকে, এর ক্ষমা নেই, নিজের কাছে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার আজ কিছু নেই।

জানি পৃথিবীর সব আলো নিভে যেতে পারে, সব আশ্রয় আমার শূন্য হয়ে যেতে পারে, তোমার মমতার আশ্রয় কখনো শেষ হবার নয়, তুমি যে মা সর্বশক্তি বাজি রেখেছ আমাদের স্বপ্ন পূরণে , আমাদের জয়ী করে দিতে ।

আমার সমস্ত ভালোর জন্য তোমার প্রার্থনা চলে অবিরাম আমি জানি, আজ আমি প্রার্থনায় আছি, খুব ভাল থাকো তুমি । মহান স্রষ্টার কাছে তোমার সুস্থতা চাই। তোমার সুখ আর বুক ভরা আনন্দ চাই। তোমার মনের শুদ্ধ আলোয় পবিত্র করো ধরণী যুগের যুগের পর যুগ । শত সহস্র বছরের পরমায়ু হোক তোমার ।

-মাকে নিয়ে লিখেছেন #sakiba_sharmin