আন্তঃব্যক্তিক ও যোগাযোগ দক্ষতা

Rumman Ansari   Software Engineer   2024-05-20 07:19:26   14 Share
Subject Syllabus DetailsSubject Details
☰ Table of Contents

Table of Content:


আন্তঃব্যক্তিক ও যোগাযোগ দক্ষতার ধারণা

মৌখিক ও শারীরিক ভাষা এবং লিখিতভাবে নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করার সামর্থ্য, অন্যের কথা সক্রিয়ভাবে এবং মনোযোগ দিয়ে শোনার দক্ষতা, অন্যকে দোষারোপ না করে কথা বলার দক্ষতা, অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করার দক্ষতার সমষ্টিকে যোগাযোগ দক্ষতা বলে। Good communication helps to improve relationships with family, friends, teachers and other adults.(http://extension.udel.edu/factsheets/communication-skills-for-you-and- your-family/)। আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা বলতে বোঝায় দুজন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করার দক্ষতা। এটাকে এক ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির সম্পর্ককে বোঝায়। যে ব্যক্তির আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা রয়েছে সে ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন জনের সম্পর্ক অতি উন্নত এবং সহজেই তিনি অন্যব্যক্তির সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে ও সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেন। দৃঢ় প্রত্যয়মূলক দক্ষতা, 'না' বলার দক্ষতা, আলাপ আলোচনার দক্ষতা, অন্যকে স্বমতে আনার দক্ষতাসমূহ আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। একটি বিদ্যালয়ে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বলতে বোঝায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক সম্পর্ক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্ক, বিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা ও শিক্ষক কর্মচারী সম্পর্ক, শিক্ষক ও অভিভাবক সম্পর্ক, শিক্ষক-শিক্ষক সম্পর্ক। প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করার ফলেই বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জিত হয় যা আন্তঃব্যক্তিক ও যোগাযোগ দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, ফলপ্রসূ ব্যবস্থাপনার পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু যোগাযোগ দক্ষতা।

আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার বৈশিষ্ট্য হলো-

  • অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখার সামর্থ্য;
  • সম্পর্ক ছেদ করতে হলে গঠনমূলকভাবে তা করার সক্ষমতা;
  • নিজের যুক্তিসংগত মত প্রতিষ্ঠায় অটল থাকা, অন্যায়, অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ প্রত্যাখান করা;
  • অন্যের কাজ ও অবদানকে সম্মান প্রদর্শন করা;
  • অন্যকে ভালো কাজ করতে প্রভাবিত করার সামর্থ্য।

যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির উপায়

যোগাযোগ দক্ষতা জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল উদ্দেশ্য হল নিজের মনের কথা বা উক্তি অপরকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির কিছু উপায় নিম্নরূপ:

১। শব্দের সমন্বয় ও শারীরিক ভাষা

নিজের ধারণা ও অনুভূতি ভাগ করে নিয়ে কথা বলার মতই মুখের অভিব্যক্তি ও শারীরিক ভঙ্গিমা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলার সাথে অঙ্গভঙ্গির প্রকৃত সমন্বয় মনের ভাবকে অন্যের কাছে স্পষ্টতর করে তোলে। শ্রোতাদের সাথে সংযুক্ত থাকার অন্যতম উপায় হল চোখে চোখ রেখে কথা বলা। চোখে চোখ রাখলে শ্রোতাদের সাথে সংযোগ তৈরি হয় এবং তারাও বক্তার বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়। বক্তব্যের সাথে অনুভূতির সঙ্গতি থাকা জরুরি। নেতিবাচক কথা বলার সময় মুখে হাসি না থাকার যৌক্তিকতা নেই।

২। মনোযোগী শ্রবণ

কার্যকর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হল শ্রবণ। বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তুলতে অন্যদের কথাও শুনতে হবে এবং তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে পরে নিজের গোছানো বক্তব্য প্রদান করতে হবে।

৩। শব্দের সঠিক ব্যবহার

কথা বলার সময় সঠিক শব্দ ব্যবহার করা জরুরি। কোন শব্দ ব্যবহারে নিশ্চিত হতে না পারলে তা বর্জন করাই শ্রেয়। সঠিক উচ্চারণ এবং কথা বলার গতি ও শব্দের তীব্রতাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত যাতে অন্যদের আগ্রহ ধরে রাখা যায়। জড়তা কাটিয়ে কোন বিষয়ের ওপর স্পষ্ট বক্তব্য শ্রোতারা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে। শ্রোতাদের কাছ থেকে সাড়া নিয়ে তাদের মতামত জানলে আত্মবিশ্বাস জন্মায়।

৪। নিয়মিত অনুশীলন

যোগাযোগ দক্ষতাকে উন্নত করার জন্য অনুশীলন আবশ্যক। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে দেখে শেখাটাও অনেক সাহায্য করে থাকে। বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ভালভাবে কথা বলা যায়। উন্নততর যোগাযোগকারী হওয়া তেমন কঠিন নয়। সঠিক জ্ঞান ও যুক্তিযুক্ত ক্রিয়ার মাধ্যমেই যোগাযোগ দক্ষতাকে শাণিত করে তোলা সম্ভব।

শোনার দক্ষতার অনুশীলন ও আবিষ্কার

ভাষার দক্ষতা অর্জনের চারটি ক্ষেত্র শোনা, বলা, পড়া ও লেখার মধ্যে শোনার দক্ষতা অর্জন প্রথম এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। তবে সাধারণত বলার দক্ষতা অর্জনে মানুষ যতটা সাবধান, শোনার ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন থাকে। শ্রবণদক্ষতা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। প্রকৃতপক্ষে মনোযোগ সহকারে শ্রবণই শোনার দক্ষতা অর্জনের প্রাথমিক কাজ। কেননা ভাষা শিখনের

প্রথম দক্ষতা শুনতে শুনতেই শিশুরা বলতে শুরু করে। শোনা, দেখা এবং পড়া আমাদের মস্তিষ্কে তথ্যের জোগান দেয়। অর্থাৎ মস্তিষ্ককে করে সমৃদ্ধ। ভাষার দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে শ্রবণদক্ষতা অর্জন। সাথে সাথে অন্যান্য দক্ষতাগুলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শ্রবণদক্ষতাসহ সকল দক্ষতা চর্চা বা অনুশীলনের ব্যাপার। সঠিক জ্ঞান ও যুক্তিযুক্ত ক্রিয়ার মাধ্যমেই যোগাযোগ দক্ষতাকে শাণিত করে তোলা সম্ভব। Listening is the ability to accurately receive and interpret messages in the communication process. Listening is key to all effective communication. Without the ability to listen effectively, messages are easily misunderstood. As a result, communication breaks down and the sender of the message (http://abma.uk.com/listening-skills/)

শোনার দক্ষতার অনুশীলন করার উপায়

সার্থক শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আন্তঃব্যক্তিক ও যোগাযোগ দক্ষতার প্রতিটি উপাদানের সার্থক প্রয়োগ অপরিহার্য। প্রতিটি উপাদানই আবার জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি সর্বোপরি যোগ্যতার সাথে সম্পর্কিত। শ্রবণ দক্ষতা অর্জন এমন একটি যোগ্যতা যা বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করতে হয়। শিক্ষক স্পষ্ট, শুদ্ধ উচ্চারণে, সহজ ভাষায় এবং অর্থপূর্ণ ভঙ্গিতে যা বলবেন শিক্ষার্থীরা সেগুলো মনোযোগ দিয়ে, শিক্ষকের চোখে চোখ রেখে অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন। সার্বিকভাবে যোগাযোগ দক্ষতার সফলতার ওপর শিখন-শেখানোর সার্থকতা নির্ভর করে। এ জন্যই বলা হয় Inspire creativity, critical thinking, collaboration and communication so that students are ready for tomorrow's world. (https://files.eric.ed.gov/fulltext/ED567059.pdf)। শ্রবণদক্ষতা মূলত ভাষা দক্ষতা, কথার স্পষ্টতা, মনোযোগ ও একাগ্রতা, শ্রবণ আগ্রহ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। শ্রবণদক্ষতা অনুশীলনের পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ-

Step 1: Face the speaker and maintain eye contact;

Step 2: Be attentive, but relaxed;

Step 3: Keep an open mind; Step 4: Listen to the words and try to picture what the speaker is saying;

Step 5: Don't interrupt and don't impose your "solutions;"

Step 6: Wait for the speaker to pause to ask clarifying questions;

Step 7: Ask questions only to ensure understanding;

Step 8: Try to feel what the speaker is feeling;

Step 9: Give the speaker regular feedback;

(https://www.forbes.com/forbes/welcome/?toURL=https://www.forbes.com/sites/womensmedia/2012/11/09/10-steps- to-effective-listening/&refURL=https://www.google.com/&referrer=https://www.google.com/)

শোনা বলা, পড়া, ও লেখার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি লেখচিত্র, সারণি, প্রতীক, নকশা, ছবি, ডায়াগ্রাম অংকন ইত্যাদির মাধমে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের যোগাযোগ দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে শিক্ষা গ্রহণ, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ, কথা বলা ও শোনার পারদর্শিতা অর্জন করে থাকে।

কন্ঠস্বর, উচ্চ ও নিম্নস্বর, বিরতি ব্যবহার ও অনুশীলন

কার্যকর শিখন-শেখানো কার্যক্রমের জন্য শ্রেণিকক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন শ্রেণির আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বাস্তবমুখী, প্রয়োগমুখী, ও সহজবোধ্য করে তোলার জন্য শ্রেণিকক্ষের অনুকূল পরিবেশ অত্যাবশ্যক যা পাঠে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বহুলাংশে বৃদ্ধি করে। শ্রেণিকক্ষের ভৌত উপাদানের পাশাপাশি মানবিক উপাদানগুলো কার্যকর শিখনের জন্য বেশি প্রয়োজন। শিক্ষকের কন্ঠস্বর, উচ্চ ও নিম্নস্বর, বিরতি ব্যবহার শ্রেণিকক্ষের পরিবেশকে আনন্দদায়ক, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। শ্রেণিকক্ষে কণ্ঠস্বর ব্যবহার ও অনুশীলনের জন্য সাধারণ নীতিমালা রয়েছে। যেমন-

  • শিক্ষকের কন্ঠস্বর শ্রেণি উপযোগী হতে হবে;
  • সুস্পষ্ট উচ্চ স্বরে ও শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে হবে যাতে শ্রেণির সবাই শুনতে পায়;
  • কন্ঠস্বরের উঠানামা এমন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা যায়;
  • স্বরহীন অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য অঙ্গভঙ্গি ও মুখভঙ্গি ব্যবহার করে বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করতে উদ্যোগী হবেন;
  • বিষয়বস্তু উপস্থাপনের সময় শব্দ উচ্চারণের গতি, নাটকীয়তা, পাঠের তাল, লয়, কন্ঠস্বর উঁচু-নিচু করার কৌশল ব্যবহার করা আবশ্যক;
  • পাঠদানকালে শিক্ষকের কন্ঠস্বর শ্রুতিমধুর ও আকর্ষণীয় করা বাঞ্ছনীয়;
  • পাঠ উপস্থাপনের সময় যথাযথ স্থানে বিরতি চিহ্নের ব্যবহার করতে হবে।