বিশ্বাস
Table of Content:
বিশ্বাস
বিশ্বাস মানুষের মনের একটি বিমূর্ত ধারণা। শিশুর জন্মের পরেই তার মনে এ ধারণা জন্মাতে শুরু করে। মা-বাবা বা অন্যান্য যারা শিশুর সেবাযত্ন করেন, তারা যদি স্নেহ-মমতার সাথে, সঠিকভাবে তার চাহিদা পূরণ করতে পারেন, তবে শিশুর মধ্যে বিশ্বাসের প্রথম অনুভূতি জন্মাতে থাকে। একে মনোবিজ্ঞানী এরিকসন বলেছেন মৌলিক বিশ্বাস। কোন ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা, রীতি-নীতি প্রথার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের কারণে বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আমরা কোন কিছুতে বিশ্বাস করি,
কারণ-
- সেটি দেখেছি, পর্যবেক্ষণ করেছি, সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
- এমন কারোর কাছে বিষয়টি শুনেছি যাকে অবিশ্বাস করা যায় না।
- এমন একটি ঘটনা যা কোনভাবেই অবিশ্বাস করা সম্ভব না।
বিশ্বাস মানুষের মনের এমন একটি বিমূর্ত ধারণা যা তাকে কোন কিছুর প্রতি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। যেমন ধরা যাক, আপনার একান্ত পরিচিত লোক আপনার কাছে দুই হাজার টাকা ধার চাইলেন। তিনি এক মাস পরে টাকাটি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। এক মাস পরে ঐ ব্যক্তি আপনাকে টাকাটি ফেরত দেবেন কি-না এ ব্যাপারে আপনার সরাসরি জানা নেই। যে লোকটি আপনার কাছে ধার চেয়েছেন হয় তাকে ধার দেবেন না হয় ধার দিতে অসম্মতি জানাবেন। ধার দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে আপনি কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন?
যেহেতু টাকা সত্যিই সে ফেরত দেবে কি-না এ ব্যাপারে আপনার প্রত্যক্ষ জ্ঞান নেই সেহেতু পরোক্ষ জ্ঞানের ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি তাকে যতটুকু জানেন তারই আলোকে যদি আপনার মনে হয় যে, লোকটি প্রতিশ্রুতি পালন করবে তবেই আপনি তাকে টাকা ধার দেবেন। এক্ষেত্রে ধার দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ভিত্তি হলো বিশ্বাস।
তার অতীত আচরণ থেকে যদি আপনার এ বিশ্বাস হয় যে, টাকাটা সে ফেরত দেবে না তাহলে আপনি তাকে ধার দেবেন না। আপনি যে তাকে অবিশ্বাস করলেন এটিও পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমেই। সুতরাং এটিও বিশ্বাস। এক্ষেত্রে আপনার বিশ্বাস হল- সে টাকা ফেরত দেবে না।
সুতরাং বলা যায়, প্রত্যক্ষ জ্ঞান নেই এমন কোন বিষয়ে কোন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে, যে পরোক্ষ জ্ঞান বা ধারণার মাধ্যমে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা-ই বিশ্বাস।
বিশ্বাসের অবস্থা
উল্লিখিত উদাহরণের ভিত্তিতে বিশ্বাসের তিনটি অবস্থা হল
১. ইতিবাচক বিশ্বাস
এক্ষেত্রে বিশ্বাস হচ্ছে, লোকটিকে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দেবে।
২. নেতিবাচক বিশ্বাস
লোকটি ধার নিলে টাকা ফেরত দেবে না। এটিকে নেতিবাচক বিশ্বাস হিসেবে গণ্য করা যায়।
৩. সন্দেহজনক বিশ্বাস
লোকটিকে টাকা ধার দিলে সে টাকা ফেরত দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে।
বিভিন্ন কারণে বিশ্বাস অর্জিত হয়। নিচের মাইন্ড ম্যাপে তা তুলে ধরা হল:
বিশ্বাসের কারণসমূহ নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল-
প্রত্যক্ষণ
সাধারণভাবে প্রত্যক্ষণ হল, পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কোন কিছু দেখা, শোনা, স্পর্শ করা, ঘ্রাণ নেওয়া এবং স্বাদ গ্রহণ করা। সুতরাং আমরা নিজেরা যখন কোন কিছু প্রত্যক্ষণ করি তা আমরা বিশ্বাস করি।
স্মৃতি
কোন ব্যক্তির স্মৃতিতে সংরক্ষিত অতীত ঘটনাবলি তার বিশ্বাস স্থাপনে সহায়তা করে।
কল্পনা
মানুষ যখন কিছু কিছু কল্পিত বিষয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পায় তখন তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
অনুমান
কোন ঘটনা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষ যা অনুমান করে যখন বাস্তবে সেটি ঘটে যায় তখন তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হয়।
জ্ঞান
জ্ঞান বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে ঐ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটাতে সক্ষম বলে অন্যরা
বিশ্বাস করবে। আবার যার শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান আছে তিনি আণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বিশ্বাস করবেন।
শিখন
ব্যক্তি যে বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে সে শিখনের ভিত্তিতে পরবর্তিতে সংশ্লিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে বলে মানুষ বিশ্বাস করে।
আবেগ
ক্রোধ, ভয়, শ্রদ্ধা মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায়। কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির প্রতি ক্রুদ্ধ থাকলে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগই সত্য বলে বিশ্বাস করবেন। ভীরু মানুষ অবাস্তব বিষয়ে সহজেই বিশ্বাস করে। অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান বলে বিশ্বাস করে।
আগ্রহ
কোন ব্যক্তির যে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি ঐ বিষয়ে সে বেশি সময় ও শ্রম দেয়। যেমন- যার বিদেশে চাকরি করার আগ্রহ আছে সে-ই আদম বেপারিকে বিশ্বাস করবে।
সামাজিক রীতি-নীতি, আদর্শ, সংস্কৃতি, প্রথা
বিভিন্ন সামাজিক পরিবেশে বংশ পরম্পরায় আমরা সামাজিক রীতি-নীতি, আদর্শ, সংস্কৃতি, প্রথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকি, যার পেছনে অনেক ক্ষেত্রেই কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে না।
ধর্মীয় রীতি-নীতি
ধর্মীয় রীতি-নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি বলেই তা পালন করে থাকি অর্থাৎ নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি।
বিশ্বাসের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক
আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞান অজর্ন করে থাকি। তবে প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জনের জন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রেই আমাদের বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। যেমন-
- শৈশবে কে বাবা তা মায়ের কাছে শুনে বিশ্বাস করতে হয়েছে।
- বাংলা ভাষা শেখার জন্য অ, আ,ক, খ এবং ইংরেজি ভাষার জন্য A, B, C, D তে বিশ্বাস করতে হয়েছে।
- শেখার জন্য শিক্ষণের কথা, বই পুস্তকের কথা বিভিন্ন তত্ত্ব ও তথ্যে বিশ্বাসী হতে হয়।
সুতরাং বলা যায়, শিক্ষার সাথে বিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে।